গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) পদযাত্রায় হামলার ঘটনায় করা নাশকতার মামলায় নিরীহ মানুষকে হয়রানি ও গ্রেফতার করা হচ্ছে বলে উল্লেখ করে এর প্রতিবাদ জানিয়েছে উপজেলা বিএনপি ও এনসিপি।
এই মামলায় নিরীহ মানুষকে গণগ্রেফতার ও হয়রানীর প্রতিবাদ জানিয়ে রোববার (২০ জুলাই) বিকেল ৩টায় অস্থায়ী কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে কোটালীপাড়া উপজেলা বিএনপি, পৌর বিএনপি ও সহযোগী সংগঠন।
অন্যদিকে শনিবার রাতে কোটালীপাড়া থানা চত্বরে নিরীহ মানুষকে গণগ্রেফতার ও হয়রানির প্রতিবাদ জানায় এনসিপি কোটালীপাড়া শাখা।
উপজেলা বিএনপির সভাপতি এস এম মহিউদ্দিন সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলেন, ‘এই মামলা পর্যালোচনা করে দেখা যায় যে কোটালীপাড়ার বিভিন্ন স্তরের জনতা, ছাত্র, শিক্ষক, কৃষক, ভ্যানচালক, দিনমজুকে ধরে নিয়ে এসে আসামি করে জেল হাজতে পাঠিয়েছে কোটালীপাড়া থানা পুলিশ। আমরা এই নিরীহ মানুষদের গ্রেফতারের নিন্দা জানাচ্ছি। আর যদি একজন নিরীহ মানুষকে হয়রানি বা গ্রেফতার করা হয় তাহলে আমরা উপজেলার সাধারণ মানুষদের সাথে নিয়ে প্রতিবাদ জানাবো।’
উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবুল বাশার হাওলাদার বলেন, ‘এই মামলায় কোটালীপাড়ার সাধারণ মানুষ আতঙ্কিত। সাধারণ মানুষও ঘরে ঘুমাতে পারে না। কোটালীপাড়ার মানুষ এটাকে গণগ্রেফতার হিসেবে আখ্যায়িত করছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘এই মামলার সাথে কোটালীপাড়া উপজেলা বিএনপি বা এর সহযোগী সংগঠনের কেউ জড়িত নয়।’
কোটালীপাড়া পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ওলিউর রহমান হাওলাদার বলেন, ‘এই মামলায় অনেক সাধারণ আমজনতাকে আসামি করা হয়েছে যারা কোনো রাজনীতির সাথে জড়িত নয়। অন্যদিক অনেক পথচারী ও শ্রমজীব মানুষকে ইতোমধ্যেই এই মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছে।’
সংবাদ সম্মেলনে উপজেলা ও পৌর বিএনপি এবং সহযোগী সংগঠনের সিনিয়র নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে, শনিবার রাতে কোটালীপাড়া থানা চত্বরে গোপালগঞ্জ জেলা জাতীয় নাগরিক পার্টির যুগ্ম সমস্বয়কারী রুম্মান হোসেন রিমন সাংবাদিকদের বলেন, গত ১৬ জুলাই জাতীয় নাগরিক পার্টির পদযাত্রা কর্মসূচিকে ঘিরে গোপালগঞ্জ জেলায় কয়েকটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে কোটালীপাড়া থানায় পুলিশ বাদি হয়ে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। আমরা খতিয়ে দেখেছি, এই মামলায় আসামি হিসেবে যে ১৫৫ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে তার মধ্যে অনেকেই আছেন যারা নিরীহ। যারা আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথেও যুক্ত না এবং এই নাশকতার সাথেও যুক্ত ছিল না। আমরা নিরীহ মানুষদের গ্রেফতার ও হয়রানীর প্রতিবাদ জানাই। ইতোমধ্যে ওসি মহোদয়কে জানিয়েছি, কোনো নিরপরাধ ব্যক্তিকে যেন এই মামলায় গ্রেফতার না করা হয়।’
তিনি আরো বলেন, ‘এটি একটি পুলিশ বাদি মামলা। এই মামলার সাথে জাতীয় নাগরিক পার্টি জড়িত নয়। তাছাড়া জাতীয় নাগরিক পার্টির পক্ষ থেকে আসামি করার জন্য কোনো তালিকাও দেয়া হয়নি।’
এ সময় এনসিপির কোটালীপাড়া উপজেলা সমন্বয়কারী মোহাম্মদ সেলিম শেখ, যুগ্ম সমন্বয়কারী নজরুল ইসলামসহ সিনিয়র নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
কোটালীপাড়া থানার অফিসার ইনচার্জ আবুল কালাম আজদ জানান, ‘মামলায় নাশকতার সাথে জড়িতদের নাম উল্লেখ করে আসামি করা হয়েছে। এছাড়া এই মামলার সাথে জড়িত সন্দেহে আটক করে এখন পর্যন্ত ৩০ জনকে জেল হাজাতে পাঠানো হয়েছে। তবে যদি কোনো নিরাপরাধ ব্যক্তি এই মামলায় আটক হয়ে থাকে বা আসামি হিসেবে নাম চলে আসে আমরা তদন্তসাপেক্ষে তাদের বিষয়টি দেখব।’
উল্লেখ্য, গত ১৬ জুলাই গোপালগঞ্জে এনসিপির জুলাই পদযাত্রা কর্মসূচিতে কেন্দ্রীয় নেতাদের যোগদানে বাধা সৃষ্টির জন্য গোপালগঞ্জ-পয়সারহাট সড়কের কোটালীপাড়া উপজেলার অবদার হাট এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল ও সড়ক অবরোধ করে কোটালীপাড়া আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। হামলা চালানো হয় পদযাত্রায়। এ ঘটনায় কোটালীপাড়া থানার এসআই উত্তম কুমার সেন বাদি হয়ে ১৫৫ জনের নাম উল্লেখ করে এবং ১৫ শ’ জনকে অজ্ঞাত দেখিয়ে শুক্রবার (১৮ জুলাই) মামলা দায়ের করেন।