টানা ছুটিতে শ্রীমঙ্গলে পর্যটকের ঢল

প্রকৃতির এ অন্তসৌন্দর্য অনুভব করতে প্রতিটি স্পটে প্রকৃতি প্রেমীদের উপস্থিতি রয়েছে ঢের। এছাড়া স্থানীয় জিনিসপত্র কেনাকাটা করতে দোকানগুলোতেও ভিড় জমিয়েছে পর্যটকরা। বৈচিত্র্যপূর্ণ পাহাড়ি ত্রিপুরা-মনিপুরী সম্প্রদায়ের হাতের তৈরি কাপড়ের প্রতি বেশ আকর্ষণ দেখা যায় দর্শনার্থীদের।

শ্রীমঙ্গল (মৌলভীবাজার) সংবাদদাতা
শ্রীমঙ্গলের দর্শনীয় স্থানে পর্যটকদের ভিড়
শ্রীমঙ্গলের দর্শনীয় স্থানে পর্যটকদের ভিড় |ছবি : নয়া দিগন্ত

ঈদের লম্বা ছুটিতে শ্রীমঙ্গলসহ মৌলভীবাজারের বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানে ঢল নেমেছে পর্যটকদের। টানা ছুটিতে দেশী-বিদেশী হাজারো পর্যটকে মুখরিত হয়ে উঠেছে বিনোদন কেন্দ্রসহ পর্যটনের স্থানগুলো।

জানা যায়, ঈদুল ফিতরের দিন থেকেই চায়ের রাজধানী খ্যাত দেশের অন্যতম পর্যটন এলাকা শ্রীমঙ্গলে পর্যটক আসতে শুরু করেন। মৌলভীবাজার জেলায় ৯৩টি চা-বাগানসহ শতাধিক পর্যটন স্পট রয়েছে। ইতোমধ্যে এখানের শতাধিক হোটেল-রিসোর্ট ও কটেজগুলো অতিথিদের আগমনে ভরপুর হয়ে উঠেছে।

এদিকে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, হোটেল-রিসোর্টের কোনো কক্ষ ঈদের পরদিন থেকে খালি নেই। ফলে রাত্রিযাপনের জন্য পর্যটকদের কিছুটা ভোগান্তিতেও পড়তে হয়েছে।

হাওর-নদী, পাহাড়-টিলা পরিবেষ্টিত শ্রীমঙ্গলের প্রকৃতি একেক ঋতুতে একেক রূপের জানান দেয়। চা গাছে নতুন কুঁড়িতে সৌন্দর্যের মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে সবুজ গালিচা মোড়ানো চা-বাগানগুলো। প্রকৃতির এমন সান্নিধ্য পেতে দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসছেন পর্যটকরা। বিশেষ করে শ্রীমঙ্গলে সবুজের বিশাল এ বিস্তারে ঘেরা সারি সারি চা বাগানের একটি পাতা, দুটি কুঁড়ির অপূর্ব সম্মিলন যেন দৃষ্টি সীমানা জুড়ে প্রশান্তি দেয় সবার।

শ্রীমঙ্গল বধ্যভূমির-৭১ সুম্মখ থেকে শুরু করে পূর্ব দিকে পুরো এলাকা জুড়ে রয়েছে চা বাগান। আর বাগানের মাঝ দিয়ে বয়ে চলা পিছ ঢালা পথটি যেন আরো কয়েকগুন সৌন্দর্য বাড়িয়ে দিয়েছে। সবুজ গালিচা মোড়ানো আশপাশের পাহাড় আর মনকাড়া পাহাড়ি ঢালু পথ থেকে চারদিকে দেখা মেলে সবুজ আর সবুজের সমারোহ। সেই সাথে পাহাড়ি পথ বেয়ে চা বাগানের ভেতর দিয়ে নেমে এসেছে ক্ষীণ স্বচ্ছ জলের ছড়া। যা মন জুড়িয়ে দেয় দর্শনার্থীদের।

