রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের (আরএমপি) গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) বরখাস্ত হওয়া উপ-পরিদর্শক (এসআই) মাহবুব হাসানকে গণধোলাই দিয়ে পুলিশে দিয়েছেন জনতা।
শনিবার (২৩ জুলাই) দিবাগত গভীর রাতে নগরীর হজোর মোড় এলাকায় স্থানীয় জনতা ডিবির বিতর্কিত এই এসআইকে গণধোলাই দিয়ে পুলিশের কাছে সোপর্দ করে। পরে পুলিশ হেফাজতে তাকে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
নগরীর চন্দ্রিমা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মেহেদী মাসুদ জানান, স্থানীয়রা মাহবুব হাসানকে মারধর করে চন্দ্রিমা থানা পুলিশের কাছে সোপর্দ করেছে। পরে তাকে রামেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তার বিরুদ্ধে নগরীর বোয়ালিয়া মডেল থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। এখন তিনি ওই থানার হেফাজতে আছেন।
স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, ডিবির এসআই হাসান রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ করতেন। পরে দলীয় প্রভাবে পুলিশে চাকরি নেন। ডিবিতে পোস্টিং নিয়ে এখানকার বিএনপি, জামায়াত, ছাত্রদল ও ছাত্রশিবিরের বহু নেতাকর্মীকে গ্রেফতার ও পঙ্গু করেছেন হাসান। ছাত্রশিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি মঞ্জুরুল ইসলামকে আটক করে পিস্তলসহ মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার দেখান তিনি। বাদ যায়নি সাধারণ মানুষও। গ্রেফতার ও মামলা বাণিজ্যের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
তাদের আরো অভিযোগ, নগরীতে রাজিব আলী রাতুল নামে একজনকে বাসা থেকে তুলে নিয়ে যান ডিবির হাসান। তাকে নির্যাতন ও মাদক দিয়ে ফাঁসানো ছাড়াও ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে চাঁদাবাজি করেন। শেখ হাসিনার পতনের পর রাতুলের বাবা ওই হাসানের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। এসব অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে গত বছর তিনি চাকরিচ্যুত হন। এরপর থেকে তিনি আত্মগোপনে ছিলেন।
জানা গেছে, শনিবার গভীর রাতে নগরীর হজোর মোড় এলাকায় থাকা বাসা থেকে মাহবুব হাসানকে বের করে মারধর করেন স্থানীয়রা। পরে তাকে চন্দ্রিমা থানা পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হয়। তাকে গণধোলাই দেয়ার খবর পেয়ে বিএনপি ও জামায়াত নেতাকর্মীরা সেখানে গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করেন।
গত বছরের (২০২৪ সাল) ২২ আগস্টে করা মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, ২০১৯ সালের ২৩ অক্টোবর এসআই মাহবুব হাসান সাদাপোশাকে মাসুদ রানার বাড়িতে গিয়ে তার ছেলে রাজিব আলীর (৩১) মাথায় অস্ত্র ঠেকিয়ে নগরীর শিমলা বাগানে তুলে নিয়ে যান। পরে মাসুদ রানাকে ফোন করে জানানো হয়, তাৎক্ষণিক পাঁচ লাখ টাকা না দিলে রাজিবকে ক্রসফায়ারে দেয়া হবে। শিমলা বাগানে গিয়ে মাহবুব হাসানের হাতে পাঁচ লাখ টাকা তুলে দেন মাসুদ রানা। মাহবুব হাসান ওই সময় রাজিবের বাবাকে বাড়ি চলে যেতে বলেন এবং রাজিবকে বাড়ি পৌঁছে দেয়ার কথা বলেন। কিন্তু পরদিন রাজিবকে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের একটি মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়। ১৬ মাস কারাভোগের পর জামিন পান রাজিব।
নগরীর বোয়ালিয়া মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আবুল কালাম আজাদ গণমাধ্যমকে জানান, মাহবুব হাসানের বিরুদ্ধে গত বছরের ২২ আগস্ট একটি মামলা হয়েছে। ওই মামলায় তাকে গ্রেফতর দেখানো হয়েছে। আরো মামলা আছে কি না, তা দেখতে হবে। মাহবুব হাসানের মাথায় আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। তিনি রামেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।