সংবাদ প্রকাশের জেরে রংপুরের সিনিয়র সাংবাদিক লিয়াকত আলী বাদলকে অপহরণ করে সিটি করপোরেশনে নিয়ে নির্যাতন, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে ক্ষমা চাইতে বাধ্য করার চেষ্টা, মব তৈরি করে সাংবাদিকদের মারধর ও হেনস্তার মামলায় আসামিদের গ্রেফতারের দাবিতে মিট দ্যা মহানগর পুলিশ কমিশনার কর্মসূচি পালন করেছে গণমাধ্যমকর্মীরা। এ সময় জড়িত ও ইন্ধনদাতারা গ্রেফতার না হওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন সাংবাদিক নেতারা।
রোববার (২৮ সেপ্টেম্বর) দুপুরে সম্মিলিত সাংবাদিক সমাজের উদ্যোগে ধারাবাহিক কর্মসূচির অংশ হিসেবে পুলিশ কমিশনার কার্যালয়ে এ কর্মসূচি পালন করে সাংবাদিক সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীরা।
এ সময় উপ-পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম) তোফায়েল আহমেদ, রংপুর মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সামসুজ্জামান সামু, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আনিছুর রহমান লাকু উপস্থিত ছিলেন।
বক্তব্য রাখেন রংপুর সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি সালেকুজ্জামান সালেক, রংপুর সিটি প্রেস ক্লাবের সভাপতি দৈনিক সমকালের ব্যুরো প্রধান স্বপন চৌধুরী, রংপুর প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি মাহবুব রহমান হাবু, আরপিইউজে ও রংপুর রিপোর্টার্স ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক সরকার মাজহারুল মান্নান, সিটি প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির মানিক, রংপুর রিপোর্টার্স ক্লাবের সিনিয়র সহ-সভাপতি শফিউল করিম শফিক, মাহমুদুল হাসান, নুর ইসলাম চান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম মানিক ও সাংগঠনিক সম্পাদক ফখরুল শাহীন, রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি শরীফা বেগম শিউলি ও সাংগঠনিক সম্পাদক রবিন চৌধুরী রাসেল, বাংলাদেশ ফটো জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন রংপুরের সভাপতি মমিনুল ইসলাম রিপন ও সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আফজাল, টেলিভিশন ক্যামেরা জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন রংপুরের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ডেমি, রংপুর অনলাইন জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের আহ্বায়ক আতিক হাসান ও সদস্য সচিব ফেরদৌস জয় প্রমুখ।
মিট দ্যা পুলিশ কমিশনার কর্মসূচিতে সাংবাদিক নেতারা অভিযোগ করেন, সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ও প্রমাণ উপস্থাপন করে মামলা দেয়া হয়েছে। ঘটনার আট দিন হলেও মাত্র দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। চারজনকে আইওয়াশ বদলি করা হয়েছে সিটি করপোরেশন থেকে। অন্য আসামিরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মব তৈরির চেষ্টা করছে। ফেসবুকে লাইভ করছে। কর্মসূচির নামে মানববন্ধনে দাঁড়িয়ে সাংবাদিকদের হুমকি-ধামকি দিচ্ছে আসামিরা। মিথ্যাচার, অপপ্রচার ও বিষোদগার করে পরিস্থিতি ঘোলাটে করছে। সরকারি চাকরিবিধি অমান্য করে রংপুর সিটি করপোরেশনের কতিপয় কর্মকর্তা-কর্মচারী কর্তৃক নাগরিকদের জিম্মি করে নাগরিক সেবা বন্ধ করে দেয়া ও নাগরিক সেবা বন্ধ করে দেয়ার হুমকি দিচ্ছে। ঘটনার তদন্ত কমিটি গঠনের কোনো খবর নাই। মাত্র চারজনকে আইওয়াশ বদলি করে দায় সেরেছে সিটি করপোরেশন। এসব ঘটনার ব্যবস্থা সাত দিনের মধ্যে দৃশ্যমান দেখতে চান সাংবাদিক নেতারা।
