পরিবারের অভিযোগ পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড

গৌরনদীতে এক দিনে তিন লাশ উদ্ধার

বরিশালের গৌরনদীতে একদিনে পৃথক স্থান থেকে তিনটি লাশ উদ্ধারের ঘটনায় এলাকায় চরম উদ্বেগ ও আতঙ্ক বিরাজ করছে।

আরিফিন রিয়াদ, গৌরনদী (বরিশাল)

Location :

Gaurnadi
গৌরনদী মডেল থানা, বরিশাল
গৌরনদী মডেল থানা, বরিশাল |নয়া দিগন্ত

বরিশালের গৌরনদীতে একদিনে পৃথক স্থান থেকে তিনটি লাশ উদ্ধারের ঘটনায় এলাকায় চরম উদ্বেগ ও আতঙ্ক বিরাজ করছে। নিহত তিনজনের মধ্যে দু’জনকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে বলে দাবি স্বজনদের। অন্যদিকে আরেক নারীর মৃত্যুকে আত্মহত্যা বলা হলেও এ ঘটনাকেও ঘিরে উঠছে রহস্যে ঘেরা নানা প্রশ্ন।

নিহতরা হলেন- উপজেলার খাঞ্জাপুর ইউনিয়নের কমলাপুর গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা জাহাঙ্গীর মাস্টারের ছেলে ও উপজেলা যুবলীগের সদস্য আমিনুল ইসলাম (৪২), নলচিড়া ইউনিয়নের চররমজানপুর গ্রামের সুধাংশু মন্ডলের স্ত্রী সবিতা মন্ডল (৬০) ও নলচিড়া ইউনিয়নের বদরপুর গ্রামের আক্কাস হাওলাদারের স্ত্রী ইভা বেগম (২১)।

যুবলীগ নেতা আমিনুল হত্যা: পরিকল্পিত নাকি ব্যক্তিগত বিরোধ?

রোববার (১৬ নভেম্বর) সকালে গৌরনদী উপজেলা যুবলীগের সদস্য আমিনুল ইসলাম হাওলাদারের লাশ তার তার (আমিনুল) নিজ বাড়ির পুকুরের পাকাঘাটলার নিচ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। এসময় তার মুখ, ঘাড় ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন দেখা গেছে বলে জানিয়েছেন স্বজনরা।

নিহত আমিনুল কমলাপুর গ্রামের মরহুম জাহাঙ্গীর হোসেন হাওলাদার মাস্টারের মেঝ ছেলে।

আমিনুলের স্ত্রী পারভিন আক্তার বলেন, ‘আওয়ামী লীগ করার কারণে আমার স্বামী আমিনুল ইসলাম হাওলাদার বাড়ির বাহিরে বের হতো না। প্রায়ই রাত ৯টা ১০টার দিকে ঘর থেকে বের হয়ে আমিনুল পুকুরের পাকাঘাটলায় গিয়ে ২/১ ঘণ্টা বসে সময় কাটাতো। শনিবার রাত ১০টার দিকে আমার স্বামী ঘর থেকে বের হয়ে ঘরে ফিরে আসেনি। স্বামী ফোন রিসিভ না করায় রাত ১১টার দিকে আমি ও আমার মেয়ে বাড়ির আশপাশ ও পুকুরের পাকাঘাটলার চারপাশে খুঁজে ওই রাতে স্বামীর সন্ধ্যান পাইনি। রোববার সকালে পুকুরের পাকাঘাটলার প্রথম সিঁড়িতে স্বামীর মোবাইন ফোন ও স্যান্ডেল দেখতে পাই। এরপর ঘাটলার নিচ থেকে স্বামীর (আমিনুল) লাশ উদ্ধার করা হয়।

পরিবারের দাবি এটি নিছক দুর্ঘটনা নয় বরং পরিকল্পিত হত্যা। ঢাকা থেকে ফিরে নিহতের বড়ভাই মাজাহারুল ইসলাম হাওলাদার ও ভগ্নিপতি মিন্টু সরদার অভিযোগ করে বলেন, ‘আমিনুল সাঁতার জানত, পুকুরও খুব অগভীর নিজে পড়ে গিয়েও তার মৃত্যুর কোনো সুযোগ নেই। সুপরিকল্পিতভাবে দুর্বৃত্তরা গলায় ও মাথায় জখম করে তাকে হত্যা করে লাশ ঘাটলার নিচে লুকিয়ে রাখা হয়েছে। এ ব্যাপারে গৌরনদী থানায় একটি হত্যা মামলা করা হবে।’

রহস্যজনক মৃত্যু সবিতা মন্ডলের, ঘরে লুটপাটের চিহ্ন

অন্যদিকে নলচিড়া ইউনিয়নের চর রমজানপুর গ্রামের সবিতা মন্ডল শনিবার দিবাগত রাতে ঘরের দরজা-জানালা বন্ধ করে বাসায় একা ঘুমিয়ে ছিলেন।

রোববার সকালে ঘুম থেকে না উঠায় বাড়ির লোকজন তাকে ডাকতে গিয়ে দেখেন ঘরের দরজা খোলা এবং আসবাবপত্র এলোমেলো। বিছানায় সবিতার লাশ নিথর অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে থানা পুলিশকে খবর দেওয়া হয়।

পরিবারের দাবি, সংঘবদ্ধ দুর্বৃত্তরা আগে থেকেই ঘরের ভেতরে লুকিয়ে ছিল। রাতে সুযোগ বুঝে লুটপাটের সময় সবিতা বাধা দিলে তাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়।

এদিকে, সবিতার একমাত্র ছেলে সুকুমার কয়েকদিন আগে গ্রীস থেকে দেশে ফিরেছেন। ঘটনার দিন তিনি স্ত্রীকে নিয়ে বোনের বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিলেন।

চার মাসের অন্তঃসত্ত্বা ইভার আত্মহত্যা: নাকি পেছনে ভিন্ন কারণ?

অপরদিকে নলচিড়া ইউনিয়নের বদরপুর গ্রামের গৃহবধূ চার মাসের অন্তঃসত্ত্বা ইভা বেগম (২১) শনিবার রাতে বাবার বাড়ি থেকে স্বামীর বাড়িতে ফেরেন। এরপর পরিবারের অজান্তে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেছেন বলে দাবি করেন স্বামী আক্কাস হাওলাদার। তবে ইভার শ্বশুরবাড়ির কেউই আত্মহত্যার সুনির্দিষ্ট কারণ জানাতে পারেননি। মাত্র পাঁচ মাস আগে বিয়ে হয় তাদের।

ইভার পরিবার ও স্থানীয়দের দাবি, ইভার মৃত্যুর পেছনে পারিবারিক কলহ কিংবা মানসিক চাপের কারণ রয়েছে।

গৌরনদী মডেল থানার ওসি মো: তরিকুল ইসলাম জানিয়েছেন, তিনটি লাশই উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট হাতে পেলে মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা যাবে।

তিনি আরো জানান, মৃত্যুর কারণগুলো খতিয়ে দেখা হচ্ছে। নিহতের পরিবারের কেউ লিখিত অভিযোগ দিলে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।