উদ্ধার হয়নি রংপুরে লাইনচ্যুত পদ্মরাগ ট্রেন, সারাদেশে যোগাযোগ বন্ধ

রক্ষা পেল ২ হাজার যাত্রী

রংপুরের পীরগাছায় ট্রেনের বগি লাইনচ্যুত হওয়ায় রংপুর লালমনিরহাট এবং কুড়িগ্রাম জেলার সাথে সারা দেশের আন্তঃনগর, লোকাল ও মেইল ট্রেনের যোগাযোগ বন্ধ আছে। উদ্ধার তৎপরতা চালাচ্ছে রেলওয়ে।

সরকার মাজহারুল মান্নান, রংপুর ব্যুরো

Location :

Rangpur
রংপুরে পদ্মরাগ ট্রেন লাইনচ্যুত, এখনো উদ্ধার হয়নি
রংপুরে পদ্মরাগ ট্রেন লাইনচ্যুত, এখনো উদ্ধার হয়নি |নয়া দিগন্ত

রংপুরের পীরগাছায় ট্রেনের বগি লাইনচ্যুত হওয়ায় রংপুর লালমনিরহাট এবং কুড়িগ্রাম জেলার সাথে সারা দেশের আন্তঃনগর, লোকাল ও মেইল ট্রেনের যোগাযোগ বন্ধ আছে। উদ্ধার তৎপরতা চালাচ্ছে রেলওয়ে।

অল্পে রক্ষা পেয়েছেন ট্রেনটির দুই হাজারেরও বেশি যাত্রী।

রেল লাইনের কাঠের স্লিপার পঁচে যাওয়া, পাথর না থাকা এবং দীর্ঘদিন মেরামত না হওয়াকেই দুষছেন যাত্রীরা। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ বলছে তদন্ত চলছে।

মঙ্গলবার ( ১৬ সেপ্টেম্বর) মঙ্গলবার বেলা পৌনে ১টার দিকে ট্রেনটির বগি লাইনচ্যুত হয় পীরগাছা রেলওয়ে স্টেশনের আউটার এলাকায়।

পীরগাছা রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার জানান, মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১২টার দিকে সান্তাহার থেকে লালমনিগামী পদ্মরাগ আপ মেইল ট্রেনটি পীরগাছা স্টেশনে পৌঁছায়। বিরতির পর যাত্রা শুরু করলে আউটার সিগনাল এলাকায় লাইন সেপারেটরের পাত ভেঙ্গে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। এতে ইঞ্জিনের পেছনের তৃতীয় বগি থেকে ৫টি বগি লাইনচ্যুত হয়ে যায়। এতে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। তবে অনেক যাত্রী অভিযোগ করেছেন, তাদের মালামাল খোয়া গেছে। ট্রেনটিতে দুর্ঘটনার সময় ২ হাজার যাত্রী ছিলেন।

স্টেশন মাস্টার আরো জানান, ট্রেন লাইনচ্যুত হওয়ায় সারাদেশের সাথে আন্ত:নগর রংপুর এক্সপ্রেস, লালমনি এক্সপ্রেস, বুড়িমারি এক্সপ্রেস, মেইল ট্রেন দোলনচাপা, করতোয়া, পদ্মরাগ, রামসাগর, কমিউটার এবং নাইনটিন আপ ট্রেনের যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। উদ্ধার কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত এই রুটে এসব ট্রেন চলাচল করতে পারবে না।

এতে রংপুর, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম জেলার সম্পুর্ণ এবং নীলফামারী, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়ের আংশিক যাত্রীরা সিডিউল অনুযায়ী গন্তব্যে পৌছোতে পারবে না।

দুর্ঘটনাকবলিত পদ্মরাগ ট্রেনের বগির যাত্রী নুরবানু জানান, তিনি তার পাশের সিটে ব্যাগ রেখে বাথরুমে যান। তখনই দুর্ঘটনাটি ঘটে। পরে এসে দেখেন ওই যাত্রী আর নেই।

প্রত্যক্ষদর্শী এমদাদুল হক জানান, মূলত যেখানে ঘটনাটি ঘটেছে সেখানকার কাঠের স্লিপার গুলো পঁচে গিয়েছিল। এছাড়াও সেখানে কোনো পাথর ছিল না। রেলের পাতগুলো জং ধরে নষ্ট হওয়ার মতো ছিল। এ কারণেই দুর্ঘটনাটি ঘটেছে।

অপর প্রত্যক্ষদর্শী শামসুল আলম জানান, বাংলাদেশ রেলওয়ের লালমনিরহাট ডিভিশনের মিটার গেজগুলো বহু বছর ধরে মেরামত করা হয় না। বরাদ্দ হলেও রেলওয়ের একশ্রেণীর কর্মকর্তারা সেগুলো লোপাট করেন। যার কারণে এই ভয়াবহ দুর্ঘটনা।

