ময়মনসিংহে এনসিপির জুলাই পদযাত্রা

৫ আগস্টের মধ্যে জুলাই সনদ হতেই হবে : নাহিদ ইসলাম

তিনি বলেন, ‘আমরা জুলাই পদযাত্রায় নেমেছি। কিন্তু আকাঙ্ক্ষিত বাংলাদেশ এখনো পাইনি। আমি বিশ্বাস করি, ময়মনসিংহবাসী যদি আমাদের পাশে থাকে, তাহলে আমরা সেই দেশ অচিরেই নির্মাণ করতে পারবো।’

সাইফুল মাহমুদ, ময়মনসিংহ অফিস

Location :

Mymensingh
ময়মনসিংহে এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ
ময়মনসিংহে এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ |নয়া দিগন্ত

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, ‘দেশে সংস্কার প্রক্রিয়া চলছে। ঐকমত্য কমিশন বলেছে, জুলাই সনদ হবে। আমরাও বলেছি, জুলাই সনদ হতেই হবে এবং সেটা ৫ আগস্টের মধ্যে। জুলাই সনদের জন্য দ্রুত সময়ের মধ্যে আমরা ঐক্যবদ্ধ হতে চাই।’

তিনি বলেন, ‘আমরা জুলাই পদযাত্রায় নেমেছি। কিন্তু আকাঙ্ক্ষিত বাংলাদেশ এখনো পাইনি। আমি বিশ্বাস করি, ময়মনসিংহবাসী যদি আমাদের পাশে থাকে, তাহলে আমরা সেই দেশ অচিরেই নির্মাণ করতে পারবো।’

এ সময় তিনি দুর্নীতি, চাঁদাবাজ ও সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানান।

সোমবার (২৮ জুলাই) বিকেলে ‘দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা’র অংশ হিসেবে ময়মনসিংহ নগরীর টাউন হল চত্বরে আয়োজিত সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।

এনসিপি নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘আপনারা জনগণের পাশে দাঁড়ান, জনগণের সমস্য সমাধান করুন, দুর্নীতি, সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলুন।’

তিনি বলেন, ‘ভয় পাবেন না কোনো চাঁদাবাজ, দুর্নীতিবাজ ও দখলদারকে। দুঃখজনক হলেও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিভিন্ন নেতাকর্মীকে যুক্ত করা হয়েছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নাম ভাঙিয়ে, এনসিপির নাম ভাঙিয়ে চাঁদাবাজি করার চেষ্টা করা হচ্ছে। আমরা স্পষ্ট ভাষায় বলে দিয়েছি, চাঁদাবাজি সন্ত্রাসীর বিরুদ্ধে যে সংগ্রাম আমরা শুরু করেছি সেই সংগ্রাম আমরা ঘরের ভেতর থেকে শুরু করব। আমাদের আগামীর আন্দোলন দুর্নীতি ও চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে।’

তিনি বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনসহ দুদক ও পিএসসির নিরপেক্ষ নিয়োগের জন্য সাংবিধানিক কমিটি করতে হবে। নিরপেক্ষ প্রশাসন, নিরপেক্ষ পুলিশ ও নিরপেক্ষ আদালত আমরা প্রত্যাশা করি। এই প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারগুলো আমাদের প্রয়োজন। ইনশাআল্লাহ ৫ আগস্টের মধ্যে জুলাই সনদ ও জুলাই ঘোষণাপত্র আদায় করতে পারবো।’

আগামী ৩ আগস্ট ঢাকায় এনসিপির মহাসমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে বলেও পুনরায় জানান তিনি।

এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, ‘আমরা আগে সংস্কার ও গণহত্যার বিচার চাই। তারপর নির্বাচন দিতে হবে। বিচার ও সংস্কার ছাড়া বাংলার জনগণ নির্বাচন মেনে নেবে না। আমরা চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে কথা বলি। আমরা চাই নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত। কিন্তু আপনারা চান চাঁদাবাজি। এই জিনিসগুলো আমরা বরদাস্ত করবো না। আমাদের লাখ লাখ নেতাকর্মীর দরকার নাই। এনসিপি চাঁদাবাজদের অভয়াশ্রম হবে না। দুর্নীতি যারাই করবে এনসিপি তাদের ছাড় দেবে না। যদি এনসিপির নেতা-কর্মীরাও দুর্নীতির সাথে যুক্ত হন, দল তাদের বিরুদ্ধেও মাঠে নামবে। আমাদের আগামীর আন্দোলন দুর্নীতি ও চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে।’

এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসিরুদ্দীন পাটোয়ারী অভিযোগ করেন, ময়মনসিংহের প্রশাসন জুলাই শহীদ ও আহতদের পরিবারের খোঁজখবর নিচ্ছে না, তাদের কথা শুনছে না। তিনি হুঁশিয়ারী দিয়ে বলেন, ‘ভবিষ্যতে কোনো শহীদ বা আহতদের পরিবারের সদস্যদের যদি আপনাদের চেয়ারের সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়, তাহলে ছাত্র-জনতা সে চেয়ার নিয়ে আসবে।’

তিনি বলেন, ‘জুলাই শহীদদের রক্তের উপর দাঁড়িয়ে আমরা যখন একটি নতুন বাংলাদেশের যাত্রা করতে যাচ্ছি, সেই আহতদের স্বপ্ন, শহীদদের স্বপ্ন আমরা রচনা করতে যাচ্ছি, সেখানে দেখতে পাচ্ছি একটি দল ওয়াকআউট করছে। আপনারা শহীদদের রক্তের সাথে ওয়াকআউট করতে পারেন না।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের সামনে পুরো বাংলাদেশের একটিই লক্ষ্য সেটি হলো, বাংলাদেশের সংস্কার। এই মুহূর্তে দরকার, বিচার আর সংস্কার।’

এনসিপির সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব ডা: তাসনিম জারা বলেন, ‘দেশ যেন একটা পরিবারের কাছে কুক্ষিগত না থাকে, সেজন্য সংস্কার প্রয়োজন, নতুন সংবিধান প্রয়োজন।’

সামান্তা শারমিন বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশকে নতুন করে সাজাতে চেয়েছিলাম। জুলাই পদযাত্রার প্রথম ১৫ দিন দ্বিধাদ্বন্দ্ব ও ঝামেলা ছাড়াই পদযাত্রা করেছি। কিন্তু এখন এনসিপি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘জুলাই ঘোষণাপত্র ও সনদের আইনগত ভিত্তি থাকতে হবে। এ নিয়ে কোনো টালবাহানা চলবে না।’

এছাড়াও এনসিপির সদস্য সচিব আক্তার হোসেন, শহীদ সাগরের পিতা আসাদুজ্জামান, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদিল, যুগ্ম সদস্য সচিব ও ময়মনসিংহ জেলা কমিটির প্রধান সমন্বয়কারী জাবেদ রাসিন, কেন্দ্রীয় নেতা আবুল বাসারসহ কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখবেন।

এর আগে বিকেল ৩টার দিকে এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ জামালপুর থেকে ময়মনসিংহে পৌঁছে স্থানীয় একটি হোটেলে ময়মনসিংহে জুলাই অভ্যুত্থানে নিহত শহীদ পরিবারের সাথে মতবিনিময় করেন। এসময় তাদের খোঁজখবর নেন। সেখান থেকে নেতৃবৃন্দ নগরীর ত্রিশাল বাসস্ট্যান্ড মহিলা কলেজের সামনে শহীদ সাগর চত্বরে শ্রদ্ধা জানান। পরে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির মধ্যে পদযাত্রা সহকারে নগরীর সি কে ঘোষ রোড, রামবাবু রোড, নতুন বাজার ও জিলা স্কুল মোড় হয়ে টাউন হল প্রাঙ্গণে সমাবেশে যোগ দেন।