সংস্কারের জন্য আর কত সময় লাগবে, প্রশ্ন রিজভীর

শনিবার (১৯ এপ্রিল) দুপুরে জিয়া পরিষদের আয়োজনে নাটোর জেলা পরিষদ অডিটেরিয়ামে ‘স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব, বহুদলীয় গণতন্ত্র এবং জিয়াউর রহমান’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।

আব্দুস সালাম, নাটোর
বক্তব্য রাখছেন অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী
বক্তব্য রাখছেন অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী |নয়া দিগন্ত

সংস্কারকে রাজনৈতিক অঙ্গীকার হিসেবে উল্লেখ করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, সংস্কারের জন্য নির্বাচন দেরি হলে মানুষ হতাশায় ভুগবে। এ সময় তিনি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি প্রশ্ন রাখেন যে সংস্কার করতে আর কতদিন সময় লাগবে?

শনিবার (১৯ এপ্রিল) দুপুরে জিয়া পরিষদের আয়োজনে নাটোর জেলা পরিষদ অডিটেরিয়ামে ‘স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব, বহুদলীয় গণতন্ত্র এবং জিয়াউর রহমান’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।

রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘কেউ কেউ বলছেন সংস্কার সম্পাদন না করে নির্বাচন করলে যেই দল ক্ষমতায় আসবে তারা সংস্কার করতে পারবে কিনা সন্দেহ। অথচ সংস্কার হলো রাজনৈতিক অঙ্গীকার। যে দল নির্বাচিত হবে তাদের তো পার্লামেন্টে পাস করতে হবে। এ ধরনের ধোঁয়াশা বিভ্রান্তি তৈরি করে কার লাভ হচ্ছে? গণতান্ত্রিক সংগ্রামে আমরা একসাথে লড়াই করেছি। যে সমস্ত দল ও সর্বশেষ ছাত্র-জনতা আমাদের ভেতরই যদি মিস আন্ডারস্ট্যান্ডিং বাড়ে, ভুল বোঝাবুঝি বাড়ে তাহলে তো ফ্যাসিবাদ মাথা তোলার চেষ্টা করবেই।’

তিনি আরো বলেন, ‘নির্বাচন ছাড়া দেশ আর কতদিন চলবে। আট মাস তো হয়ে গেছে, আপনারা বলেছেন ডিসেম্বরে নির্বাচন। তাহলে সংস্কার করতে আর কত সময় লাগবে আপনাদের। দেশের মানুষ ভোট দিয়ে সরকার গঠন করবে। দেশের মানুষ হাসিনার পতন দেখতে চেয়েছে, একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার অবাধ সুষ্ঠু একটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত করবে তা দেখতে চেয়েছে। দেরি হলে দেশের মানুষ হতাশায় ভুগবে। শেখ হাসিনা নির্বাচনকে জাদুঘরে পাঠিয়েছিল। নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছিল। সেই জাদুঘর থেকে অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনকে ফিরিয়ে আনতে হবে। সেই বিশ্বাস দেশের মানুষ ডক্টর ইউনুস সাহেবের ওপর রেখেছে।’

রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘আমাদের নিজস্ব আত্মপরিচয়ে স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব তা শিখিয়ে গেছেন শহীদ জিয়াউর রহমান। খালেদা জিয়া এবং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান যেভাবে দলকে নেতৃত্ব দিয়ে সুসংগঠিত করেছে, বিএনপি জনসম্পৃক্ত দল, জনগণের পক্ষের দল। এ দল নিয়ে কোনো ষড়যন্ত্র চলবে না। যারাই ষড়যন্ত্র করে তারাই শেষ হয়ে গেছে।’

বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব আরো বলেন, ‘ঐতিহাসিক ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মধ্য দিয়ে এক ভয়ঙ্কর দানবরূপী ফ্যাসিটের পতন হলে পালিয়ে যায় পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্রে। সে দেশে মিডিয়া বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অহরহ অপপ্রচার করতে থাকে। দেশ নাকি জঙ্গিবাদের কারখানা। বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে যারা বিশ্বাস করে না। তারা ভাবে এ দেশ তাঁবেদার রাষ্ট্র থাকবে। দেশ ভারতের পক্ষে থাকবে, তাদেরকে আনুগত্য করবে। বাংলাদেশকে তাদের কব্জায় নিতে চেয়েছিল। সে কারণে একটি দুনিয়া কাঁপানো ফ্যাসিবাদে পতন হায়েছে। তাদের দেশে ফ্যাসিবাদ পালিয়ে গেল। এখন তারা বাংলাদেশকে নিয়ে ষড়যন্ত্র করছে। তারা মিথ্যা অপপ্রচার চালাচ্ছে দেশ নাকি ধ্বংস হয়ে গেছে, দেশ নাকি আর নেই।’

রিজভী বলেন, “বাংলাদেশে তারা ক্ষমতা ছড়িয়ে রাখতে একটি রক্তময় দেশ বানিয়েছিল। ভারত তাকে টিকিয়ে রাখতে প্রশ্রয় দিয়েছিল। তারা চেয়েছিল বাংলাদেশকে হাতে রাখতে। তাদের হুকুমে বাংলাদেশ চলবে এমন নীতিতে তারা ছিল। এখন তাদের মায়াকান্না, কারণ হাসিনা বলেছিলেন ‘আমি ভারতে যা দিয়েছে তা সারা জীবন মনে রাখবে।’ সে কথা দেশের মানুষ আজ বুঝেছে। ভারত সে জন্য আজ পালিয়ে যাওয়া হাসিনাকে সব ধরনের সহযোগিতা করছে। দেশের টাকা পাচার করালো, দেশের মানুষকে খুন করলো, তার জন্য এত মায়াকান্না কেন? ফ্যাসিবাদ শেখ হাসিনা ভারতে যত দিয়েছে, তার কারণে ভারত আজ তার পাশে।”

তিনি আরো বলেন, ‘সুশীল সমাজ হচ্ছে জিয়া পরিষদ। সমাজের সকল শ্রেণি-পেশার মানুষের সমন্বয়ে এ জিয়া পরিষদ। নাটোরের জিয়া পরিষদ গ্রামে গ্রামে গিয়ে সমন্বয় করে যে কমিটি গঠন করে তা প্রমাণ করে।’

অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তা ছিলেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সাবেক উপমন্ত্রী অ্যাডভোকেট এম রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু।

বক্তব্যে দুলু বলেন, ‘যারা নির্বাচনকে পিছনে নেয়ার জন্য ষড়যন্ত্র করছে আপনারা মনে রাখবেন বাংলাদেশের মানুষ এত বোকা নয়। আমরা এখনো বলছি, বর্তমান সরকারের প্রতি আমাদের আহ্বান দ্রুত সময়ের ভেতর নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করে নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি নেন। দেশের মানুষকে মুক্তি দেন।’

তিনি আরো বলেন, ‘বিএনপিকে নিয়ে নানা ষড়যন্ত্র চলছে। দলের অভ্যন্তরেও অনেকে ত্যাগী নেতাদের সম্পর্কে কেন্দ্রে মিথ্যা, ভুল তথ্য দিয়ে ডুবানোর চেষ্টা করছেন। এ ক্রিমিনালদের বিরুদ্ধে নাটোর বিএনপি ঐক্যবদ্ধ রয়েছে।’

সেমিনারে নাটোর জিয়া পরিষদের সাধারণ সম্পাদক শাহ্ মো: শফিকুল ইসলামের সঞ্চালনায় ও নাটোর জিয়া পরিষদের সভাপতি আহমুদুল হক চৌধুরী স্বপনের সভাপতিত্বে সেমিনারে বক্তব্য রাখেন জিয়া পরিষদের কেন্দ্রীয় নির্বাহী মহাসচিব প্রফেসর ড. মো: এমতাজ হোসেন, বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য অধ্যাপক কাজী গোলাম মোর্শেদ, জিয়া পরিষদের রাজশাহী বিভাগের সাধারণ সম্পাদক ফরিদুল ইসলাম, রাজশাহী জিয়া পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ মো: আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ সালাম বিপ্লব, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক রহিম নেওয়াজ, সদস্য সচিব মো: আসাদুজ্জামান আসাদ প্রমুখ।