আমিরুল ইসলাম নামের এক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, এই ট্রেনটি তে দুই হাজারেরও বেশি মানুষ ছিল। স্টেশনে না হয়ে বাহিরে যদি ফুল স্পিডে থাকত এই ট্রেনটি। তাহলে অনেক হতাহত হয়ে যেত। এটি এই পথে বড় দুর্ঘটনার একটি সিগনাল। অবিলম্বে এই বিভাগের মিটার গেজগুলোর পাতগুলো পরিবর্তন, কাঠের স্লিপারের পরিবর্তে লোহার স্লিপার এবং পাথর দেয়ার পাশাপাশি ব্রডগেজে রূপান্তর করা না হলে বড় ধরনের মাশুল দিতে হবে।

এদিকে বেলা ৪টার দিকে লালমনিরহাট থেকে একটি উদ্ধারগামী ট্রেন ঘটনাস্থলে আসে। প্রায় দেড় ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে দুর্ঘটনা কবলিত বগিগুলোর সাম্যের একটি বগি উদ্ধার করে কাউনিয়া রেলওয়ে জংশনে নিয়ে যায়। এরপর সন্ধ্যা সোয়া ৬টায় লাইনচ্যুত বগিগুলোকে উদ্ধার করতে পার্বতীপুর থেকে একটি উদ্ধার ট্রেন ঘটনাস্থলে আসে। সন্ধ্যা ৭টার দিকে এ রিপোর্ট লেখার সময় পর্যন্ত উদ্ধারকারী ট্রেনটি সেখানে অবস্থান করছিল। কিভাবে উদ্ধার করা যায় সেটি নিয়ে বিভিন্ন ধরনের কাজকর্ম চালাচ্ছিলেন রেলওয়ের উদ্ধারকারী টিম।

বাংলাদেশ রেলওয়ে লালমনিরহাট ডিভিশনের ব্যবস্থাপ আবু হেনা মুস্তফা আলম জানান, পীরগাছা রেলওয়ে স্টেশনের আউটার এলাকায় মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১২টায় পদ্মরাগ ট্রেনটির ৫টি বগি লাইনচ্যুত হয়। এতে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।

তিনি আরো জানান এরই মধ্যে লালমনিরহাট ডিভিশনের পরিবহন ব্যবস্থাপক আব্দুল্লাহ আল মামুনের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারা ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকে উদ্ধার তৎপরতার পাশাপাশি কেন দুর্ঘটনা ঘটলো সেটি তদন্ত করছেন।

তিনি জানান, প্রাথমিকভাবে লাইনে ত্রুটি ছিল কিনা অথবা বগিতে ত্রুটি ছিল কিনা অথবা সিগন্যাল ত্রুটি ছিল কিনা এই তিনটিকে মুখ্য ধরে বেশ কিছু বিষয় নিয়ে তদন্ত কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।

রেলের এই কর্মকর্তার আশা মঙ্গলবার রাত নয়টা নাগাদ উদ্ধার কার্যক্রম সমাপ্ত হবে। তিনি জানান দুটি আন্তঃনগর ট্রেন বগুড়ায়, দুটি আন্তঃনগর ট্রেন রংপুরে, একটি লালমনিরহাট রেলওয়ে স্টেশনে আটকা পড়ে আছে। এছাড়াও রংপুর লালমনিরহাট এবং কুড়িগ্রাম থেকে যাতায়াতকারী সকল ধরনের মেইল এবং লোকাল ট্রেইন বন্ধ রয়েছে।

পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য বলছে, বাংলাদেশ রেলওয়ের ২ হাজার ৮০০ কিলোমিটার রেলপথের মধ্যে পশ্চিমাঞ্চলেই আছে ১ হাজার ৪২৭ কিলোমিটার রেলপথ। যার অধিকাংশই মিটার গেজের এবং সব মিটার গেজগুলোর অবস্থা করুন।

রংপুরের ডেপুটি কমিশনার মোহাম্মদ রবিউল ফয়সাল জানান, ঘটনার সাথে সাথেই উপজেলা প্রশাসন এখানে উদ্ধার তৎপরতা চালাচ্ছে রেলওয়েকে সাথে নিয়ে। এই ঘটনার কঠোর তদন্ত হবে এবং এ ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

রংপুর বিভাগীয় কমিশনার মো: শহিদুল ইসলাম জানান, ঘটনার সাথে সাথেই রেলওয়ে সাথে সমন্বয় করে সেখানে উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনা করছি। যত দ্রুত সম্ভব আশা করছি উদ্ধার তৎপরতা শেষ হবে এবং লাইন আবারো ট্রেন চলাচল শুরু হবে।

তিনি বলেন, এই ঘটনার সাথে দাড়ি গাফিলতি থাকবে তার বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ ঘটনায় হতাহত না হয় আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন তিনি।