সুরমা-কুশিয়ারার পানি বিপদসীমার ওপরে, ঝুঁকিতে বেড়িবাঁধ

এবার বন্যা হলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হবেন এলাকার কৃষকরা। আমন চারা পানিতে তলিয়ে গেলে আগামীতে এই অঞ্চলে খাদ্য সঙ্কট দেখা দিতে পারে বলে অনেকে মনে করেন।

জকিগঞ্জ (সিলেট) সংবাদদাতা

Location :

Zakiganj
কিছু কিছু জায়গায় পুরাতন ডাইকের ওপর দিয়ে পানি আসতে শুরু করলেও লোকজন বস্তা দিয়ে পানি আটকে রেখেছেন
কিছু কিছু জায়গায় পুরাতন ডাইকের ওপর দিয়ে পানি আসতে শুরু করলেও লোকজন বস্তা দিয়ে পানি আটকে রেখেছেন |ছবি : নয়া দিগন্ত

সিলেটের জকিগঞ্জে ভারত থেকে নেমে আসা উজানের পাহাড়ি ঢল ও ভারি বর্ষণে সুরমা-কুশিয়ারা নদীর পানি ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে টেকসই বেড়িবাঁধ না থাকায় যে কোনো সময় সুরমা-কুশিয়ারার প্রতিরক্ষা বাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি ঢোকার ঝুঁকিতে রয়েছেন জকিগঞ্জবাসী।

বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) সকাল পর্যন্ত সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর পানি বিপদসীমার ৯৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। উজানে এমন ভারি বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকলে জকিগঞ্জে সুরমা-কুশিয়ারা নদীর তীরবর্তী ও নিম্নাঞ্চলে বন্যা হওয়ার শঙ্কা রয়েছে।

সরেজমিন জকিগঞ্জ উপজেলার বারঠাকুরী ইউনিয়নের আমলশীদ, পিল্লাকান্দি, সুলতানপুর ইউনিয়নের ইছাপুর, জকিগঞ্জ সদর ইউনিয়নের রারাই, বাখরশাল, শষ্যকুঁড়ি, পৌরসভার কাস্টমঘাট, খলাছড়া ইউনিয়নের পশ্চিম লোহারমহল ও বীরশ্রী ইউনিয়নের সুপ্রাকান্দি, মাঝরগ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, গত তিন দিনে সুরমা-কুশিয়ারা নদীর পানি বেড়ে নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলেছে। কিছু কিছু জায়গায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্মিত বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ উঁচু থাকায় মানুষ কিছুটা স্বস্তিতে রয়েছেন। তবে, চলতি বছরের বিগত বন্যায় কুশিয়ারা নদীর ভেঙে যাওয়া পাঁচটি ডাইক (বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ) এখনো শতভাগ কাজ না হওয়ায় যে কোনো সময় ভেঙে যেতে পারে বলে আশঙ্কা এলাকাবাসীর।

জকিগঞ্জের সুরমা-কুশিয়ারা নদীর উৎসমুখ আমলশীদ পয়েন্টে গিয়ে দেখা যায়, ভারত থেকে নেমে আসা বরাক নদীর পানি তীব্র গতিতে নামছে। বরাকের প্রায় ৭০ ভাগ পানি কুশিয়ারায় ও প্রায় ৩০ ভাগ সুরমায় প্রবাহিত হয়।

স্থানীয় এলাকাবাসী সুরমা ও কুশিয়ারায় পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় অসময়ে বন্যার আশঙ্কা করছেন। এবার বন্যা হলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হবেন এলাকার কৃষকরা। আমন চারা পানিতে তলিয়ে গেলে আগামীতে এই অঞ্চলে খাদ্য সঙ্কট দেখা দিতে পারে বলে অনেকে মনে করেন।

জকিগঞ্জ সদর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান হাসান আহমদ জানান, আমার ইউনিয়ন সবচেয়ে বেশি নদী ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত কোথাও বেড়িবাঁধ ভাঙেনি। কিছু কিছু জায়গায় পুরাতন ডাইকের ওপর দিয়ে পানি আসতে শুরু করলেও লোকজন বস্তা দিয়ে পানি আটকে রেখেছেন। বৃষ্টিপাত বন্ধ না হলে ডাইক ভেঙে লোকালয়ে পানি ঢুকে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করেন তিনি।

জকিগঞ্জে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) দায়িত্বে থাকা উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো: মাহফুজুর রহমান ভূইয়া জানান, মঙ্গলবার আমলশীদ পয়েন্টে সুরমা নদীর পানি বিপদসীমার ৯৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হলেও বুধবার দুপুর থেকে পানি কিছুটা কমতে শুরু করেছে। বর্তমানে আমলশীদ পয়েন্টে বিপদসীমার ৭৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রনজন দাস জানান, কুশিয়ারার পানি বৃদ্ধির ফলে ইছাপুর এলাকার অবস্থা কিছুটা খারাপ। তবে আশা করছি আজকের মধ্যেই বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হবে। বুধবার দুপুর থেকে জকিগঞ্জে রোদ দেখা দেয়ায় বড় ধরনের কোনো বন্যা হবে না বলে আশা করা যাচ্ছে।