গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলা মাটি, আবহাওয়া এবং ভূ-প্রকৃতিগতভাবে অনুকূলে থাকায় চাষিরা মিশ্র ফল বাগানে মাল্টা চাষের দিকে ঝুঁকছেন। ব্যাপক সাড়া ফেলেছে উপজেলার মোক্তারপুর ইউনিয়নের ভিটি বাঘুন গ্রামের মো: জামির হোসেনের মাল্টা বাগান। উঁচু শ্রেণির মাল্টা চাষের জন্য এ অঞ্চলের মাটি উপযুক্ত।
সরেজমিনে গিয়ে মিশ্র বাগানের মনোরম দৃশ্য দেখে মুহূর্তেই চোখ জুড়িয়ে যায়। বাগানে সবুজ পাতার মাল্টা গাছে সবুজ রংয়ের শত শত মাল্টা দোল খাচ্ছে। মাল্টা ছাড়াও বাগান জুড়ে রয়েছে বরই, পেয়ারা, লেবু, আমলকি, পেপে, জামবুরা, কলাসহ বাহারি রকমের ফলের চারা। তবে সবচেয়ে বেশি রয়েছে বারি-১ জাতের মাল্টা চারা।
মিশ্র ফল বাগানের স্বত্বাধিকারী চাষি মো: জামির হোসেন প্রতিবেদককে জানান, জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের আওতাধীন লেবু জাতীয় ফসলের সম্প্রসারণ প্রকল্পের আওতায় প্রায় সাত বিঘা জমিতে ২০২০ সালে মাল্টা চাষ শুরু করেন। কৃষি বিভাগ থেকে তিন শ' মাল্টার চারা দিয়ে বাগানের যাত্রা শুরু। পরে কাটিং-কলমের মাধ্যমে চারার পরিমাণ বৃদ্ধি করা হয়। বর্তমানে সাতশর অধিক বারি-১ জাতের মাল্টার চারা রয়েছে।
বছরে তিনবার টিএসপি, পটাশ, ইউরিয়া ও বোরন সার একসাথে মিশিয়ে গাছের চার পাশের মাটিতে প্রয়োগ করতে হয়। গত বছরের তুলনায় গাছ বেশ বড় হওয়ায় এবার বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে।
গাজীপুর জেলা কৃষি অফিসের তথ্য মতে, সবুজ রংয়ের বারি-১ জাতের মাল্টা গাছে মার্চ মাসের দিকে মুকুল আসে এবং সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি থেকে অক্টোবর মাসের মাঝামাঝি সময়ে ফলন শেষ হয়। মাল্টা একটি লাভজনক ফল হওয়ায় কৃষকরা মিশ্র ফল বাগানে মাল্টা চাষ করে থাকেন। লেবু জাতীয় ফসলের সম্প্রসারণ, ব্যবস্থাপনা ও উৎপাদন বৃদ্ধি প্রকল্পের আওতায় কৃষকদের উদ্বুদ্ধকরণের মাধ্যমে মাল্টার আবাদ করা হয়ে থাকে। তার মধ্যে বারি-১ বা পয়সা মাল্টা জাতের পরিমাণ বেশি।
গাজীপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক কৃষিবিদ মো: রফিকুল ইসলাম খান নয়া দিগন্তকে মোবাইল ফোনে জানান, গাজীপুরের মাটি ও আবহাওয়া মাল্টা চাষের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। গাজীপুর জেলায় ১০০ হেক্টরের বেশি জমিতে মাল্টার বাগান রয়েছে। ফল হিসেবে মাল্টা শুধু স্বাদে নয়, পুষ্টিগুণেও সমৃদ্ধ। ফলে বাজারে রয়েছে এর ব্যাপক চাহিদা।
তিনি আরো বলেন, ‘আধুনিক কৃষি পদ্ধতি অনুসরণ করলে ভালো ফলন সম্ভব। আমাদের পক্ষ থেকে মাল্টা চাষের আধুনিক প্রযুক্তি বিষয়ে কৃষকদের নিয়মিত প্রশিক্ষণ ও প্রযুক্তিগত সহায়তা দেয়া হচ্ছে।’