টানা ভারী বৃষ্টিতে কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফ উপজেলায় জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। গত কয়েকদিনের বিরতিহীন বর্ষণে বিভিন্ন নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। বসতবাড়ি, দোকানঘর থেকে শুরু করে রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোর হাজারো অস্থায়ী ঘরবাড়ি পড়েছে চরম ঝুঁকিতে। বিদ্যুৎ ও ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে অনেক এলাকা।
টেকনাফ উপজেলার রঙ্গিখালী লামারপাড়ায় বৃষ্টির পানি ঢুকে পড়েছে লোকালয়ে। ঘরের মধ্যে হাঁটুপানি জমে যাওয়ায় ঘরছাড়া হয়েছে অনেক পরিবার। স্থানীয়রা জানায়, অল্প সময়ের বৃষ্টিতেই এমন জলাবদ্ধতা বিরল ঘটনা।
উখিয়ার পালংখালীর গয়ালমারা এলাকায় বৃষ্টির তোড়ে উপড়ে পড়েছে বিশাল গাছ। এতে ওই অঞ্চলের বিদ্যুৎ সরবরাহ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে। দীর্ঘ সময় ধরে বিদ্যুৎহীন অন্ধকারে থাকতে হচ্ছে স্থানীয়দের। ইন্টারনেট সংযোগ না থাকায় যোগাযোগ ব্যবস্থাও অচল হয়ে পড়েছে।
সবচেয়ে বিপদে পড়েছে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অবস্থানরত লাখো শরণার্থী। বালুখালী, রহমতের বিল, কুতুপালং বড়ুয়া পাড়া, দৌছরী, মাছকারিয়া, লম্বাশিয়া, ময়নাঘোনা ও কুতুপালং মেগা ক্যাম্পসহ আশপাশের এলাকাগুলোতে ভূমিধসের আশঙ্কায় মাইকিং করেছে প্রশাসন। ক্যাম্পের বহু ঘর ধসে পড়ার শঙ্কায় রাত কাটাচ্ছেন রোহিঙ্গারা।
স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছে, ভূমিধসপ্রবণ পাহাড়ি এলাকায় বিশেষ সতর্কতা জারি করা হয়েছে। অতিরিক্ত বৃষ্টির কারণে পাহাড়ি মাটি নরম হয়ে গেছে, যেকোনো মুহূর্তে ঘটতে পারে বড় দুর্ঘটনা।
রোহিঙ্গারা বলছেন, দীর্ঘদিন ধরে তারা গাদাগাদি করে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। অস্থায়ী আশ্রয়স্থলগুলোতে বৃষ্টির পানি ঢুকে পড়ছে, ছাউনি ভিজে যাচ্ছে, খাবার ও জ্বালানি সঙ্কট দেখা দিয়েছে। কোথাও ঠাঁই নেই, একে অপরের গা ঘেঁষে কোনোরকমে টিকে আছেন তারা।
রোহিঙ্গা যুবক মো: জুবায়ের বলেন, এই ছোট ছোট ঘরগুলোর অবস্থা এমন যে হালকা কাদা বা বৃষ্টির চাপে যেকোনো সময় ভেঙে পড়ে যেতে পারে। অনেক ঘরের মাটি সরে গেছে। রাতের আঁধারে বাচ্চা নিয়ে ঘরে ঘোমানো ভয় লাগে।
স্থানীয় বাসিন্দা ও মানবাধিকারকর্মীরা বলছেন, আশ্রয়হীন, কর্মহীন এই বিশাল জনগোষ্ঠীর জন্য এখনো দীর্ঘমেয়াদী কোনো টেকসই পরিকল্পনা নেয়া হয়নি। বাংলাদেশের ওপর অতিরিক্ত চাপ বাড়ছে প্রতিনিয়ত।
উদ্বেগ প্রকাশ করে একজন প্রবীণ বাসিন্দা বলেন, যদি এখনই এই মানুষগুলোর নিজ দেশে প্রত্যাবাসনের কোনো বাস্তব ব্যবস্থা না করা হয়, তাহলে আগামী ১০ বছরে তাদের অবস্থা কী হবে—তা আল্লাহ ছাড়া কেউ জানে না।
উখিয়া ও টেকনাফের প্রশাসন জানিয়েছে, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় জরুরি প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে এবং সম্ভাব্য দুর্যোগের সময় দ্রুত সাড়া দিতে তৈরি রাখা হয়েছে উদ্ধারকারী দল।
তবে স্থানীয়রা বলছেন, শুধুমাত্র সতর্কতা যথেষ্ট নয়, চাই স্থায়ী সমাধান। এমতাবস্থায়, মানবিক বিবেচনায় এবং জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া দ্রুত বাস্তবায়নের দাবি নতুন করে জোরালো হয়ে উঠেছে। সেই সাথে টেকসই অবকাঠামো উন্নয়ন ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার জন্য সরকারের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা বাস্তবায়নের আহ্বান জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ ও অধিকারকর্মীরা।