প্রকৃতির এ অন্তসৌন্দর্য অনুভব করতে প্রতিটি স্পটে প্রকৃতি প্রেমীদের উপস্থিতি রয়েছে ঢের। এছাড়া স্থানীয় জিনিসপত্র কেনাকাটা করতে দোকানগুলোতেও ভিড় জমিয়েছে পর্যটকরা। বৈচিত্র্যপূর্ণ পাহাড়ি ত্রিপুরা-মনিপুরী সম্প্রদায়ের হাতের তৈরি কাপড়ের প্রতি বেশ আকর্ষণ দেখা যায় দর্শনার্থীদের।

শুক্রবার ঢাকার নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের জার্নালিজম ও নিউ মিডিয়া বিভাগের শিক্ষক ইমশিয়াত শরিফ তার বিভাগের ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে বেড়াতে আসেন। এ সময় তিনি নয়া দিগন্তকে বলেন, ‘ঢাকা শহরের কোলাহল ছেড়ে এ রকম সুন্দর জায়গা এবং প্রকৃতির কাছাকাছি এসে মানসিক প্রশান্তি অনুভব করছি।’

সাইফুল আলম ও এ্যানি দম্পতি জানান, ‘শীতের দিনে ঘোরার মজাই আলাদা। তবে গরমের দিনে কিছুটা কষ্ট হয়। তারপরেও শ্রীমঙ্গলে সবুজ চা বাগানের সৌন্দর্য অন্যরকম প্রশান্তি দিয়েছে।’

এদিকে পর্যটন সংশ্লিষ্টরা জানান, শ্রীমঙ্গলে ঈদের দিন থেকে হাজারো পর্যটক আসায় হোটেল, রেস্টুরেন্ট আর চা বাগানে লোকে লোকারণ্য হয়ে উঠেছে। পুরো এলাকা জুড়ে রয়েছে পর্যটকের বিচরণ। এদিকে হোটেলের কক্ষ বুকিং না দিয়ে যারা এসেছে, তাদের কষ্টের মুখোমুখি হতে হয়েছে। অনেকে হোটেলের রুমের জন্য ছুটাছুটি করেছেন। সবাই শ্রীমঙ্গলে অবস্থান করে পুরো জেলা ভ্রমণ করতে চায়।

তারা আরো জানান, শ্রীমঙ্গলসহ মৌলভীবাজার জেলায় পর্যটন স্পটগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো, চা কন্যা ভাস্কর্য, বাইক্কা বিল, হাইল হাওর, বন্যপ্রাণী সেবা ফাউন্ডেশন, বধ্যভূমি-৭১, টি বোর্ডের নিয়ন্ত্রণাধীন টি রিসোর্টি অ্যান্ড টি মিউজিয়াম, মনিপুরি পাড়াসহ সবুজ চা বাগান ও রাবার বাগান, সেভেন লেয়ারের চায়ের স্টল নীলকণ্ঠ, পাঁচ তারকা হোটেল গ্র্যান্ড সুলতান টি রিসোর্ট অ্যান্ড গলফ, লেমন গার্ডেন রিসোর্ট, ফুলছড়া চা বাগানের লাল টিলা, হরিণছড়া গলফ মাঠ, হাইল হাওর, হাকালুকি হাওর, মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত, লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান, বীরশ্রেষ্ট হামিদুর রহমানের স্মৃতিসৌধ, হাম হাম জলপ্রপাত, মাধবপুর লেক, আনারস ও লেবু বাগান উল্লেখযোগ্য।

দিনভর পর্যটকরা ট্যুরিস্ট জীপ, বাস, মাইক্রোবাস, প্রাইভেট কার, সিএনজিচালিত অটোরিকশা, পিকআপভ্যান ও মোটরসাইকেলে হৈ-হুল্লোড়ে ছুটে চলছেন এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায়।