কুমিল্লার চান্দিনায় দুইটি বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের যৌন হয়রানির অভিযোগ উঠেছে। ওই দুই প্রধান শিক্ষকের পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও মহাসড়ক অবরোধ করেছে শিক্ষার্থীরা। পরে উপজেলা ও থানা কমপ্লেক্সে বিক্ষোভ করে তারা।
বৃহস্পতিবার (২১ আগস্ট) দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত উপজেলা সদরের চান্দিনা ডা: ফিরোজা পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সাদিকুল ইসলাম কিরণের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ মিছিল ও মহাসড়ক অবরোধ করে ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। একই সময়ে উপজেলার মহিচাইল জোবেদা মমতাজ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে মাঠে ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আহসান হাবিবের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করেছে শিক্ষার্থীরা।
বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে মহাসড়কের চান্দিনা উপজেলা গেইট এলাকায় অবরোধ করে বিক্ষোভ মিছিল দেয় বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। এতে মহাসড়কের উভয় পাশে প্রায় চার কিলোমিটার জুড়ে যানজট সৃষ্টি হয়। বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের নিয়ন্ত্রণ করতে ছুটে যান উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মোহাম্মদ আশরাফুল হক, চান্দিনা ও দাউদকান্দি সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) তানভীর ফয়সাল, চান্দিনা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) জাবেদ উল ইসলাম সহ চান্দিনা থানা পুলিশ।
চান্দিনা ডা: ফিরোজা পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের ৮ম শ্রেণীর শিক্ষার্থী কারিয়া সুলতানা জানান, প্রধান শিক্ষক আমাদের বাবার বয়সী। তিনি বিভিন্ন সময় আমাদের অশোভনীয় কথা বলেন। যা মুখে প্রকাশ করা যায় না। এমন শিক্ষকের আমরা অপসারণ চাই।
১০ম শ্রেণীর ছাত্রী রোমানা জানান, যে শিক্ষক ছাত্রীদের প্রতি কুদৃষ্টি দেয় এমন শিক্ষক জাতির কলঙ্ক। দ্রুত ওনার অপসারণ না করা হলে আমরা আরো কঠোর কর্মসূচি দেব।
ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সাদিকুল ইসলাম কিরণ জানান, শিক্ষার্থীদের এমন অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা ও কয়েকজন সহকারী শিক্ষকসহ কতিপয় বহিরাগতদের শেখানো। আমার বিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষক যারা নিয়মিত প্রাইভেট পড়ান ও শ্রেণি কক্ষে যথা সময়ে উপস্থিত থাকেন না। তারাই উস্কে দিয়ে আমাকে হেনস্তা করতে শিক্ষার্থীদের রাস্তায় নামিয়েছে। ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
অপরদিকে, মহিচাইল জোবেদা মমতাজ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ আহসান হাবীবের বিরুদ্ধে একই অভিযোগ তুলে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। ওই বিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষার্থী জানান- প্রধান শিক্ষক আহসান হাবিব ৯ম ও ১০ম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের শরীরে হাত দেয়াসহ বিভিন্ন কুপ্রস্তাব দেন। এমনকি দুইজন শিক্ষার্থীকে দরজা আটকে যৌন হয়রানির চেষ্টা করেন। যে সমস্ত শিক্ষার্থীদের বাবা বিদেশ থাকেন তাদের মায়েদের বিদ্যালয়ে এনে নানা অযুহাতে মোবাইল ফোনে কল করে কুপ্রস্তাব দেয়ারও অভিযোগ ওঠে। এছাড়া বিদ্যালয়ের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ আহসান হাবীব জানান, আমার বিদ্যালয়ে গত বছরের এসএসসি পরীক্ষার ফলাফল খারাপ হওয়ায় আমি শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের প্রচুর চাপ সৃষ্টি করি। যে কারণে শিক্ষার্থীরা আমার বিরুদ্ধে এমন অপপ্রচার করছে।
চান্দিনা উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মোহাম্মদ আশরাফুল হক জানান, চান্দিনা ডা: ফিরোজা পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের শিক্ষার্থীদের অভিযোগ পেয়েছি এবং একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন পেলে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। অপরদিকে, মহিচাইল জোবেদা মমতাজ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ঘটনাটিও জেনেছি। লিখিত অভিযোগ পেলে যথাযথ ব্যবস্থা নেব।