বগুড়ার আদমদিঘিতে আলু ও সরিষা চাষাবাদের ভরা মৌসুমে ডিএপি সারের সংকট দেখা দিয়েছে।
সরেজমিন দেখে যায়, উপজেলার সারের বড় মোকাম কুন্দুগ্রাম, চাঁপাপুর, নসরতপুর, মুরইল বাজার এবং সদরে কৃষক দোকানে দোকানে ঘুরেও প্রয়োজনীয় ডিএপি (নন-ইউরিয়া) সার মেলাতে পারছেন না। অল্প পরিমাণ মিললেও কিনতে হচ্ছে নির্ধারিত দামের চেয়ে প্রতি বস্তা পাঁচ থেকে সাড়ে পাঁচশত টাকা বেশি দামে। ডিলার পর্যায়ে ৫০ কেজি ওজনের প্রতি বস্তা ডিএপি সারের সরকারি ভর্তুকি দাম এক হাজার ৫০ টাকা, টিএসপি সার এক হাজার তিনশত ৫০ টাকা এবং এমওপি সার এক হাজার টাকা দামে বিক্রি করার সরকারি নির্দেশ থাকলেও তারা সে নির্দেশকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে বিক্রি করছেন ডিএপি এক হাজার পাঁচ শত থেকে এক হাজার ছয় শত টাকা, টিএসপি এক হাজার সাত শত থেকে এক হাজার আট শত টাকা এবং এমওপি সার এক হাজার এক শত ৫০ টাকায়।
জানা গেছে, সরকারের ভর্তুকি দামের নন-ইউরিয়া সার সরবরাহ পয়েন্ট যশোরের নোয়াপাড়া থেকে ধীরগতিতে সরবরাহ করার কারণে সাময়িক সংকট দেখা দিয়েছে বলে দাবি করেছেন উপজেলার বিসিআইসির ১০ ডিলার ও তাদের প্রতিনিধিরা। তারা আরো দাবি করেন, মাসের শেষ হতে চললেও উপজেলার ১০ ডিলারের মধ্যে এখনো ছয় ডিলার তাদের দুইশত ১৭ দশমিক আট মেট্টিক টন ডিএপি সার পায়নি ওই সরবরাহ পয়েন্ট থেকে।
এদিকে অনুসন্ধানে জানা যায়, ডিলারসহ বড়মাপের খুচরা সার ব্যবসায়ীরা তাদের গোপন গুদামে বিগত মাস সমূহের হাজার হাজার বস্তা নন-ইউরিয়া সার মজুত রেখে চলতি আলু ও সরিষা চাষাবাদের ভরা মৌসুমে চড়া দামে বিক্রি করে রাতারাতি আঙ্গুল ফুলে কলা গাছ বনে যাচ্ছেন। তারা বিপুল পরিমাণ এ নন-ইউরিয়া সারকে বেসরকারি উৎস থেকে বেশি দামে কেনা বলে দাবি করেছেন।
অনুসন্ধানে আরো জানা যায়, সরকারের নির্দেশ মোতাবেক প্রতিটি সারের বস্তায় লাল কালিতে ভর্তুকির সার সিল দেয়া না থাকার কারণে কোনটা সরকারের ভর্তুকির সার এবং কোনটা বেসরকারি আমদানীকারক উৎসের সার সেটার পার্থক্য বুঝতে পারে না কেউ। আর এ সুযোগকে কাজে লাগাচ্ছেন অসাধু সার ডিলার ও বড়মাপের খুচরা সার ব্যবসায়ীরা।
সরকারি ও বেসরকারি উৎস্য থেকে প্রাপ্ত এসব সার বিক্রি করার সময় ক্রেতাকে বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানের ছাপানো রশিদ দিতে দেখা যায়নি। তারা সাদা স্লিপ কাগজে ফর্দি করে থাকেন। তবে পরে তাদের প্রতিষ্ঠানের রশিদ ও অন্যান্য কাগজপত্রে সরকার নির্ধারিত দাম লিখে রাখেন।
উপজেলা সদরের জিনইর গ্রামের কৃষক জাবেদুল ইসলাম ও তেঁতুলিয়া গ্রামের কৃষক মোখলেছার রহমান জানান, চলতি আমন মওসুমে ধান কাটার পর আমরা আলু, সরিষা চাষের জন্য সার ক্রয় করতে এসে বিপাকে পড়েছি।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, পর্যাপ্ত ডিএপি সার আমাদের কাছে নাই। আমরা বিভিন্ন জায়গা থেকে সংগ্রহ করে কৃষকদের কাছে বিক্রি করছি। তাই একটু দাম বেশি।
সার ব্যবসায়ী জামাল হোসেন জানান, চলতি মওসুমে আমরা চাহিদার তুলনায় ডিএপি পাচ্ছি না। কৃষকরা তাদের প্রয়োজন মেটাতে আমাদের কাছে ও খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছে ডিএপি ক্রয় করতে আসছেন। আমরা নিরুপায় হয়ে অন্যত্র থেকে সংগ্রহ করে কৃষকদের কাছে বিক্রি করছি।
চলতি ডিসেম্বর মাসে সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে ডিএপি সার বেচাকেনা বিষয়ে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মো: রবিউল ইসলাম বেশি দামে সার বেচাকেনার অভিযোগ নাকচ করে দেন।
তিনি বলেন, ‘কোনো কৃষক বেশি দামে সার কেনার রশিদ বা অন্য কোনো প্রমানসহ অভিযোগ করলে তদন্ত সাপেক্ষে দোষী ডিলার ও ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।’



