রাজশাহীতে আ’লীগ নেতার হিমাগারে শিক্ষার্থীকে হাতুড়িপেটাসহ দুই বোনকে নির্যাতন

আওয়ামী লীগ নেতার হিমাগারে মেডিক্যাল শিক্ষার্থী এবং তার দুই খালাতো বোনকে নির্যাতনের অভিযোগে পুলিশ তিনজনকে গ্রেফতার করেছে।

আব্দুল আউয়াল, রাজশাহী ব্যুরো

Location :

Rajshahi
রাজশাহীতে আ’লীগ নেতার হিমাগারে শিক্ষার্থীকে হাতুড়িপেটাসহ দুই বোনকে নির্যাতন
রাজশাহীতে আ’লীগ নেতার হিমাগারে শিক্ষার্থীকে হাতুড়িপেটাসহ দুই বোনকে নির্যাতন |নয়া দিগন্ত

আওয়ামী লীগ নেতা ও রাজশাহী জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী সরকারের হিমাগারে মেডিক্যাল শিক্ষার্থী এবং তার দুই খালাতো বোনকে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় পুলিশ তিনজনকে গ্রেফতার করেছে।

মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর) সকালে জেলার পবা উপজেলার বায়া এলাকায় সরকার কোল্ড স্টোরেজে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার পর স্থানীয় লোকজন অফিস কক্ষটিতে ভাঙচুর চালান।

এলাকাবাসী ও ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, মোহাম্মদ আলী সরকারের ছেলে আহসান উদ্দিন সরকার জিকোসহ কয়েকজন এই নির্যাতনের সাথে জড়িত।

এলাকাবাসী মোহাম্মদ আলী সরকারের ছেলে আহসান উদ্দিন সরকার জিকো (৪৫), মেয়ে আঁখি (৩৫) ও হাবিবাকে (৪০) হিমাগারের অফিস কক্ষে অবরুদ্ধ করে রাখেন। পরে সেনাবাহিনীর সহায়তায় এয়ারপোর্ট থানা পুলিশ তাদের আটক করে নিয়ে যায়।

এর আগে পুলিশ আহত তিনজনকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে পাঠায়।

নির্যাতনের শিকার ব্যক্তিদের বাড়ি পবা উপজেলায়। আহত যুবক রাজশাহীর একটি বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজের পঞ্চম বর্ষের শিক্ষার্থী। তার সঙ্গে খালাতো দুই বোন ছিল। এ ঘটনায় যুবকের ভাই বাদী হয়ে পবা থানায় মামলা করেছেন।

মামলার এজাহারে বলা হয়, অফিস কক্ষে ডেকে নিয়ে তিনজনকে লাঠি, বাঁশ, হাতুড়ি দিয়ে পেটানো হয়। একপর্যায়ে শরীরে সেফটি পিন ফুটিয়ে নির্যাতন করা হয়।

দুপুরের দিকে হিমাগারে বসে থাকার সময় নির্যাতনের শিকার ওই নারীর কোলে শিশুসন্তান ছিল। তিনি খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটছিলেন। তার কান দিয়ে রক্ত ঝরছিল। আহত মেডিক্যাল শিক্ষার্থীর দুই হাতে জখম ও পিঠে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। ওই কিশোরীকেও আঘাত করা হয়।

আহত নারী জানান, জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী সরকারের সাথে তাদের পারিবারিক সম্পর্ক ছিল। বিষয়টি তার ছেলে-মেয়েরা ভালোভাবে নিতেন না। তাদের সন্দেহ, মোহাম্মদ আলীর সাথে তার অনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে। মঙ্গলবার সকালে ওই নারীকে ফোন কল করে তার হিমাগারে ডাকা হয়। তখন তিনি তার খালাতো ভাই ও ছোট বোনকে নিয়ে আসেন। এখানে আসার পর মোহাম্মদ আলীর ছেলে ও মেয়েরা তাদের ধাক্কা দিতে দিতে অফিস কক্ষের ভেতরে নিয়ে যান। এরপর কর্মচারীদের সহায়তায় তাদের নির্যাতন করা হয়। নির্যাতনকালে দরজা বন্ধ করে রাখা হয়েছিল। এছাড়া কেড়ে নেয়া হয়েছিল তাদের মোবাইল ফোন। পরে স্থানীয় লোকজন চিৎকার শুনে এগিয়ে যান। তারা অফিসের দরজা খুলতে বললেও খোলা হচ্ছিল না। একপর্যায়ে দরজা খোলা হয়। পরে পুলিশ এলে তাদের মোবাইল ফোন ফেরত দেয়া হয়।

নির্যাতনের শিকার কিশোরীর অভিযোগ, মোহাম্মদ আলী সরকারের দুই মেয়ে তাদের দুই বোনের সারা শরীরে সেফটি পিন ফুটিয়ে নির্যাতন করেন।

এদিকে বেলা ১১টা থেকে স্থানীয় বিক্ষুব্ধ জনতা হিমাগারের ভেতর মোহাম্মদ আলী সরকারের ছেলে-মেয়েদের অবরুদ্ধ করে রাখেন। তারা তাদের গ্রেফতার করার দাবি জানাতে থাকেন। তবে অভিযুক্তদের বের করলেই হামলার শঙ্কায় পুলিশ তাদের নিয়ে যাচ্ছিল না। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে বেলা ২টার দিকে স্থানীয় লোকজন অফিস কক্ষের সিসি ক্যামেরা ও কাঁচের জানালাগুলো ভেঙে ফেলেন। পরে সেনাবাহিনীর সহায়তা নেয়া হয়। তারা আসার পর তিনজনকে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ।

তবে এব্যাপারে অভিযুক্তদের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

এ ব্যাপারে এয়ারপোর্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফারুক হোসেন গণমাধ্যমকে জানান, অভিযুক্ত তিনজনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। তিনজনকেই গ্রেফতার করা হয়েছে। আদালতের মাধ্যমে তাদের কারাগারে পাঠানো হবে।