উজানের ঢলে লালমনিরহাটে পানিবন্দি মানুষ, চরম বিপাকে ৭ হাজার পরিবার

‘ভারতের ছেড়ে দেয়া পানিতে একটি বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় স্তর নিম্ন অঞ্চলে কিছু এলাকায় বন্যা সৃষ্টি হয়েছে।’

সাব্বির আহমেদ লাভলু, লালমনিরহাট

Location :

Lalmonirhat
উজানের ঢলে লালমনিরহাটে পানিবন্দি মানুষ, চরম বিপাকে ৭ হাজার পরিবার
উজানের ঢলে লালমনিরহাটে পানিবন্দি মানুষ, চরম বিপাকে ৭ হাজার পরিবার |নয়া দিগন্ত

ভারত থেকে নেমে আসা উজানের ঢলের প্রভাবে তিস্তা নদীর পানি হু হু করে বেড়ে বর্তমানে কিছুটা কমলেও লালমনিরহাট জেলার বিভিন্ন এলাকার তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল এখনো প্লাবিত। এতে জেলার পাঁচ উপজেলার অন্তত ১৫টি গ্রামের প্রায় সাত হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে।

বুধবার (৩০ জুলাই) সকালে পানি বিপৎসীমার ৮ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হলেও রাতের অতিরিক্ত পানির তোড়ে হাতীবান্ধা উপজেলার ধুবনী এলাকায় একটি কাঁচা রাস্তা ভেঙে যায়। ক্ষতিগ্রস্ত হয় একটি বাঁধও, যার ফলে নতুন নতুন এলাকায় পানি ঢুকে পড়ে। উজানের ঢলের প্রভাবে পানিবন্দি হাজারও মানুষএ অবস্থায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে তিস্তা ব্যারাজের ৪৪টি জলকপাটই খুলে রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা।

পানিবন্দি এলাকার মধ্যে রয়েছে- হাতীবান্ধা উপজেলার সানিয়াজান, সিন্দুর্না, পাটিকাপাড়া, গড্ডিমারী, কালীগঞ্জের ভোটমারী, আদিতমারীর মহিষখোচা এবং সদর উপজেলার রাজপুর, খুনিয়াগাছ ও গোকুন্ডা ইউনিয়নের একাধিক গ্রাম।

বন্যার্ত এলাকায় পানি না কমায় বিপাকে বিপাকে বিপাকে পড়েছে তিস্তার নিম্ন অঞ্চলের মানুষ, পানি বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে রান্নাবান্না হচ্ছে না পরিবারগুলোর মাঝে ফলে শুকনো খাবার ও বাজার থেকে কেনা খাবারের উপর নির্ভরশীল হচ্ছেন তারা, গবাদি পশু ও হাঁস মুরগি নিয়েও পড়েছেন চরম বিপাকে। ঘাস ও শুকনো খাবার না থাকায় গরু ছাগল নিয়ে পড়েছেন দুশ্চিন্তায়, সদ্য রোপণ করা আমন ধানের চারা ও বীজতলা পানিতে ডুবে গেছে, মৎস্য চাষীদের পুকুর ও বিলের মাছ ভেসে যাওয়ায় চরম ক্ষতির মুখে পড়েছেন তারা।

তিস্তা পাড়ের কৃষকরা জানায়, প্রতি বছর তিস্তার ভাঙন ও বন্যায় আমাদের ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়। আমরা চাই দ্রুত তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন হোক।

পানিতে ডুবে গেছে ফসলি জমি, রাস্তা, বসতঘর ও মাছের ঘের। দুর্গত এলাকায় এখনো পর্যন্ত পর্যাপ্ত ত্রাণ সহায়তা না পৌঁছানোর অভিযোগ করছেন স্থানীয়রা।

তবে বিকেলে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে বন্যার্ত পরিবাদের মাঝে শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে।

লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সুনীল কুমার বলেন, ‘তিস্তার পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করেছিল। ধুবনী এলাকায় একটি বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে আজ সকালে পানি কিছুটা কমেছে। আগামী ২৪ ঘণ্টা পানি স্তর স্থিতিশীল থাকতে পারে। তারপর ধীরে ধীরে কমতে পারে।’

লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক এইচ এম রকি হায়দার বলেন, ‘ভারতের ছেড়ে দেয়া পানিতে একটি বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় স্তর নিম্ন অঞ্চলে কিছু এলাকায় বন্যা সৃষ্টি হয়েছে।’ পরিবারগুলোর খোঁজ নিয়ে ত্রাণ কার্য পরিচালনা করা হবে বলে তিনি জানিয়েছেন।