৭০ কোটি টাকার হাসপাতাল তালাবদ্ধ, সেবা থেকে বঞ্চিত পিরোজপুরবাসী

‘ভালো চিকিৎসা পাওয়ার আশায় এসেছি, কিন্তু জায়গা নেই। একটু দেখে খুলনায় রেফার করে দিয়েছে। এখানে ডাক্তার নেই, যন্ত্রপাতিও আধুনিক না। বাধ্য হয়ে বরিশাল বা ঢাকায় যেতে হয়। এতে কষ্ট হয়, খরচও বেশি পড়ে।’

পিরোজপুর প্রতিনিধি

Location :

Pirojpur
৭০ কোটি টাকার হাসপাতাল তালাবদ্ধ, চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত পিরোজপুরবাসী
৭০ কোটি টাকার হাসপাতাল তালাবদ্ধ, চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত পিরোজপুরবাসী |নয়া দিগন্ত

পিরোজপুরে প্রায় ৭০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ২৫০ শয্যার হাসপাতালটি নির্মাণ শেষ হওয়ার এক বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো চালু হয়নি শুধুমাত্র লিফট না থাকায়। ফলে জেলার লাখ লাখ মানুষ কাঙ্ক্ষিত স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। দীর্ঘদিন ধরে হাসপাতাল ভবন প্রস্তুত থাকলেও জনসাধারণ এর সুফল পাচ্ছেন না, আর চিকিৎসা নিতে গিয়ে রোগীদের পড়তে হচ্ছে চরম দুর্ভোগে।

‎বর্তমানে পিরোজপুর জেলা সদর হাসপাতালটি ১০০ শয্যার হলেও প্রতিদিন রোগী ভর্তি থাকে তার দ্বিগুণ বা তার বেশি। জায়গার অভাবে অনেক রোগীকে বারান্দা বা মেঝেতে থাকতে হয়। ‎প্রতিদিন গড়ে ৫০০-এর বেশি মানুষ এখানে চিকিৎসা নিতে আসেন, কিন্তু শয্যা ও বিশেষজ্ঞ ডাক্তার সংকটের কারণে অনেককেই প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে বরিশাল, খুলনা বা ঢাকায় রেফার করে দেয়া হয়।

‎পিরোজপুর ১৯৮৪ সালে মহকুমা থেকে জেলায় উন্নীত হওয়ার পর মাত্র ৩১ শয্যার হাসপাতালে যাত্রা শুরু হয়। ১৯৯৭ সালে ৫০ শয্যার নতুন ভবন, আর ২০০৫ সালে তা উন্নীত হয় ১০০ শয্যায়। ‎কিন্তু দীর্ঘদিন ধরেই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক সংকট, বারবার বদলি, ও পরিকাঠামোর সীমাবদ্ধতায় কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছেন সাধারণ মানুষ।

‎২০১৭ সালে ২৫০ শয্যার আধুনিক হাসপাতালের নির্মাণ শুরু হলেও এখনো চালু হয়নি শুধুমাত্র লিফট ও বিদ্যুৎ সংযোগ না থাকায়। ‎ফলে একদিকে জনগণ বঞ্চিত, অন্যদিকে কোটি টাকার সরকারি সম্পদ থেকে সেবা মিলছে না।

‎চিকিৎসা নিতে আসা ওমর আলী বলেন- ‘ভালো চিকিৎসা পাওয়ার আশায় এসেছি, কিন্তু জায়গা নেই। একটু দেখে খুলনায় রেফার করে দিয়েছে। এখানে ডাক্তার নেই, যন্ত্রপাতিও আধুনিক না। বাধ্য হয়ে বরিশাল বা ঢাকায় যেতে হয়। এতে কষ্ট হয়, খরচও বেশি পড়ে।’

‎হাসপাতালে ভর্তি হওয়া অন্য এক রোগী তাসলিমা আক্তার(৫০) বলেন, ‘আমি বেডে জায়গা না পেয়ে বারান্দায় কোনোরকমভাবে শুয়ে আছি এতে আগের চেয়ে আরো অসুস্থ হয়ে যাচ্ছি। আমরা চাই সমস্যা থেকে খুব দ্রুত সবাই মুক্তি পাক।’

‎পিরোজপুর গণপূর্ত বিভাগ উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী ফাহিম আহমেদ জানান, ভবনের নির্মাণ শেষ হয়েছে। লিফট এবং বিদ্যুৎ সংযোগের কাজ চলছে। শিগগিরই হস্তান্তর সম্ভব হবে বলে আশা করছি।’

‎পিরোজপুর সিভিল সার্জন ডা: মো: মতিউর জানান, ‘পুরাতন ভবনে আমরা সীমিত চিকিৎসাসেবা দিচ্ছি। নতুন ভবন চালু হলে আরো উন্নত ও সুশৃঙ্খল সেবা দেয়া সম্ভব হবে।’

‎২০১৭ সালে পিরোজপুরবাসীর জন্য ২৫০ শয্যার আধুনিক হাসপাতাল নির্মাণের ঘোষণা দেয়া হয়। শুরুতে সাততলা হিসেবে পরিকল্পিত হলেও পরে নয় তলায় উন্নীত হয়। ‎করোনা মহামারির কারণে নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ না হলেও ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে নির্মাণ সম্পন্ন হয়।

‎তবে এখনো লিফট ও বিদ্যুৎ সংযোগ না থাকায় ভবনটি হস্তান্তর হয়নি। ‎গণপূর্ত বিভাগের আওতায় মেসার্স খান বিল্ডার্স ও বঙ্গ বিল্ডার্স লিমিটেড এই হাসপাতাল নির্মাণ করেছে। ‎ভবন চালু হলে শুধু পিরোজপুর নয়, আশেপাশের প্রায় ২০ লাখ মানুষ আধুনিক চিকিৎসাসেবা পাবে বলে আশা করা যায়।