এ সময় সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ আগামী ৭ অক্টোবর পর্যন্ত ধারাবাহিক কর্মসূচির কথা জানান পুলিশ কমিশনারকে। সেই অনুযায়ী ২৮ সেপ্টেম্বর মহানগর পুলিশ কমিশনারের সাথে বৈঠক হয়। আগামী ২৯ সেপ্টেম্বর জেলা প্রশাসক, ৩০ সেপ্টেম্বর বিভাগীয় কমিশনার, ১ অক্টোবর ডিআইজি ও র্যাব-১৩ সিও, ৪ অক্টোবর সেনা ক্যাম্প ইনচার্জের সাথে সাক্ষাৎ, ৫ ও ৬ অক্টোবর সকল রাজনৈতিক দল, পেশাজীবী ও সুশীল সমাজের সংগঠনের নেতৃবৃন্দের সাথে গণসংযোগ এবং ৭ অক্টোবর দাবি আদায়ে প্রেস ক্লাব চত্বরে বেলা ১১টায় সংহতি সমাবেশ হবে।
বৈঠক শেষে মহানগর পুলিশ কমিশনার মো: মজিদ আলী জানান, সিনিয়র সাংবাদিক লিয়াকত আলী বাদলের সাথে যে ঘটনা ঘটেছে তা কোনোভাবেই কাম্য নয়। এ ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতারের পাশাপাশি অভিযোগপত্র দাখিলের প্রক্রিয়া চলছে। আমরা আইনের এমন প্রয়োগ করতে চাই ভবিষ্যতে যেন কেউ এ ধরনের ধৃষ্টতা দেখানোর সাহস না পায়।
উল্লেখ্য, গত ১৭ সেপ্টেম্বর লিয়াকত আলী বাদল দৈনিক সংবাদে ‘রংপুরে জুলাই যোদ্ধার নামে অটোর লাইসেন্স, পাঁচ কোটি টাকার বাণিজ্যের পাঁয়তারা’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশ করে। পরে ২১ সেপ্টেম্বর ওই সংবাদ প্রকাশের জেরে দৈনিক সংবাদ, একুশে টেলিভিশন ও বাংলা ট্রিবিউনের সিনিয়র রিপোর্টার এবং রংপুর সম্মিলিত সাংবাদিক সমাজের সদস্য সচিব লিয়াকত আলী বাদলকে কাচারী বাজার থেকে জুলাই রাজবন্দির পরিচয়ে রকি নামের এক যুবকের নেতৃত্বে অপহরণ করে নিয়ে সিটি করপোরেশনেরে এনে নির্যাতন করা হয়। পরে নতুন ভবনের দোতলায় প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে নিউজের জন্য ক্ষমা চাইতে বাধ্য করার চেষ্টা করা হয়। এ ঘটনার খবর পেয়ে সাংবাদিকরা ছুটে গেলে সিটি করপোরেশনের এক শ্রেণির কর্মকর্তা-কর্মচারী প্রধান ফটক আটকে দিয়ে মব তৈরি করে সাংবাদিকদের মারধর ও হেনস্তা করেন।
ঘটনায় সাংবাদিক বাদল সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা উম্মে ফাতেমা, ট্রেড লাইসেন্স শাখার প্রধান মিজানুর রহমান মিজু, সাবেক কাউন্সিলার লিটন পারভেজ, সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা তম্ময় কুমার সরকারসহ ১৪ জনের নামে মামলা দায়ের করেন। এ ঘটনায় প্রতিবাদে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছে সাংবাদিকরা।
এদিকে ঘটনায় জড়িত রতন ও সাগর নামে দুই আসামিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এরমধ্যে রতন ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। বদলি করা হয়েছে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাসহ চারজনকে। তাদের বিরুদ্ধে মামলা থাকলেও বিভাগীয় কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। জড়িত সিটি করপোরেশনের অপর কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি কর্তৃপক্ষ। উল্টো সরকারি চাকরি বিধিমালা ভেঙে নগরবাসীকে জিম্মি করে নাগরিক সেবা বন্ধ করে দেয়া ও হুমকি দিলেও তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি প্রশাসন।