গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে গ্রেফতার চার শিক্ষার্থী

বুধবার (৩ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় তাদের গ্রেফতার করে আশুলিয়া থানায় আনা হয়। এর আগে মঙ্গলবার আশুলিয়া থানায় মামলা দায়ের করেন ভুক্তভোগী ওই শিক্ষার্থী।

তুহিন আহামেদ, আশুলিয়া (ঢাকা)

Location :

Savar
আশুলিয়ায় সংঘবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগে গ্রেফতার গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের চার শিক্ষার্থী
আশুলিয়ায় সংঘবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগে গ্রেফতার গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের চার শিক্ষার্থী |নয়া দিগন্ত

ঢাকার সাভার উপজেলার আশুলিয়ায় গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রীকে পিকনিকের কথা বলে ডেকে নিয়েদলবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগে একই বিশ্ববিদ্যালয়ের চার শিক্ষার্থীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

বুধবার (৩ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় তাদের গ্রেফতার করে আশুলিয়া থানায় আনা হয়। এর আগে মঙ্গলবার আশুলিয়া থানায় মামলা দায়ের করেন ভুক্তভোগী ওই শিক্ষার্থী।

গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ থানার বাগলা টানবাড়ী গ্রামের ওমর ভূইয়ার ছেলে ও গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী দেলোয়ার ভূইয়া (২২), মানিকগঞ্জের হরিরামপুর থানার কলাহাটা গ্রামের জাকির হোসেন চিশতি মেথুর ছেলে তাজুল ইসলাম তাজ (২০), নেত্রকোনার বারহাট্টা থানার সাহামোয়াটি গ্রামের বিবেক চন্দ্র সাহার ছেলে শ্রাবন সাহা উৎস (২১) এবং একই বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষার্থী ঢাকার আশুলিয়া থানার নিরিবিলি এলাকার আবুল দেওয়ানের ছেলে অন্তু দেওয়ান (২৪)। অন্তু গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিপি ইয়াছিন আল মৃদুল দেওয়ানের চাচাতো ভাই বলে জানা গেছে।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, গত ৭ এপ্রিল সকাল ১১ টার দিকে পিকনিকে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে আশুলিয়ার ফুলেরটেক এলাকায় নিয়ে যায় ওই শিক্ষার্থীকে। পথিমধ্যে কোমল পানীয় 'মজোর' সাথে চেতনানাশক ওষুধ খাওয়ালে কিছুক্ষণ অচেতন হয়ে যান ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী। ওইদিন বিকেল ৫ টার দিকে জ্ঞান ফিরলে আসামিদের ফুলেরটেকের মেসে নিজেকে দেখেন ভুক্তভোগী এবং বুঝতে পারেন সুযোগ বুঝে তার সাথে শারীরিক সম্পর্ক করেছে তারা। পরে ডাকচিৎকার শুরু করলে আসামিরা ধারণকৃত ভিডিও এবং অশ্লীল ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল করা ও এসিড দিয়ে মুখ ঝলসে দেয়ার হুমকি দেয়। ঘটনার পর থেকে জিম্মি করে একাধিক ধাপে ভুক্তভোগীর কাছ থেকে মোট ৯৬ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয় অভিযুক্তরা।

ভুক্তভোগী জানান, গত ৪ নভেম্বর তাকে আবারও শারীরিক সম্পর্কের জন্য চাপ সৃষ্টি করে আসামিরা। পরে গত ৬ নভেম্বর ৪ নং আসামি অন্তু দেওয়ানের নির্দেশনায় হুমকি ও তার সাথে শারীরিক সম্পর্কের জন্য চাপ সৃষ্টি করে অন্যরা। তাদের প্রস্তাবে রাজি না হলে ভুক্তভোগীকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজসহ চড় থাপ্পর দিয়ে টেনে হিঁচড়ে অন্তুর কাছে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। এসময় আবারও বোতলে থাকা বিষাক্ত নেশাজাতীয় পানীয় ভুক্তভোগীকে জোরপূর্বক খেতে বাধ্য করে। ঘটনার পর অসুস্থ অবস্থায় কোনমতে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে গুরুতর অসুস্থ ও অচেতন হয়ে পড়েন। পরে সহপাঠী ও শিক্ষকরা গণস্বাস্থ্য সমাজভিত্তিক মেডিক্যালে ভর্তি করেন। অবস্থার অবনতি হলে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। এ ঘটনায় ভুক্তভোগীর স্বজন বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি লিখিত অভিযোগ দিলে আসামিরা আরো ক্ষিপ্ত হয়।

চিকিৎসা শেষে গত ২৬ নভেম্বর দুপুরে গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের একাডেমিক কক্ষে গেলে আসামিরা সাথে সাথে দরজা বন্ধ করে দিয়ে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীকে আটকে রেখে অভিযোগ তুলে নিতে চাপ দেয়। পরে বিকেল ৩টার দিকে তাকে ছেড়ে দেয়। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা না নেয়ায় গতকাল আশুলিয়া থানায় মামলা দায়ের করেন ভুক্তভোগী। পরে পুলিশ অভিযুক্ত চারজনকে গ্রেফতার করে।

আশুলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল হান্নান জানান, এটা ৭ এপ্রিলের ঘটনা। ৪ জনের নাম উল্লেখ করে আশুলিয়া থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন ভুক্তভোগী। এ ঘটনায় ১৭ ঘণ্টা অভিযান চালিয়ে অভিযুক্ত চারজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আগামীকাল তাদের আদালতে পাঠানো হবে।