পার্বত্য চট্টগ্রাম

২ উপদেষ্টার ‘সংবিধানবিরোধী ভূমিকা’য় পিসিসিপির উদ্বেগ

‘এই সিদ্ধান্ত সংবিধান পরিপন্থী ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। একদিকে যেমন এই আইনের মাধ্যমে ‘ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী’ শব্দটিকে চাপা দিয়ে ‘নৃ-বৈচিত্র্য’ বা ‘জাতি বৈচিত্র্য’ শব্দচয়ন চালু করা হচ্ছে, যা ভবিষ্যতে আদিবাসী স্বীকৃতির কৌশলগত ভিত্তি হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে’

রফিকুল ইসলাম রকি, খাগড়াছড়ি

Location :

Khagrachari
পিসিসিপির সংবাদ সম্মেলন
পিসিসিপির সংবাদ সম্মেলন |নয়া দিগন্ত

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা ও সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর ভূমিকা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাত্র পরিষদ (পিসিসিপি)।

শনিবার (২৮ জুন) খাগড়াছড়ি প্রেস ক্লাবে পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাত্রপরিষদ খাগড়াছড়ি জেলা শাখার ব্যানারে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে এ উদ্বেগ প্রকাশ করেন সংগঠনটির নেতারা।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে সংগঠনটির জেলা শাখার সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম বলেন, সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় ‘ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান আইন, ২০১০’ সংশোধনের উদ্যোগের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের নাম পরিবর্তন করে ‘জাতি বৈচিত্র্য ইনস্টিটিউট’ করার প্রস্তাব ও নতুন অধ্যাদেশে ছয় সদস্যের পরিচালনা কমিটিতে সবাইকে কেবলমাত্র ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী থেকে মনোনয়নের বিধান রাখা হয়েছে। যেখানে আগে ছয়জনের মধ্যে চারজন ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর হতে পারতেন।

তিনি বলেন, “এই সিদ্ধান্ত সংবিধান পরিপন্থী ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। একদিকে যেমন এই আইনের মাধ্যমে ‘ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী’ শব্দটিকে চাপা দিয়ে ‘নৃ-বৈচিত্র্য’ বা ‘জাতি বৈচিত্র্য’ শব্দচয়ন চালু করা হচ্ছে, যা ভবিষ্যতে আদিবাসী স্বীকৃতির কৌশলগত ভিত্তি হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে, অন্যদিকে বাঙালি জনগোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক অংশগ্রহণকে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে বঞ্চিত করার অপচেষ্টা চালানো হচ্ছে।”

এসময় তিনি উল্লেখ করেন, সংস্কৃতিবিষয়ক ওই বৈঠকে পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা উপস্থিত ছিলেন। গণমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, তিনি সেখানে বলেন, ‘আমরা আদিবাসী শব্দটি চাই কেবল পরিচয়ের জন্য।’ অথচ সংবিধানের ৬(২) অনুচ্ছেদে স্পষ্ট বলা হয়েছে, বাংলাদেশের জনগণের স্বীকৃত পরিচয় ‘জাতি’ নয়, ‘বাংলাদেশী’। উপদেষ্টার বক্তব্য স্পষ্টভাবে সংবিধানবিরোধী। এ ধরনের বক্তব্য এবং আইন সংশোধনের মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রামে একচেটিয়া গোষ্ঠী প্রাধান্য নিশ্চিত করার অপচেষ্টা চালানো হচ্ছে। এতে সাংস্কৃতিক ও প্রশাসনিক কাঠামোতে বৈচিত্র্য ও সমন্বয়ের বদলে বিভাজন ও অনিয়ম প্রতিষ্ঠিত হবে।”

সভাপতি বলেন, ‘দেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে ছাত্র-জনতার ঐক্যবদ্ধ গণআন্দোলনের মাধ্যমে গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি পাহাড়ি-বাঙালির আশাবাদ থাকলেও, কিছু উপদেষ্টা ও মন্ত্রণালয় কর্তৃক গৃহীত বৈষম্যমূলক সিদ্ধান্ত এই প্রত্যাশাকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে।’

এসময় পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা ও সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর ভূমিকা নিয়ে তারা উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তাদের বক্তব্য ও নীতিগত অবস্থান সংবিধানের ৬(২) অনুচ্ছেদের বিরোধী এবং গোষ্ঠীগত পক্ষপাতমূলক আচরণের বহিঃপ্রকাশ।

বক্তারা অভিযোগ করেন, মন্ত্রণালয়ের ৯০% বাজেট বরাদ্দ একটি নির্দিষ্ট গোষ্ঠীকে অগ্রাধিকার দিয়ে বিতরণ করা হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে থেকে ‘জাতি বৈচিত্র্য ইনস্টিটিউট অধ্যাদেশ ২০২৫’ বাতিল, কেবলমাত্র ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর ছয়জন সদস্য মনোনয়নের বিধান বাতিল, উপদেষ্টাদের বিতর্কিত ভূমিকায় নিরপেক্ষ তদন্ত ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণসহ পার্বত্য মন্ত্রণালয়ের বাজেট বণ্টনের বৈষম্যের নিরপেক্ষ তদন্তপূর্বক পুনর্বিন্যাস নিশ্চিত করার দাবি জানায় সংগঠনটি।

এসময় উপস্থিত ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল মজিদ, পিসিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক শাহাদাৎ হোসেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাত্র পরিষদের সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম, খাগড়াছড়ি জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান, খাগড়াছড়ি জেলা শাখা যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমান, সদর উপজেলা সভাপতি তরিকুল ইসলাম প্রমুখ।

উল্লেখ্য, ২৩ জুন সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের এক আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় ‘ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান আইন, ২০১০’ সংশোধনের উদ্যোগ নেয়া হয়। যার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের নাম পরিবর্তন করে ‘জাতি বৈচিত্র্য ইনস্টিটিউট’ করার প্রস্তাব দেয়া হয়। এছাড়া নতুন অধ্যাদেশে ছয় সদস্যের পরিচালনা কমিটিতে সবাইকে কেবলমাত্র ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী থেকে মনোনয়নের বিধান রাখা হয়েছে।