চুয়াডাঙ্গায় দুর্নীতির বিরুদ্ধে দুদকের গণশুনানি

শুনানিতে ৯৫টি অভিযোগের মধ্যে ৩৩টি তাৎক্ষণিক নিষ্পত্তি ও ৭টি অভিযোগ খারিজ করা হয়েছে এবং বাকি অভিযোগগুলো জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে সমাধানের আশ্বাস দেয়া হয়েছে।

হুসাইন মালিক, চুয়াডাঙ্গা

Location :

Chuadanga
দুর্নীতির বিরুদ্ধে দুদকের গণশুনানি অনুষ্ঠিত
দুর্নীতির বিরুদ্ধে দুদকের গণশুনানি অনুষ্ঠিত |নয়া দিগন্ত

‘সবাই মিলে গড়বো দেশ, দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ’—প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে চুয়াডাঙ্গায় দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) গণশুনানি অনুষ্ঠিত হয়েছে। শুনানিতে ৯৫টি অভিযোগের মধ্যে ৩৩টি তাৎক্ষণিক নিষ্পত্তি ও ৭টি অভিযোগ খারিজ করা হয়েছে এবং বাকি অভিযোগগুলো জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে সমাধানের আশ্বাস দেয়া হয়।

সোমবার (২৭ অক্টোবর) সকাল ১০টার দিকে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সাহিত্য মঞ্চে এ গণশুনানির আয়োজন করে সমন্বিত দুদক কার্যালয়, ঝিনাইদহ। এছাড়া সহযোগিতা করে চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসন ও জেলা দুর্নীতি দমন প্রতিরোধ কমিটি।

গণশুনানির শুরুতে আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আবদুল মোমেন। বিশেষ অতিথি ছিলেন দুদকের তদন্ত কমিশনার মিঞা মুহাম্মদ আলি আকবার আজিজী, মহাপরিচালক আক্তার হোসেন ও জেলা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) জামাল আল নাসের প্রমুখ। স্বাগত বক্তব্য রাখেন দুদকের খুলনা বিভাগীয় পরিচালক জালাল উদ্দীন আহম্মদ।

গণশুনানির শুরুতেই চুয়াডাঙ্গার বিভিন্ন সরকারি দফরের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে একাধিক দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ ওঠে। প্রথমেই গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মহসিন আলীর বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের অভিযোগ তুলে ধরা হয়। তিনি অভিযোগের কিছু অংশ স্বীকার করেন এবং যুক্তি দিয়ে ব্যাখ্যা দেন। এ সময় দুদক চেয়ারম্যান তাকে সতর্ক করেন।

স্বাস্থ্য বিভাগের সিভিল সার্জন ডা. হাদী মো: জিয়া উদ্দিনের বিরুদ্ধে নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্নফাঁস ও ঘুষ লেনদেনের অভিযোগ ওঠে। কিন্তু তিনি অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, ‘পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়েছে।’ তবে দামুড়হুদা উপজেলা স্বাস্থ্য দফতরে বাজেট আত্মসাতের অভিযোগে তিনি সুনির্দিষ্ট জবাব দিতে ব্যর্থ হন।

সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. বিদ্যুৎ কুমার বিশ্বাসের বিরুদ্ধে পরিচ্ছন্নতা খাতে ২০ লাখ ও কম্পিউটার কেনা বাবদ ৪ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ এবং চিকিৎসক অনিকের বিরুদ্ধে রোগীদের হয়রানির অভিযোগ ওঠে। দুদক চেয়ারম্যান উভয়কেই কড়াভাবে সতর্ক করেন।

রেজিস্ট্রার ও সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে ভূমি রেজিস্ট্রেশনে অতিরিক্ত টাকা আদায়, বিআরটিএ অফিসে দালালচক্রের দৌরাত্ম্য, পৌরসভার উন্নয়ন প্রকল্পে অনিয়ম, সড়ক বিভাগের কালভার্ট নির্মাণে অর্থ আত্মসাৎ, বিএডিসির নিম্নমানের বীজ বিতরণ, ওজোপাডিকো বিদ্যুৎ বিভাগের লাইনে দুর্নীতি, খাদ্য বিভাগের ওএমএস কার্যক্রমে কম ওজনের আটা বিতরণ ও সোনালী ব্যাংকের ঋণ জালিয়াতিসহ নানা অনিয়মের অভিযোগও গণশুনানিতে উত্থাপিত হয়।

প্রায় সব ক্ষেত্রেই দুদক চেয়ারম্যান সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কড়াভাবে সতর্ক করেন এবং কিছু অভিযোগ তাতক্ষণিকভাবে যাচাইয়ের নির্দেশ দেন।

গণশুনানির শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে দুদক চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আবদুল মোমেন জানান, ‘চুয়াডাঙ্গায় গণশুনানিতে মোট ৯৫টি অভিযোগ এসেছে। এরমধ্যে ৩৩টি তাৎক্ষণিকভাবে নিষ্পত্তি করা হয়েছে এবং ৭টি অভিযোগ খারিজ করা হয়েছে। এদিকে বাকি অভিযোগগুলো জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে সমাধানের আশ্বাস দেয়া হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে জনগণকে সম্পৃক্ত করাই দুদকের মূল উদ্দেশ্য। যেখানে অনিয়ম সেখানেই দুদক, কেউ ছাড় পাবে না। বিগত সরকারের পতনের অন্যতম কারণ ছিল দুর্নীতি। এজন্য সচেতন থাকতে হবে। এছাড়া নির্বাচনের আগে মনোনয়ন বাণিজ্যসহ অবৈধ টাকার লেনদেন বেড়ে যায়। এজন্য এখনই সতর্ক থাকতে হবে এবং সঠিক লোকটিকে নির্বাচন করতে হবে।’

তিনি আরো বলেন, ‘তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী, তার পরিবারের সদস্য ও সাবেক এমপি-মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে দুদকের অনুসন্ধান, তদন্ত ও মামলা করা হয়েছে। তার সফল পরিণতির দিকে আমরা যেতে পারব। দুর্নীতির মামলায় অনেক আসামি দেশীয় সীমান্তের মধ্যে নেই। তারা কিভাবে কোন উপায়ে সীমান্ত পাড়ি দিয়েছে তা সকলেই জানে। এমনও তো হতে পারে যে তারা এ চুয়াডাঙ্গা সীমান্তই পাড়ি দিয়েছে। ফলে কে কোন দেশে অবস্থান নিয়েছে তা আমাদেরও অজানা না।’

গণশুনানিতে চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জহিরুল ইসলামের সভাপতিত্বে আরো উপস্থিত ছিলেন দুদকের কমিশনার (তদন্ত) মিঞা মুহাম্মদ আলি আকবার আজিজী, মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) আক্তার হোসেন, খুলনা বিভাগীয় কাযালয়েল পরিচালক জালাল আহমেদ ও চুয়াডাঙ্গার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) জামাল আল নাসের। এছাড়া গণশুনানিতে জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি, সাংবাদিক ও সাধারণ জনগণ উপস্থিত ছিলেন।