আপিল বিভাগের রায়ে ক্ষোভে ফুসছে শিল্পনগর গাজীপুর

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এটি কার্যত ভোটার–প্রতিনিধি বৈষম্যের জন্ম দিচ্ছে, যা প্রশাসনিকভাবে অযৌক্তিক।

মো: আজিজুল হক, গাজীপুর মহানগর

Location :

Gazipur
গাজীপুরের ম্যাপ
গাজীপুরের ম্যাপ |নয়া দিগন্ত

গাজীপুর-৬ আসন বাতিল এবং বাগেরহাট-৪ আসন বহাল রাখার নির্দেশ দিয়েছে আপিল বিভাগ। এ রায় প্রকাশের সাথে সাথেই টঙ্গী-গাছা-পূবাইলজুড়ে তীব্র হতাশা, ক্ষোভ ও প্রতিবাদ ছড়িয়ে পড়েছে।

বুধবার (১০ ডিসেম্বর) কয়েক দফা শুনানি–স্থগিতাদেশ–স্থিতাবস্থার পর এ রায় ঘোষণা করা হয়।

গাজীপুরের শিল্পনগরবাসী মনে করছেন, তাদের জনসংখ্যা, নগরবাস্তবতা, ভোটার ঘনত্ব এবং সাংবিধানিক প্রতিনিধিত্ব সম্পূর্ণভাবে অবহেলিত হয়েছে।

স্থানীয়রা বলছেন, এটি জনঘনত্ব, ন্যায়সংগত প্রতিনিধিত্ব ও প্রশাসনিক বাস্তবতার ওপর সরাসরি আঘাত।

গুরুত্বপূর্ণ পরিসংখ্যান আদালতে উপস্থাপিত হলেও— রায়ে স্থান পেল না বাস্তবতা

গাজীপুরের পক্ষে থাকা আইনজীবীরা ফুলবেঞ্চে গুরুত্বপূর্ণ পরিসংখ্যান তুলে ধরেছিলেন, বাগেরহাটের-৪ আসনে ভোটার মাত্র ১২ লাখ, জনসংখ্যা ১৬ লাখ, গাজীপুর-৬ আসনে ভোটার ২৫ লাখের বেশি, জনসংখ্যা প্রায় ৬৯ লাখ। যেখানে ছোট জনসংখ্যার জেলায় চার আসন, সেখানে শিল্পনগর গাজীপুরে জনঘনত্বের তুলনায় কম আসন রাখা— এ যুক্তি আদালতে তোলপাড় সৃষ্টি করেছিল। কিন্তু রায় ঘোষণায় এসব বিশ্লেষণ ও বাস্তব প্রেক্ষাপট প্রতিফলিত হয়নি বলে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন গাজীপুরবাসী।

রায়ের ফলে গাজীপুর–২ আসনে ভোটার সংখ্যা দাঁড়াচ্ছে প্রায় সাড়ে আট লাখ, যা দেশের সবচেয়ে বড় ও অকার্যকর আসনে পরিণত হবে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এটি কার্যত ভোটার–প্রতিনিধি বৈষম্যের জন্ম দিচ্ছে, যা প্রশাসনিকভাবে অযৌক্তিক।

গাজীপুরজুড়ে প্রতিক্রিয়া : রায়ে স্বস্তির বদলে তীব্র হতাশা

টঙ্গী-গাছা-পূবাইল এলাকায় রায়ের পরপরই স্থানীয়দের মধ্যে উন্মুক্ত ক্ষোভ দেখা গেছে। অনেকে বলছেন, শিল্প এলাকার ৫০ লাখ মানুষের কণ্ঠরোধ করা হলো। কেউ কেউ বলছেন, বাগেরহাট-৪ বহাল আর গাজীপুর-৬ বাতিল— এ সিদ্ধান্ত জনসংখ্যা-ভোটার অনুপাতকে সম্পূর্ণ উল্টো পথে নিয়ে গেল।

এলাকার সাবেক এমপি, বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা ও বীর মুক্তিযোদ্ধা হাসান উদ্দিন সরকার বলেন, ‘রায়ের পর এখন সবচেয়ে জরুরি হচ্ছে গাজীপুরবাসীর গণঅধিকার রক্ষার পথ নির্ধারণ করা। এজন্য আগামীকাল সকালে সবাইকে মাদরাসায়— আমার কার্যালয়ে ডেকেছি। সেখানে স্থানীয় নেতৃবৃন্দ, আইনজীবী এবং আগ্রহী নাগরিকদের সাথে বিস্তারিত পরামর্শ করব। আলোচনা শেষে আমরা গাজীপুরবাসীর স্বার্থ সুরক্ষায় পরবর্তী করণীয় সম্পর্কে স্পষ্ট সিদ্ধান্ত নেব।’

জামায়াত মনোনীত প্রার্থী ড. হাফিজুর রহমান বলেন, ‘এ রায়ে গাজীপুরবাসী গভীরভাবে হতাশ ও ক্ষুব্ধ। কয়েক লাখ মানুষের প্রতিনিধি ক্ষমতা কেড়ে নেয়া হয়েছে— এটা স্পষ্টতই তাদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করার শামিল। আমরা জনগণের পাশে আছি, এবং গাজীপুরবাসীর ভোটাধিকার ও আইনি অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠায় সর্বোচ্চ দায়িত্বশীল ভূমিকায় থাকবো— ইনশাআল্লাহ।’

বিশ্লেষণ

রায়ে ‘জনঘনত্ব–যুক্তি’ উপেক্ষিত বলে দাবি বিশেষজ্ঞদের। আজকের রায়ে স্পষ্ট দেখা গেছে, গাজীপুরের শিল্পনগরবাসীর দীর্ঘদিনের ন্যায়সংগত প্রতিনিধিত্বের দাবি পূরণ হয়নি। বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রায় ৬০ থেকে ৭০ লাখ জনসংখ্যার জেলাকে ছয় আসনে বেঁধে রাখা, সাড়ে আট লাখ ভোটারের একক আসনের চাপ, নগরবাস্তবতা, শিল্পশ্রমিক ঘনত্ব ও প্রশাসনিক সক্ষমতার প্রশ্ন, এসব বিষয় রায়ের আলোচনায় পর্যাপ্তভাবে স্থান পায়নি। ফলে গাজীপুরের মানুষের মধ্যে এক ধরনের রাজনৈতিক হতাশা ও উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।