ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলার একমাত্র সরকারি কলেজ সরকারি নগরকান্দা কলেজে কক্ষ সংকট ও ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে চলছে পাঠদান। এতে যেকোনো সময় ছাদ ধসে বড় ধরনের দুর্ঘটনায় আশঙ্কা করা হচ্ছে।
জানা গেছে, ১৯৭২ খ্রিস্টাব্দে নগরকান্দা উপজেলার সাবেক এমএনএ ও মন্ত্রী কে এম ওবায়দুর রহমান এলাকায় শিক্ষা বিস্তারের লক্ষ্যে নগরকান্দা মহাবিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। তার উদ্যোগে কলেজটিতে ১৯৭২ খ্রিস্টাব্দেই একটি একতলা ভবন ও টিনশেট ঘর নির্মাণ করা হয়। সেখানেই ১৯৯১ সাল পর্যন্ত ক্লাসের কার্যক্রমসহ অধ্যক্ষ ও শিক্ষকদের জন্য একটি শিক্ষক মিলনায়তন ছিল।
১৯৯১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় এলে ১৯৯২ সালে তিন কক্ষ বিশিষ্ট একটি দোতলা ভবন নির্মাণ করা হয়। ২০০৫ সালে বিএনপি সরকার পুনরায় ক্ষমতায় আসলে তৎকালীন বিএনপির দলীয় সংসদ কলেজের প্রতিষ্ঠাতা কে এম ওবায়দুর রহমানের প্রচেষ্টায় দুই কক্ষ বিশিষ্ট দোতলা (বিএম) ভবন নির্মাণ করেন। ভবনগুলো পুরাতন হওয়ায় প্রত্যেক শ্রেণিকক্ষে পলেস্তারা খসে পড়ছে প্রতিনিয়ত। দেয়াল মেঝেতে ফাটল ধরেছে। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের পাঠদান করানো হচ্ছে। শিক্ষকরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে শ্রেণিকক্ষে কার্যক্রম করে যাচ্ছেন। জরাজীর্ণ ভবনে পাঠদানের কারণে দিন দিন কলেজে ছাত্র-ছাত্রী সংখ্যা কমে যাচ্ছে।
বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে কলেজের নতুন ভবনের জন্য বারবার আবেদন করা হলেও আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য ক্ষমতায় থাকায় বিএনপি গড়া প্রতিষ্ঠান বলে নতুন ভবন থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। কলেজটিতে ডিগ্রী (পাস), একাদশ-দ্বাদশ বিজ্ঞান, মানবিক, ব্যবসা শিক্ষা ও কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে ব্যবসায় ব্যবস্থাপনা শাখাসহ প্রায় দু’হাজার ছাত্র-ছাত্রী বর্তমানে লেখাপড়া করছে। কিন্তু তাদের জন্য নেই পর্যাপ্ত আবাসন, ক্লাসরুম, মেয়েদের কমনরুম,পৃথক নামাজ ও ওযু খানা। সবচেয়ে নাজুক অবস্থা সেনিটেশন ব্যবস্থা যা পরীক্ষা কেন্দ্র ও শিক্ষার্থীদের জন্য মারাত্মক ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
দ্বাদশ শ্রেণীর শিক্ষার্থীর মনোয়ারা, সানজিদা ও তানিয়া বলেন, ‘মেয়েরা আলাদা কমনরুম ও নামাজের জায়গা পাইনা, ছোট্ট পরিসরে পাঠাগারে কমন রুম ও নামাজের ব্যবস্থা থাকলেও তা পর্যাপ্ত নয়। কমনরুমও ছোট। তারপরও আমরা কষ্ট করে পড়াশোনা চালাচ্ছি।’
মো: বেলাল হোসেন বলেন, মান সম্পন্ন শিক্ষক থাকলেও অবকাঠামো না থাকায় পড়াশুনায় আনন্দ হারিয়ে ফেলছে তারা। মেয়েদের জন্য আলাদা কমনরুম নেই। অবকাঠামো পর্যাপ্ত না থাকায় ক্লাস করতে গিয়েও পড়তে হয় বিপাকে। আমরা সব সময় ভয়ে থাকি, কখন আমাদের মাথার উপর ছাদ ভেঙ্গে পড়ে।
সরকারি নগরকান্দা কলেজের লাইব্রেরিয়ান মো: মশিউর রহমান বলেন, মহাবিদ্যালয়ের চারটি ভবনই জরাজীর্ণ অবস্থায় রয়েছে। ভবনের ছাদ থেকে পানি পড়ছে,পলেস্তারা খসে খসে পড়ছে। নতুন ভবন না হলে কলেজের স্বাভাবিক কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়া অসম্ভব।
নগরকান্দা উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও নগরকান্দা কলেজের সাবেক ভিপি মো: সাইফুর রহমান মুকুল বলেন, বিগত ফ্যাসিস্ট সরকার বিএনপি করা কোন প্রতিষ্ঠানে উন্নয়নমূলক কাজ করেনি বিধায় কলেজটির আজ এ অবস্থা।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ও ফরিদপুর-২ (নগরকান্দা -সালথা) আসনের সম্ভাব্য বিএনপির সংসদ সদস্য প্রার্থী শামা ওবায়েদ ইসলাম রিঙ্কু বলেন, ‘উপজেলার সবচেয়ে পুরানো একমাত্র সরকারি কলেজ বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের দলীয়করণের শিকার হওয়ায় উন্নয়ন বঞ্চিত ছিল।
নগরকান্দা কলেজের অধ্যক্ষ মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলামের মুঠোফোনে যোগাযোগ করে না পাওয়ায় মতামত জানা যায়নি।
ফরিদপুর জেলা শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতরের নিবাহী প্রকৌশলী আফজাল হোসেন বলেন, ‘কলেজটির সম্পর্কে আমি অবগত আছি, চেষ্টাও করছি, ছয়তলা ভবনের জন্য প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে, অনুমোদন পেলেই কাজ শুরু হবে।’