আমতলীতে নবম শ্রেণির ছাত্র বানাল যুদ্ধ বিমান

আমতলীর নবম শ্রেণির ছাত্র সওকত ইসলাম সিফাত তৈরি করেছেন দু’টি যুদ্ধ বিমান, রাডার, মিসাইল ও যুদ্ধ জাহাজ; টিফিনের টাকা জমিয়ে এসব আবিষ্কার করা খুদে বিজ্ঞানী সরকারি সহায়তা পেলে আরো বড় কিছু করতে চান।

আমতলী (বরগুনা) সংবাদদাতা

Location :

Amtali
সওকত ইসলাম সিফাতের তৈরি যুদ্ধবিমান
সওকত ইসলাম সিফাতের তৈরি যুদ্ধবিমান |নয়া দিগন্ত

বরগুনার আমতলী উপজেলার গাজীপুর বন্দর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্র সওকত ইসলাম সিফাত দু’টি যুদ্ধ বিমান, আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা রাডার, মিসাইল ও যুদ্ধ জাহাজ তৈরি করেছেন। তার এমন সৃষ্টি কর্মে অভিভুত এলাকাবাসী। সিফাত বৈজ্ঞানিক হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন।

সোমবার (১৩ অক্টোবর) দুপুরে সরেজমিনে দেখা গেছে, খুদে বিজ্ঞানী সওকত ইসলাম সিফাতের এমন সৃষ্টিকর্ম। তিনি রিমোট কন্টোল সিস্টেম আমেরিকার তৈরি এফ-২২ মডেলের যুদ্ধ বিমান আকাশে উড়িয়ে দেখান। এ যুদ্ধ বিমান তৈরিতে তিনি রিমোট, রিসিভার, বিএলডিসি মর্টার, সার্ভো মর্টার ও ব্যাটারিসহ নানা যন্ত্রাংশ ব্যবহার করেছেন।

জানা গেছে, আমতলী উপজেলার হলদিয়া ইউনিয়নের উত্তর রাওগা গ্রামের মো: বশির প্যাদার ছেলে সওকত ইসলাম সিফাত ২০২২ সালে একটি মাদরাসায় হেফজ বিভাগে ভর্তি হন। এক বছর হেফজ শেষে তিনি ২০২৩ সালে চাওড়া পাতাকাটা মেহেরআলী দাখিল মাদরাসায় সপ্তম শ্রেণিতে লেখাপড়া শুরু করেন। ২০২৫ সালে গাজীপুর বন্দর মাধ্যমিক বিদ্যালয় নবম শ্রেণিতে বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হন। লেখাপড়ার পাশাপাশি নতুন সৃষ্টিশীল কাজে মনোনিবেশ করেন তিনি। নতুন নতুন আবিষ্কারই যেন তার নেশায় পরিণত হয়েছে।

২০২৫ সালের শুরুর দিকে তিনি যুদ্ধ বিমান তৈরির উদ্যোগ নেন। দীর্ঘ তিন মাস প্রচেষ্টার পরে তিনি রাশিয়ার তৈরি মিগ-২৯ মডেলের যুদ্ধ বিমান তৈরি করেন। ওই বিমান তিনি আকাশে উড়িয়ে এলাকার মানুষের কাছে খুদে বিজ্ঞানী উপাধি পান। তাকে এলাকায় বিজ্ঞানী বলে ডাকে। বাবা বশির প্যাদা ও মা চম্পা আক্তারের অনুপ্রেরণা এবং এলাকার মানুষের উৎসাহে তিনি আরো নতুন নতুন আবিষ্কারের নেশায় মেতে উঠেন। এরপর তিনি দু’মাস চেষ্টা করে আমেরিকার তৈরি এফ-২২ মডেলের যুদ্ধ বিমান তৈরি করেন। এরপর তিনি আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা রাডার, মিসাইল ও যুদ্ধ জাহাজ তৈরি করেছেন। সকল আরিষ্কারেই তিনি সফল হয়েছে।

চম্পা আক্তার জানান, ছেলে সিফাত লেখাপড়ার চেয়ে আবিষ্কারের নেশায় বেশি মত্ত। সারাক্ষণ গবেষণাগারে পড়ে থাকে। ইতোমধ্যে তিনি দু’টি যুদ্ধ বিমান, যুদ্ধ জাহাজ ও আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা রাডার ও যুদ্ধ জাহাজ আবিষ্কার করেছেন। তার সবকটি আবিষ্কারই তিনি সফলভাবে সম্পন্ন করেছেন। তার তৈরি বিমান আকাশে উড়ছে, যুদ্ধ জাহাজ পানিতে চলছে, রাডার ও মিসাইল সক্রিয়ভাবে কাজ করছে। টিফিনের টাকা জমা করে এবং মা-বাবা ও প্রতিবেশীদের দেয়া অর্থ দিয়ে তিনি এগুলো আরিষ্কার করেছেন। এগুলো আবিষ্কার করতে তার প্রায় ৫০ হাজার টাকা ব্যয় হয়েছে। অর্থ সঙ্কটের কারণে তিনি নতুন আবিষ্কারের প্রতিভা বিকশিত করতে পারছেন না।

খুদে বিজ্ঞানী সওকত ইসলাম সিফাত বলেন, ‘মা-বাবার অনুপ্রেরণায় টিফিনের টাকা জমিয়ে রাশিয়ার তৈরি মিগ-২৯ মডেল যুদ্ধ বিমান, আমেরিকার তৈরি এফ-২২ মডেল যুদ্ধ বিমান, যুদ্ধ জাহাজ, আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা রাডার ও মিসইল তৈরি করেছি। আরো অনেক কিছু তৈরির পরিকল্পনা আছে। অর্থের অভাবে আবিষ্কার করতে পারছি না। আমি বৈজ্ঞানিক হয়ে রাষ্ট্রের প্রয়োজনে কাজ করতে চাই।’

মো: বশির প্যাদা বলেন, ‘ছেলের প্রতিভা দেখে অর্থের দিকে তাকাই না। অনেক কষ্ট হলেও সাধ্যমত অর্থ দিয়ে ওর সৃষ্টিকর্ম সচল রাখতে চেষ্টা করি। কিন্তু এখন আর পারছি না। আমার ছেলেকে সরকারি ও বেসরকারিভাবে সহযোগিতা করলে অনেক দূর এগিয়ে যাবে বলে আশা করি।’

গাজীপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) মো: শাহীন মাহমুদ বলেন, ‘মেধাবী ছাত্র সওকত ইসলাম সিফাত ক্লাসের বাইরে বিভিন্ন আবিষ্কার নিয়ে গবেষণা করে। ইতোমধ্যে যুদ্ধ বিমান, যুদ্ধ জাহাজ ও রাডার তৈরি করেছে। তাকে প্রয়োজন মতো বিদ্যালয় থেকে সহযোগিতা করা হচ্ছে। সরকারিভাবে আর্থিক সহয়তা পেলে অনেক দূর এগিয়ে যাবে।’

আমতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো: রোকনুজ্জামান খাঁন বলেন, ‘বিষয়টি আমি জেনেছি। তার এমন উদ্ভাবনী সৃষ্টিকর্মের জন্য আর্থিকভাবে সহযোগিতা করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।