মিয়া গোলাম পরওয়ার

শাসক নয়, জনগণই হবে রাষ্ট্রের মালিক

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দাঁড়িপাল্লা প্রতীকের পক্ষে কাজ করে রাষ্ট্রের মালিক হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি মিয়া গোলাম পরওয়ার

ডুমুরিয়া (খুলনা) সংবাদদাতা

Location :

Dumuria
নির্বাচনী গণসংযোগকালে মিয়া গোলাম পরওয়ার
নির্বাচনী গণসংযোগকালে মিয়া গোলাম পরওয়ার |নয়া দিগন্ত

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দাঁড়িপাল্লা প্রতীকের পক্ষে কাজ করে রাষ্ট্রের মালিক হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেছেন, ‘শাসক নয়, জনগণই হবে রাষ্ট্রের মালিক।’

মঙ্গলবার (৯ ডিসেম্বর) তার নির্বাচনী এলাকায় গণসংযোগকালে তিনি এসব কথা বলেন।

গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘আমিরে জামায়াত ডা: শফিকুর রহমান পরিবর্তিত বাংলাদেশে কল্যাণমুখী ও সমৃদ্ধ দেশ গড়ার রূপরেখা ঘোষণা করেছেন। এ রূপরেখা হলো সকল ক্ষেত্রে দুর্নীতির লাগাম টেনে ধরা হবে, মানুষের মাঝে ইনসাফ ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হবে, নতুন নতুন কর্মসংস্থানের মাধ্যমে শিক্ষিত বেকার যুবকদের হয় কর্মসংস্থান না হয় বেকার ভাতা দেয়া হবে, কর্মক্ষেত্রে নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে, বাস্তবমুখী শিক্ষা ব্যবস্থা প্রণয়নে টেকসই ও উন্নত জাতি গঠন করা হবে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সকলের সহাবস্থান নিশ্চিত করা হবে, ছাত্র রাজনীতি হবে কল্যাণমুখী, দলের লেজুড়বৃত্তিক নয়। প্রতিবেশী রাষ্ট্র সমূহের সাথে ন্যায্যতার ভিত্তিতে বন্ধুত্ব গড়ে তোলা হবে, সরকারের এমপি, মন্ত্রীদের জবাবদিহিতার আওতায় আনা হবে, যাতে তারা রাষ্ট্রের মালিক না ভেবে নিজেদের রাষ্ট্রের সেবক ভাবেন।’

জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, পরিবর্তিত বাংলাদেশের জনগণ এখন শাসন ব্যবস্থারও পরিবর্তন চাই। বিভিন্ন সময়ে চলমান ঘুষ, দুর্নীতি আর দুঃশাসনেরও অবসান চান। সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রেও স্থিতিশীলতা চান। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীও ঠিক তেমনি একটি কল্যাণমুখী ও সমৃদ্ধশালী রাষ্ট্র গড়তে চান যেখানে দুর্নীতি আর দুঃশাসন টোটালি স্টপড হবে। সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে স্থিতিশীলতা বজায় থাকবে ইনশাআল্লাহ। আপনারা এই এলাকার বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ। জামায়াতে ইসলামী ঘোষিত কল্যাণ রাষ্ট্রের রূপরেখা বাস্তবায়নে আপনারাই সাধারণ মানুষের কাছে আমাদের এই আহবান পৌঁছাবেন। ন্যায় ও ইনসাফের প্রতীক দাঁড়িপাল্লা মার্কায় ভোট দেয়ার আহ্বান জানাবেন।’

বিভিন্ন দলের শাসন ব্যবস্থার উদাহরণ টানতে গিয়ে মিয়া গোলাম পরওয়ার আরো বলেন, ‘স্বাধীনতার ৫৪ বছরে আপনারা বিভিন্ন দলের শাসন দেখেছেন। কিন্তু স্বাধীনতার প্রকৃত স্বাদ কি পেয়েছেন? দুর্নীতি আর দুঃশাসন, গুম, খুন, বিরোধী দল ও মতের উপর নির্যাতন, নিষ্পেষণ দিয়ে ভরপুর ছিল সে শাসন। বারবার শাসক পরিবর্তন হয়েছে কিন্তু জনগণের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়নি। তাইতো দেশের জনগণের ভাগ্যের উন্নয়ন ঘটাতে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী দুর্নীতির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে।’

এদিন মিয়া গোলাম পরওয়ার বেলা ১১টার দিকে ডুমুরিয়া উপজেলার ২নম্বর রঘুনাথপুর ইউনিয়নের থুকড়া বাজারে ব্যবসায়ীসহ সর্বস্তরের জনসাধারণের সাথে জনসংযোগ করেন।

তিনি ব্যাবসায়ীসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের সাথে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। এ সময় বিভিন্ন দোকানদার, ব্যবসায়ী, সাধারণত মানুষ, ভ্যান-রিকশা ও অটোরিকশা চালক রাস্তার দুই ধারে দাঁড়িয়ে সেক্রেটারি জেনারেলকে হাত নেড়ে অভিনন্দন জানান।

