রাঙ্গামাটি রাজবন বিহারে দুই দিনের কঠিন চীবর দান উৎসব শুরু

রাঙ্গামাটিতে শুরু হয়েছে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের অন্যতম বৃহৎ ধর্মীয় অনুষ্ঠান ৪৯তম শুভ দানোত্তম কঠিন চীবর দান উৎসব।

রাঙ্গামাটি প্রতিনিধি

Location :

Rangamati
রাঙ্গামাটি রাজবন বিহারে দুই দিনের কঠিন চীবর দান উৎসব শুরু
রাঙ্গামাটি রাজবন বিহারে দুই দিনের কঠিন চীবর দান উৎসব শুরু |নয়া দিগন্ত

রাঙ্গামাটিতে শুরু হয়েছে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের অন্যতম বৃহৎ ধর্মীয় অনুষ্ঠান ৪৯তম শুভ দানোত্তম কঠিন চীবর দান উৎসব। প্রাচীন বৌদ্ধ ইতিহাসের ধারাবাহিকতায়, মহাউপাসিকা বিশাখা প্রবর্তিত নিয়মে ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই তৈরি করা হয় ভিক্ষুদের পরিধেয় বস্ত্র ’চীবর। চরকায় সূতা কাটার মধ্য দিয়ে শুরু হয় দানের এই আনুষ্ঠানিকতা।

পার্বত্য বৌদ্ধ ধর্মীয়গুরু প্রয়াত বনভন্তের স্মৃতি বিজরিত রাঙ্গামাটি রাজবন বিহারে বৃহস্পতিবার দুপুরে বর্ণাঢ্য আয়োজনে উদ্বোধন হয় এই দুই দিনব্যাপী উৎসবের। বনভন্তের শিষ্য শ্রীমৎ প্রজ্ঞালংকার মহাস্থবির বেইন ঘর উদ্বোধন করে উৎসবের সূচনা করেন।

দিনভর চলে প্রার্থনা, সংঘদান ও ধর্মীয় অনুষ্ঠান। হাজারো ভক্ত, ভিক্ষু ও সন্ন্যাসীর অংশগ্রহণে উৎসব প্রাঙ্গণ হয়ে উঠেছে ভক্তি আর শান্তির মিলনমেলা। চীবর দান ও ধর্মীয় সমাবেশ, যেখানে দেশ-বিদেশের ভক্তরা অংশ নেবেন।

শুক্রবার দুপুরে অনুষ্ঠিত হবে দ্বিতীয় দিনের মূল অনুষ্ঠান। রাঙ্গামাটি চাকমা সার্কেল চিফ রাজা ব্যারিস্টার দেবাষীশ রায় রাজবন বিহারের ভিক্ষ সংঘের কাছে তৈরী কৃত চীবর উৎসর্গ করবেন।

আয়োজকরা জানায়, সকল জীবের মঙ্গল কামনায়ই রাঙ্গামাটি রাজবন বিহারে গৌতম বুদ্ধের সময়কালের নিয়ম অনুসরণ করে এ কঠিন চীবর দান উৎসব এই উৎসবের আয়োজন হয়ে আসছে।

এদিকে উৎসব উপলক্ষ্যে রাজবন বিহার এলাকায় মেলা বসেছে। মেলা প্রাঙ্গণে সহস্রাধিক স্টলে পাহাড়ের উৎপাদিত বিভিন্ন ফল-সবজির পাশাপাশি পিঠা-পুলি, কুটির ও হস্তশিল্পের পণ্যের পসরা বসেছে।

গৌতম বুদ্ধের জীবদ্দশায় মহাউপাসিকা বিশাখা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তুলা থেকে সুতা এবং সুতা রঙ করে কাপড় বুনে তা সেলাই করে চীবর (ভিক্ষুদের পরিধেয় বস্ত্র) দান করে এই কঠিন চীবর দানের সূচনা করেন প্রায় আড়াই হাজার বছর আগে। এই পদ্ধতিতে দান করলে কায়িক, বাচনিক মানসিকভাবে অধিক পরিশ্রম হয় এবং অধিকতর পুণ্যলাভ হয় বলে বৌদ্ধ শাস্ত্রে উল্লেখ আছে।

পার্বত্য চট্টগ্রামে সর্বোচ্চ বৌদ্ধ ধর্মীয় গুরু সাধনানন্দ মহাস্থবির (বনভান্তে) রাঙ্গামাটি জেলার লংগদু উপজেলার তিনটিলা বন বিহারের দায়ক-দায়িকাদের দিয়ে এই কঠিন চীবর দানোৎসবের পুন ঃ প্রবর্তন করেন।

রাঙ্গামাটি রাজবন বিহারে সর্বপ্রথম কঠিন চীবর দান অনুষ্ঠিত হয় ১৯৭৬ সালে। সেই থেকে প্রত্যেক বছর রাঙ্গামাটি রাজবন বিহারসহ তিন পার্বত্য জেলার রাজবন বিহারের শাখাসমূহে বিশাখা প্রবর্তিত নিয়মে কঠিন চীবর দানোৎসব করা হয়ে থাকে।