সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজারে স্কুল অ্যান্ড কলেজ ও মাদ্রাসা পড়ুয়া দুই শিক্ষার্থীর অজান্তেই তাদেরকে ছাত্রদলের কমিটিতে সভাপতি ও সাংগঠনিক সম্পাদক পদ দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
বুধবার (৩০ জুলাই) বিকেলে উপজেলার নরসিংপুর ইউনিয়ন ও দোহালিয়া ইউনিয়নে এ ঘটনা ঘটে।
না চাইতেই মাদ্রাসা ছাত্রদলের সভাপতি পদ পাওয়া শিক্ষার্থীর নাম মেহেদী হাসান হৃদয়। তিনি দ্বীনেরটুক দারুল কোরআন আলিম মাদরাসার আলিম প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী। তাকে মাদরাসা ছাত্রদলের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব দেয়া হয়।
বুধবার মাদরাসা ক্যাম্পাসে দেয়া এক ভিডিও বার্তায় মেহেদী হাসান হৃদয় অভিযোগ করে বলেন, কে বা কারা আমার নাম ব্যবহার করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে রাজনৈতিক দলের প্রচারণা চালায়। ওই বিষয়ে আমি কিছুই জানি না এবং আমার অজান্তে এই প্রচারের তীব্র নিন্দা জানাই। ক্ষোভ প্রকাশ করে ছাত্রদল নামে কমিটিকে প্রত্যাখ্যান করলাম এবং দ্বীনেরটুক দারুল কোরআন আলিম মাদরাসাকে সম্পন্ন রাজনীতি মুক্ত ক্যাম্পাস ঘোষণা করলাম।
অপরজন হলেন- দোহালিয়া ইউনিয়নের প্রগতি স্কুল অ্যান্ড কলেজ দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী ও ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদকের পদ পাওয়া মোনায়েম ওয়াসিফ মিকদাদ।
তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়ে লিখেন, আমি মোনায়েম ওয়াসিফ মিকদাদ, প্রগতি স্কুল অ্যান্ড কলেজ দোহালিয়ার একজন সাধারণ ছাত্র। আমি আজকে অত্যন্ত বিস্মিত ও বিব্রত হয়েছি যখন শুনলাম আমাকে ছাত্রদলের কমিটিতে সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। আমি এই বিষয়ে কোনো রকম অবগত নই, আমাকে জিজ্ঞাসাও করা হয়নি এবং আমি এই কমিটির সাথে কোনো সম্পর্কও রাখি না। আমার পরিবার আমাকে এই কলেজে ভর্তি করানোর অন্যতম প্রধান কারণ ছিল এখানকার রাজনীতি মুক্ত পরিবেশ। আমিও নিজে কখনো কোনো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত হইনি এবং আগ্রহীও না। কমিটিতে আমার নাম ব্যবহারে প্রতিবাদ জানাই এবং অনুরোধ করছি যেন আমার নাম এই ধরনের কর্মকাণ্ড থেকে অবিলম্বে প্রত্যাহার করা হয়।
তিনি আরো লিখেন, শিক্ষকদের দৃষ্টি আমার প্রতি যেভাবে পরিবর্তিত হয়েছে, তা আমাকে কষ্ট দিয়েছে। আমি একজন ছাত্র হিসেবে শুধুমাত্র আমার পড়াশোনায় মনোযোগ দিতে চাই এবং কোনো রাজনৈতিক পরিচয়ে পরিচিত হতে চাই না। সবাইকে অনুরোধ, কেউ যেন ভুল বোঝাবুঝি না করেন। আমি নই রাজনীতির অংশ, আমি শুধু একজন শিক্ষার্থী।
জানা গেছে, গত ২৭ জুলাই (রোববার) সন্ধায় সুনামগঞ্জ জেলা ছাত্রদলের ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক মুমিত ইসলাম ও সদস্য সচিব তারেক মিয়া স্বাক্ষরিত বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের প্যাডে দোয়ারাবাজার উপজেলার প্রতিটা স্কুল অ্যান্ড কলেজ ও আলিম মাদরাসা ছাত্রদল কমিটির তালিকা প্রকাশ করা হয়। প্রত্যন্ত অঞ্চলের এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দলীয় ছাত্ররাজনীতির কমিটি প্রকাশ হওয়ার পর থেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে উঠে নানান সমালোচনার ঝড়। এতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারকারীরা নিন্দা জানিয়ে স্কুল-মাদরাসা হতে ইসলামিক শিক্ষার বাহিরে এসব রাজনীতি কর্মকাণ্ড বন্ধের দাবি জানান।
এছাড়াও প্রতিষ্ঠান ক্যাম্পাসে এমন দলীয় রাজনীতি বন্ধে বিবৃতি দিয়েছে উপজেলার সমুজ আলী উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজ, লিয়াকতগঞ্জ স্কুল অ্যান্ড কলেজ ও দ্বীনেরটুক দারুল কোরআন আলিম মাদরাসাসহ বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান।
প্রতিষ্ঠানের প্যাডে প্রকাশিত বিবৃতিতে তারা লিখেন, সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল নামে একটি কমিটি কর্তৃপক্ষের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। যা ইতোপূর্বে কখনো হয়নি। এর পরিপ্রেক্ষিতে কর্তৃপক্ষ আলোচনা সাপেক্ষে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে যে প্রাতিষ্ঠানিক স্বার্থে ওই প্রতিষ্ঠান সম্পন্ন রাজনীতি মুক্ত থাকবে। সাংগঠনিক কোনো কমিটি এখানে রাজনৈতিক কোনো কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারবে না।
এছাড়াও অসাধু উপায়ে আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে বিভিন্ন স্কুল এন্ড কলেজ ও মাদ্রাসা ছাত্রদলের কমিটি করা হয়েছে এমন অভিযোগে বিক্ষোভ মিছিল করেছে ছাত্রদল নেতাকর্মীরা।
এ বিষয়ে সুনামগঞ্জ জেলা ছাত্রদলের ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক মুমিত ইসলাম বলেন, ‘ছাতক ও দোয়ারাবাজার দুই উপজেলার স্থানীয় দায়িত্বশীলরা আমাদের যেভাবে কমিটি সাজিয়ে দিয়েছেন আমরা সেভাবেই কমিটি প্রকাশ করেছি। এখানে আমাদের কোনো হস্তক্ষেপ কি’বা চাহিদা নেই। আমরা শুধু স্বাক্ষরের মাধ্যমে অনুমোদন দেয়।’