ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জেলা সদরের গুরুত্বপূর্ণ আসন হিসেবে বিবেচিত ফরিদপুর-৩ এ বিএনপির সম্ভাব্য দলীয় প্রার্থী হিসেবে ময়েজমঞ্জিলের প্রথম নারী কারাবন্দী চৌধুরী নায়াব ইউসুফের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। সাবেক মন্ত্রী ও একই আসন থেকে বারবার নির্বাচিত সংসদ সদস্য চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফের জ্যেষ্ঠ কন্যা নায়াব ইউসুফ ভোটের মাঠে এবারই প্রথম একজন প্রার্থী হলেন।
এর আগে ২০১৮ সালে বাবা চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ এ আসনের প্রার্থী হয়ে যখন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছিলেন, তখন তিনি রাজনৈতিক মামলায় প্রথমবারের মতো ঘরছাড়া হন। নির্বাচনের পর ওই মামলায় হাজিরা দিয়ে জেল খাটেন।
বিএনপি দলীয় প্রার্থী হিসেবে তার নাম ঘোষণার পর নেতাকর্মী ও সমর্থকদের ঢল নামে ময়েজমঞ্জিলে। তাদের কেউ ফুলের মালা পরিয়ে অভিনন্দন জানান, কেউ ফুলের তোড়া উপহার দেন। তবে হাই কমান্ডের নিষেধাজ্ঞা থাকায় কড়াকড়িভাবে এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে আনন্দ মিছিল বা মিষ্টি বিতরণের মতো কর্মসূচি।
চৌধুরী নায়াব ইউসুফ তার এ মনোনয়ন লাভের কৃতিত্ব ফরিদপুরের সাধারণ মানুষের উল্লেখ করে বলেছেন, ‘আমার সবচাইতে বড় কৃতজ্ঞতা ফরিদপুরের আপামর জনসাধারণের প্রতি।’
তার মতে, তাদের সমর্থন ও ভালবাসা তাকে এ অর্জন দিয়েছে।
তিনি বলেন, ‘এ মনোনয়ন আমার একার অর্জন নয়; এ মনোনয়ন আপনাদের, যারা একটি পরিবর্তনের আশায় বুক বেঁধেছেন। ফরিদপুর আমার ভূমি, আমার শেকড়। এ মাটির প্রতিটি ধূলিকণার সাথে আমার নিবিড় সম্পর্ক। আমি আপনাদের সুখ-দুঃখের অংশীদার। আমি বুঝি আপনাদের আকাঙ্ক্ষা। আমি বুঝি এ মাটির গন্ধ, এ মাটির দাবি।’
চৌধুরী নায়াব ইউসুফ বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য স্পষ্ট, আমরা একটি প্রতিহিংসার রাজনীতিমুক্ত, শান্তিময় ও সমৃদ্ধ ফরিদপুর গড়তে চাই। আমরা এমন একটি সমাজ চাই যেখানে তরুণদের জন্য কর্মসংস্থান থাকবে, ব্যবসায়ীরা নির্বিঘ্নে ব্যবসা করবে, কৃষকরা তাদের ফসলের ন্যায্যমূল্য পাবে এবং প্রতিটি নাগরিক পাবে ন্যায়বিচার ও সম্মান।’
বক্তব্যের শুরুতেই তিনি উল্লেখ করেন, ‘এ আবেগঘন মুহূর্তে, আমি গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি স্বাধীনতার ঘোষক, শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে। আমার ওপর আস্থা রাখার জন্য আমি আমাদের আপসহীন নেত্রী, ‘গণতন্ত্রের মা’ দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া এবং দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জনাব তারেক রহমানের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।’
তিনি বলেন, ‘কৃতজ্ঞতা জানাই ফরিদপুরের বিএনপি এবং সকল অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের প্রতিটি নেতাকর্মীকে, যাদের অক্লান্ত পরিশ্রম ও ত্যাগ আমাকে এ পর্যন্ত আসতে শক্তি জুগিয়েছে। আমি কৃতজ্ঞ আমার পরিবারের প্রতি। আমার দাদা এবং আমার বাবার কাছেই আমি জনসেবার প্রথম শিক্ষা পেয়েছি। ফরিদপুরের মানুষের প্রতি তাদের যে ভালোবাসা আমি দেখেছি, তা-ই আমার চলার পথের পাথেয়।’
এ সময় তিনি আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন শুধু একজন প্রতিনিধি নির্বাচনের নির্বাচন নয় বরং হারানো অধিকার ফিরিয়ে আনার সংগ্রাম বলেও মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, ‘ধানের শীষ আজ কেবল একটি প্রতীক নয়, এটি দেশের গণতন্ত্র ও মানুষের ভোটাধিকার পুনরুদ্ধারের প্রতীক। তাই আমি আপনাদের কাছে উদাত্ত আহ্বান জানাই- আসুন, আমরা সকল ভেদাভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধ হই। আমরা কোনো হিংসা, হানাহানি বা সংঘাতে জড়াবো না। আমাদের শক্তি হবে আমাদের ঐক্য এবং আমাদের ব্যালট। যে কোনো উসকানির মুখেও আমরা ধৈর্য ধারণ করবো। ইনশাআল্লাহ, নির্বাচনের দিন আপনারা সকলে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ধানের শীষে আপনাদের পবিত্র আমানত (ভোট) প্রদান করে জনগণের বিজয় নিশ্চিত করবেন। আপনাদের দোয়া ও সমর্থনই আমার একমাত্র শক্তি।’
 