এ সময় তার সাথে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য খুলনা জেলা সেক্রেটারি ও খুলনা-৫ আসনের আসন পরিচালক মুন্সি মিজানুর রহমান, সহকারী সেক্রেটারি ও খুলনা-৫ আসনের নির্বাচন পরিচালনার সদস্য সচিব অধ্যাপক মিয়া গোলাম কুদ্দুস, কর্মপরিষদ সদস্য আবু ইউসুফ মোল্লা, ডুমুরিয়া উপজেলা আমীর মাওলানা মোক্তার হোসেন, সেক্রেটারি আব্দুর রশিদ, রঘুনাথপুর ইউনিয়ন আমীর মাওলানা বেলাল হোসাইন, উপজেলা শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের সেক্রেটারি মাহমুদ হাসান, রংপুর ইউনিয়ন সভাপতি মাওলানা আব্দুল মান্নান, কর্মপরিষদ সদস্য আলমগীর হুসাইন, ছাত্রশিবিরের উত্তর থানা সভাপতি মফিজুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

পরে বিএনপি নেতা গাজী আব্দুর রউফের সাথে সাক্ষাৎ এবং অসুস্থ বিএনপি নেতা সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান শেখ বদরুজ্জামান তসলিমের চুকনগরের বাসভবনে যান এবং চিকিৎসা ও শারীরিক খোঁজ খবর নেন। বাদ আসর তিনি ৬ নম্বর মাগুরাঘোনা ইউনিয়নের আরসনগরে এক উঠান বৈঠকে প্রধান অতিথির বক্তৃতা করেন।

এ সময় জেলা ও উপজেলার নেতারা ছাড়াও মাগুরাঘোনা ইউনিয়ন আমির মাওলানা আবদুল হালিম, সেক্রেটারি মাওলানা মোতালেব হুসাইন, নায়েবে আমির ডা: আব্দুল মান্নান, আটলিয়া ইউনিয়ন সভাপতি মাওলানা মতিউর রহমান, সেক্রেটারি হাফেজ মঈন উদদীন, মাওলানা নজরুল ইসলাম, ছাত্রশিবিরের সভাপতি সামিদুল হাসান লিমন, সেক্রেটারি হুসাইন আদনানসহ বিভিন্ন পর্যায়ের জামায়াত, ছাত্রশিবির, শ্রমিক, যুব ও উলামা নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

বাদ মাগরিব ডুমুরিয়া উপজেলা অফিসে হিন্দু ধর্মীয় কমিটির সভায় অংশ গ্রহণ করেন তিনি। এসময় উপজেলা হিন্দু কমিটির সহ-সভাপতি ডা: হরিদাস মন্ডল, সেক্রেটারি অধ্যক্ষ দেবপ্রসাদ মন্ডলসহ ইউনিয়ন সভাপতি, সেক্রেটারি গণ উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে সকালে ফুলতলার দামোদর ইউনিয়নের ৭ ও ৯নম্বর ওয়ার্ড জামায়াতে ইসলামী আয়োজিত বিশিষ্টজনদের সাথে মতবিনিময় করেন।

আব্দুল জলিল জমাদ্দারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন খুলনা জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি মুন্সী মিজানুর রহমান, সহকারি সেক্রেটারি অধ্যাপক মিয়া গোলাম কুদ্দুস, প্রিন্সিপাল গাওসুল আযম হাদী, জেলা কর্মপরিষদ সদস্য মাস্টার শেখ সিরাজুল ইসলাম। মো: সাইফুদ্দিনের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে ফুলতলা উপজেলা আমির অধ্যাপক আব্দুল আলীম মোল্যা, নায়েবে আমির অধ্যাপক মাওলানা শেখ ওবায়দুল্লাহ, পেশাজীবী বিভাগের সভাপতি মো: নজরুল ইসলাম জমাদ্দার, দামোদর ইউনিয়ন আমির ইঞ্জিনিয়ার শাব্বির আহমদ, সেক্রেটারি মাওলানা মুস্তাফিজুর রহমান, সাবেক ছাত্রশিবির নেতা অধ্যাপক মো: অহিদুজ্জামান, মো: এনামুল হক সোহেল, আবুল কালাম সরদার, আব্দুল হাকিম সরদার, মো: আলতাফ সরদার প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

পরে সাবেক এমপি মিয়া গোলাম পরওয়ার জামায়াত নেতা এডভোকেট ফিরোজ কবিরের অসুস্থ সহধর্মিণী ও দামোদর ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ড সভাপতি মাওলানা খলিলুর রহমানকে দেখতে যান এবং চিকিৎসার খোঁজখবর নেন। এসময় তিনি মহান রবের নিকট তাদের আশু সুস্থতার জন্য দোয়া করেন।

সকাল ১০টার দিকে দলের সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি মিয়া গোলাম পরওয়ার নবাগত ইউএনও সূচি রানী সাহা ও উপজেলা প্রশাসনের সাথে সৌজন্য সাক্ষাত করেন। সৌজন্য সাক্ষাতে জেলা ও উপজেলা জামায়াত নেতারা ও উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

এ সময় তিনি প্রশাসনের সকল কর্মকর্তা আগামী নির্বাচনে নিরপেক্ষভাবে কাজ করবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। পরে মিয়া গোলাম পরওয়ার সাম্প্রতিক সময়ে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক এনায়েতুল্লাহর কবর জিয়ারত এবং শোকাহত পরিবারের সদস্যদের সার্বিক খোঁজখবর নেন। পরে সাবেক এই এমপি ফুলতলার জামিরা বাজারে গণসংযোগ করেন।