বরিশালের উজিরপুরে সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করেই সন্ধ্যা নদীতে চলছে ইলিশ ধরার মহোৎসব। মৎস্য অধিদফতরের অভিযান টিমকে তোয়াক্কা না করে দিনেরাতে প্রকাশ্যেই চলছে রমরমা ইলিশ বেচাকেনা।
বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) বেলা ১১টা থেকে ১টা পর্যন্ত উজিরপুর পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ড ও উপজেলার বরাকোঠা সন্ধ্যা নদীর পাড় এলাকায় গিয়ে এসব চিত্র দেখা যায়।
সেখানে দেখা যায়, সন্ধ্যা নদীর এলাকায় মৎস্য দফতরের একটি অভিযান টিমের ট্রলার নদীর পাড়ে ভিড়ানো। সেই ট্রলারে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা প্রসেন মজুমদারসহ চারজন বসে গল্প করছেন। সেখানে কিছু সময় অবস্থান করে পাকা সড়ক ধরে ৫০০ মিটার সামনে এগিয়ে যাওয়া হয় বরাকোঠা এলাকায়। সেখানে গিয়ে দেখা মেলে জেলেদের এক মিলনমেলা। ট্রলার নিয়ে নদীতে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছে তাদের একটি গ্রুপ, আরেক গ্রুপ নদীর পাড়ে বসে কারেন্ট জাল ও ট্রলারের ইঞ্জিনের মেরামত করছে। আরেকটু সামনে এগুতেই দেখা যায়, এক জেলে নদী থেকে মাছ ধরে বস্তায় করে নিয়ে যাচ্ছেন। তবে সাংবাদিকদের দেখে তিনি দ্রুত সটকে পড়েন।
এছাড়া বরাকোঠা এলাকার শেষ মাথায় গিয়ে দেখা যায়, অসংখ্য নৌকা সন্ধ্যা নদীতে। তারা কেউ জাল ফেলছে আবার কেউ জাল তোলার কাজে ব্যস্ত সময় পার করছে।
স্থানীয়রা জানায়, মৎস্য অধিদফতরের এবারের অভিযান চলছে ঢিলেঢালাভাবে। অভিযানের আগেও তেমন কোনো প্রচার ও প্রচারণা চালাতে তাদের দেখা যায়নি। এছাড়া জেলেদের নিয়ে তারা কোনো সভা-সেমিনার বা কর্মশালাও করেনি, যার কারণে জেলেরা সাহস করে নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করেই নদীতে ইলিশ শিকারে নামছে।
উপজেলা মৎস্য অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, ইলিশ আহরণে সম্পৃক্ত জেলের সংখ্যা ৩ হাজার ৭৭৭ জন। এরমধ্যে ৬২৫ জন জেলেকে ২৫ কেজি করে ভিজিএফ’র চাল দেয়া হচ্ছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত ১ হাজার ২৮০ জন জেলের মাঝে চাল বিতরণ করা হয়েছে।
এদিকে মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযানের সময় সপ্তাহ অতিবাহিত হতে চললেও অনেক জেলে এখনো ভিজিএফ এর চাল পাননি। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তাদের অনেকে।
একাধিক জেলে বলেন, সরকার ২২ দিন ইলিশ মাছ ধরতে আমাদের নিরুৎসাহিত করছে। এ ২২ দিন ইলিশ ধরা সম্পূর্ণ নিষেধ করেছে। কিন্তু ২২ দিন আমরা কী খাবো সেটা সরকার ভাবেনি। আমাদের জন্য ২৫ কেজি চাল বরাদ্দ থাকলেও আমরা সেটা পাইনি। অথচ নদীতে নামলে আমাদের জেল-জরিমানা করা হচ্ছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বরাকোঠা এলাকার বাসিন্দারা বলেন, ‘অভিযানের প্রথম দিন জেলেরা নদীতে না নামলেও দ্বিতীয় দিন থেকে জেলেরা নদীতে নামছে। জেলেরা সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করেই ইলিশ শিকার করছে। আর সেই সব মাছ জেলেরা বাড়ি থেকেই বিক্রি করছে। ওই মাছগুলো শহরের কিছু চাকরিজীবী ও অভিজাত কিছু লোকজন তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে কিনছে। পরে মাছগুলো ক্রেতাদের বাড়িতে গিয়ে হোম ডেলিভারি দেয়া হচ্ছে।
এ বিষয়ে জানতে উজিরপুর উপজেলা মৎস্য সম্প্রসারণ কর্মকর্তা প্রসেন মজুমদারকে মোবাইলফোনে একাধিকবার কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।