পানি সম্পদ এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, শিল্প কারখানায় ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলন ও ব্যবহারে নির্ধারিত মূল্য পরিশোধ করতে হবে এবং এ পানিকে পুনঃব্যবহার যোগ্য করতে হবে।
শনিবার বিকেলে তিনি গাজীপুর পিটিআই মিলনায়তনে পানি ফোরাম আয়োজিত ‘নদী ও জলাভূমি সিম্পোজিয়াম-২০২৫’ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
পরিবেশ উপদেষ্টা বলেন, আমরা ঢাকার চারটি নদী দখল এবং দূষণমুক্ত করার কর্মপরিকল্পণা চূড়ান্ত করে চুক্তি করে দেয়ার চেষ্টা করব। আমাদের সময় অন্যান্য নদী সমূহের কাজ শুরু করা হবে না। কিন্তু আশা করি তুরাগ নদী পুনঃউদ্ধারের কাজটা আমাদের সময়ে শুরু হয়ে যাবে। এজন্য আমাদেরকে বিশ্ব ব্যাংক সর্বাত্মক সহযোগিতা দিচ্ছে। গাজীপুরের গাছা খাল, লবনদহ, পুকুর উদ্ধার ও ৫ আগস্টের পর দখল হওয়া ও ঝামেলা কম এমন দখল হওয়া বনভূমি উদ্ধার। এই কয়েকটি কাজ আমরা আগে শেষ করি।
গাজীপুরের জেলা প্রশাসক নাফিসা আরেফীনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে ও বাংলাদেশ রিভার ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ মনির হোসেনের সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন গাজীপুর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আব্দুল মান্নান, পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান প্রকৌশলী নাফিউ সাজ্জাদ, গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ জাহিদুল হাসান, গাজীপুরের পুলিশ সুপার ড. চৌধুরী যাবের সাদেক, বহুমুখী পাট পণ্য উৎপাদন ও রফতানিকারক সমিতির সভাপতি মো: রাশেদুল করিম মুন্না, কালিয়াকৈর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো: কাউসার আহমেদ, বাংলাদেশ পনি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো: জহির, পরিবেশ অধিদফতর গাজীপুরের উপ-পরিচালক আরেফিন বাদল।
প্রধান অতিথর বক্তব্যে রিজওয়ানা হাসান বলেন, শিল্পখাতে ভূগর্ভস্থ পানি ব্যবহার যেভাবে বাড়ছে, তা শুধু পানির স্তর কমাচ্ছে না, পরিবেশকেও হুমকির মুখে ফেলছে। এ ব্যবস্থাকে টেকসই করতে হলে শিল্প ব্যবহৃত পানির রিইউজ বাধ্যতামূলক করতে হবে। সেজন্য অর্থনৈতিক মূল্য নির্ধারণ জরুরি।
অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, গাজীপুরের উপর দিয়ে পুরাতন ব্রহ্মপুত্র, শীতলক্ষ্যা, বানার, চিলাই, লবণদহ, শালদহ, গোয়ালী, তুরাগ, বংশী, বালু, গোয়াল্লার, পারুলীসহ আরো কয়েকটি ছোট নদ-নদী। রয়েছে অনিন্দ সুন্দর বোলাই, মকশ বিলসহ কয়েকটি স্বাদু পানির জলাধার। দখলে দূষণে বিপর্যস্থ থাকা সত্ত্বেও এখনো এসব নদী-নদী ও জলাধার নিজ জেলাতো বটেই আশাপাশের অঞ্চলগুলোর সমাজ সংস্কৃতিতে প্রভাব রেখে চলেছে। সমৃদ্ধ করছে ভূগর্ভস্থ পানিকেও। সব ধরনের প্যারামিটারে গ্রহণযোগ্য মাত্রা এবং স্বাদের আলাদা ধরনই ছিল এ অঞ্চলের পানির অনন্য বৈশিষ্ট। এছাড়া এসব নদী ছিল মৎস সম্পদের এক বিশাল ভান্ডার।
তারা আরো বলেন, গবেষণায় দেখা গেছে, এই জেলার পানির গুণগত মান কমছে। কোথাও কোথাও পানিতে দ্রবণীয় অক্সিজেনের পরিমান শূন্যের ঘরেও চলে যাচ্ছে। এর জন্য নদী দূষণ সর্বাংশে দায়ী। এই অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য নদী ও জলাভূমিকে রক্ষা করার পথ খুঁজতে আজকের এই আয়োজনটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
পরে প্রধান অতিথি নদীবিষয়ক সংকলন ‘নদী কানন’ এর মোড়ক উন্মোচন করেন।