ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় জাতীয় নির্বাচন নিয়ে আর কোনো সংশয় নেই। সব বাধা ও অনিশ্চয়তা কেটে গেছে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।
তিনি বলেন, অনেক বছর পর দেশ একটি ‘রিয়েল ইলেকশন’ দেখতে যাচ্ছে, যা অতীতের ‘ফেইক ইলেকশন’ থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন হবে এবং এটি ‘ইতিহাসের অন্যতম সেরা নির্বাচন’ হবে।
শুক্রবার (১০ অক্টোবর) বিকেলে ময়মনসিংহ প্রেস ক্লাবে সাংবাদিকদের সাথে এক মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
প্রেস সচিব বলেন, ‘বিগত ১৬ বছর হাসিনার আমলে আমরা ফেইক ইলেকশন দেখেছি। আমরা সেই জায়গা থেকে সরে এসেছি। এবার ইতিহাসের অন্যতম একটা বেস্ট ইলেকশন হবে।’
তিনি আরো জানান, ‘ইতোমধ্যেই নির্বাচনী আমেজ শুরু হয়েছে; জামালপুর, হালুয়াঘাটসহ বিভিন্ন স্থানে নেতাদের প্যানা-পোস্টার দেখা যাচ্ছে। সব রাজনৈতিক দল দুই-তিন সপ্তাহ পর যখন তাদের প্রার্থী ঘোষণা করা শুরু করবে, তখন নির্বাচনী পরিবেশ আরো জমজমাট হয়ে উঠবে।’
নির্বাচন সংশ্লিষ্ট আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়ে শফিকুল আলম জানান, ‘জুলাই সনদ নিয়ে সব দল একমত হয়েছে এবং আগামী ১৫ তারিখ সব দল এই সনদে সই করবে।’
ইসরাইলি কারাগার থেকে বাংলাদেশের আলোকচিত্রী শহীদুল আলমকে মুক্ত করতে ভূমিকা রাখায় তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোগানকে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ধন্যবাদ জানিয়েছেন বলেও উল্লেখ করেন প্রেস সচিব।
প্রেস সচিব বলেন, “সরকারের মেগা প্রকল্প এবং ‘ইসলামবান্ধব’ ভাবমূর্তিকে কাজে লাগিয়ে ক্ষমতাসীন দলের নেতারা দেশজুড়ে বিপুল দুর্নীতি ও জনগণের অর্থের চরম অপচয় করছেন। উন্নয়ন ও ধর্মীয় উদ্যোগের আড়ালে জনগণের এক বিলিয়ন ডলার পর্যন্ত অর্থ লুট করা হয়েছে। ৫৬০টি মডেল মসজিদ নির্মাণে ‘অবিশ্বাস্য’ চুরি করেছেন তারা।”
নির্মাণ প্রকল্পে চরম দুর্নীতির অভিযোগ তুলে তিনি বলেন, ‘এক বিলিয়ন ডলারের ৫৬০টি মসজিদ নির্মাণ প্রকল্পকে ব্যবহার করে স্থানীয় নেতা ও ঠিকাদাররা জনগণের অর্থ পকেটস্থ করছেন।’
‘প্রতিটি মসজিদের নির্মাণ ব্যয় হওয়ার কথা ছিল ৪-৫ কোটি টাকা। সেখানে খরচ দেখানো হয়েছে ১৫-২০ কোটি টাকা! এমন কিছু নেই যে তারা আসলে চুরি করে নাই। এটা একপ্রকার আনবিলিভেবল দুর্নীতি,’ বলেন তিনি।
আওয়ামী লীগ সরকারের প্রভাবশালী মন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ এনেছেন তিনি। তিনি দাবি করেন, ‘ওই মন্ত্রী দুর্নীতি করে বিদেশে, বিশেষত লন্ডনে শত শত বাড়ি কিনেছেন।’
তিনি অভিযোগ করেন, ‘ওই টানেলের ফান্ডের ৪৫০ কোটি টাকা খরচ করে তিনি তার বাড়ির ওইখানে একটি বিশাল হোটেল তৈরি করেছেন।’
‘হোটেলটি তৈরি হলেও টানেলটি বর্তমানে কার্যত অব্যবহৃত, যেখানে টানেলের মাসিক রক্ষণাবেক্ষণ খরচ ৩০-৪০ লাখ টাকা হলেও রাজস্ব আয় হচ্ছে মাত্র পাঁচ লাখ টাকা,’ বলেন তিনি।
তিনি এই পরিস্থিতিকে সরকারি অর্থের চরম অপচয়ের একটি জ্বলন্ত উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করেন।
এছাড়াও অপ্রয়োজনীয় প্রকল্পে বিপুল অর্থ ব্যয়ের অভিযোগ তুলে তিনি দুই-তিন হাজার কোটি টাকা খরচ করে তৈরি করা একটি নতুন রেললাইনের উদাহরণ দেন, যেখানে সারাদিনে ২০০ জন যাত্রীও যাতায়াত করেন না।
এ সময় ময়মনসিংহ প্রেস ক্লাবের সহ-সভাপতি নওয়াব আলী, সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম, সাংবাদিক ইউনিয়ন ময়মনসিংহের সভাপতি এম আইয়ুব আলীসহ প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।