গাজীপুরে অভিযান চালিয়ে বিক্রি নিষিদ্ধ বিপুল পরিমাণ ঘোড়ার গোশত জব্দ করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এ সময় ৩৭টি রোগাক্রান্ত, ৮টি জবাইকৃত ঘোড়া জব্দ করা হয়। জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ইশতিয়াক আহম্মেদ অভিযানে নেতৃত্ব দেন।
মঙ্গলবার (৪ নভেম্বর) দিবাগত রাত সাড়ে ১০টার দিকে জেলার হায়দারাবাদ এলাকার স্থানীয় কসাইখানায় গাজীপুর জেলার প্রশাসন, প্রাণিসম্পদ অধিদফতর, র্যাব-১ ও পুলিশ যৌথভাবে এ অভিযান চালান। এ সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতি টের পেয়ে কারখানার মালিক শফিকুল ইসলাম (৪৫) ও তার সহযোগীরা পালিয়ে যান।
স্থানীয়রা জানায়, শফিকুল ইসলামের বাবা জয়নাল আবেদীন হায়দারাবাদ (রথখলা) মৌলভী বাড়ির পাশেই একটি বাড়ি ভাড়া নিয়ে এক বছর ধরে নিয়মিতভাবে ঘোড়া কিনে জবাই করতেন। এরপর নিষিদ্ধ এ ঘোড়ার গোশত বিভিন্ন উপায়ে রাজধানীর উত্তরাসহ দেশের নানা জেলায় সরবরাহ করতেন। প্রতিদিন রাতে ৩০ থেকে ৪০টি ঘোড়া জবাই করত শফিকুল। সে গোশত সারাদেশে পাঠাত। রাতে নিয়মিত ঘোড়া জবাইয়ের শব্দ, দুর্গন্ধ ও পরিবেশ দূষণে এলাকাবাসী অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছিলেন। রাতভর জবাইয়ের পর কাটা–কুটার শব্দে ছোট বাচ্চারা লেখাপড়া করতে পারছিল না। দুর্গন্ধে ঘরেও থাকা যায় না। বিষয়টি নিয়ে বহুবার প্রতিবাদ করা হয়েছে, কিন্তু কিছু হয়নি। ইতোপূর্বেও ঘোড়া জবাইয়ের ঘটনায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে একাধিকবার নিষেধ করা হয়েছে। কিন্তু তারপরও ঘোড়া জবাই করে গোপনে গোশতের ব্যবসা চালানো হচ্ছিল।
গাজীপুর জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ইশতিয়াক আহম্মেদ জানান, এটি সম্পূর্ণ অবৈধ ও দণ্ডনীয় কার্যক্রম। এর আগে বিভিন্ন সময়ে শফিকুলকে তিনবার জরিমানা করা হয়েছিল। তবুও তিনি থামেননি। এবার বড় আকারে অভিযান চালানো হয়েছে। নিষিদ্ধ প্রাণী জবাইয়ের অভিযোগে মামলা করা হবে।
তিনি আরো জানান, জবাই করে গোশত বিক্রির উদ্দেশেই ঘোড়াগুলো এখানে আনা হয়েছিল। যেহেতু ঘটনাস্থল থেকে কাউকে আটক করা যায়নি তাই উদ্ধারকৃত ৩৭টি রোগাক্রান্ত জীবিত, ৮টি জবাইকৃতসহ মোট ৪৫টি জব্দকৃত ঘোড়ার পাঁচ মণ গোশত স্থানীয় একজনের জিম্মায় রাখা হয়েছে। বুধবার সকালে সেগুলোকে গাজীপুর প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের কাছে হস্তান্তর করা হবে। উদ্ধার হওয়া ঘোড়াগুলোর অধিকাংশ রুগ্ন এবং মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর।
র্যাব-১-এর পুলিশ সুপার (এসপি) শহিদুল ইসলাম জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে হায়দারাবাদ (রথখলা) এলাকায় অভিযান পরিচালনা করা হয়। দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় গোপনে ঘোড়া জবাইয়ের কার্যক্রম চলছিল বলে অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছিল। অভিযানে বিপুলসংখ্যক জীবিত ঘোড়া, জবাইয়ের সরঞ্জাম ও গোশত সংরক্ষণের নানা প্রমাণ পেয়েছি।
উল্লেখ্য, চলতি বছরের শুরুর দিকে গাজীপুরের হায়দারাবাদ (রথখলা) এলাকায় শুরু হয় ঘোড়ার গোশত বিক্রি। ধীরে ধীরে বিষয়টি চারপাশে ব্যাপক সাড়া ফেলে। পরে জেল প্রশাসন ভ্রাম্যমাণ আদালত চালিয়ে ঘোড়ার গোশত বিক্রি নিষিদ্ধ করেন। এরপর কয়েকদিন বন্ধ থাকলেও ফের গোপনে কসাইখানায় আবার শুরু হয় ঘোড়ার গোশত বিক্রি।



