সম্প্রীতির বাংলাদেশ

যুগ যুগ ধরে একই আঙ্গিনায় মসজিদ ও মন্দিরে ধর্মচর্চা

একই আঙ্গিনায় পাশাপাশি মন্দির-মসজিদে দুটি ধর্মের অনুসারীরা ভ্রাতৃত্বের সাথে ধর্মচর্চা করে আসছে।

নাগরপুর (টাঙ্গাইল) সংবাদদাতা

Location :

Tangail
পূজামণ্ডপ পরিদর্শনে টাঙ্গাইল জেলা পুলিশ সুপার মো: মিজানুর রহমান
পূজামণ্ডপ পরিদর্শনে টাঙ্গাইল জেলা পুলিশ সুপার মো: মিজানুর রহমান |নয়া দিগন্ত

বিগত কয়েক দশক ধরে টাঙ্গাইলের নাগরপুরে একই আঙ্গিনায় মসজিদ ও মন্দিরে হচ্ছে ধর্মচর্চা। সম্প্রীতির বাংলাদেশের এ এক অনন্য উদাহরণ।

সোমবার (২৯ সেপ্টেম্বর) শারদীয় দুর্গাপূজার মন্ডপ পরিদর্শনে এসে পাশাপাশি মসজিদ-মন্দিরে ধর্মচর্চা দেখে মুগ্ধ হয়েছেন টাঙ্গাইল জেলা পুলিশ সুপার মো: মিজানুর রহমান।

তিনি বলেন, ‘একই আঙ্গিনায় মসজিদ ও মন্দিরে ধর্মচর্চা হচ্ছে। এতেই বোঝা যায় আমাদের দেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। এখানে সবাই মিলে-মিশে উৎসবমুখর পরিবেশে ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালন করেন।’

জানা গেছে, ৫৭ বছর আগে নাগরপুর কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ ও ঈদগাহ মাঠের পাশেই নাগরপুর চৌধুরী বাড়িতে ওঁঝা ঠাকুর ও হরনাথ স্মৃতি কেন্দ্রীয় দুর্গামন্দির প্রতিষ্ঠার পর থেকেই সনাতন ধর্মাবলম্বীরা পূজা করে আসছে। একই আঙ্গিনায় পাশাপাশি মন্দির-মসজিদে দুটি ধর্মের অনুসারীরা ভ্রাতৃত্বের সাথে ধর্মচর্চা করে আসছে।

নামাজের আজান শুরু হতেই থেমে যায় শঙ্খ ও ঢাক-ঢোলের শব্দ এবং নিরব থাকে নামাজ আদায় শেষ না হওয়া পর্যন্ত। ঠিক তেমনি সনাতন ধর্মাবলম্বীরা যখন পূজা অর্চনা করেন তখন নামাজ ব্যতীত কোনো ধরনের ইসলাম ধর্মীয় চর্চা থেকে সম্পূর্ণরূপে বিরত থাকেন মুসল্লিরা।

এছাড়াও প্রতিমা দর্শনে আগতরা বেশির ভাগ সময়ে অবস্থান নেন মসজিদের আঙিনায়। নামাজ, পূজা একই সাথে একই আঙ্গিনায় পালন করেন দুটি ধর্মের অনুসারীরা। এলাকার হিন্দু-মুসলিম সকলেই একে অপরের মসজিদ মন্দিরের সুরক্ষায় কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে যুগের পর যুগ ধরে কাজ করে আসছেন। ইতোপূর্বে কোনো সহিংসতা তো দূরের কথা, কোনোদিন বাগ্বিতণ্ডার নজিরও নেই এখানে।

উভয় ধর্মের অনুসারীরা এ সম্প্রীতি ও ভ্রাতৃত্ববোধকে শতাব্দীর পর শতাব্দী টিকিয়ে রাখতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।

পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি শিব শংকর সূত্রধর বলেন, ‘এবার নাগরপুর উপজেলায় ১২টি ইউনিয়নে ১২৬টি মণ্ডপে দুর্গাপূজা উদযাপন হচ্ছে। এই এলাকার হিন্দু-মুসলিম সকলেই একে অপরের মসজিদ-মন্দিরের সুরক্ষায় কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে যুগের পর যুগ ধরে কাজ করে আসছে।’

মসজিদটির পেশ ইমাম ও খতিব হাফেজ মাওলানা আব্দুল লতিফ জানান, ‘মসজিদে আজান দেয়ার আগেই তারা ঢোল-বাজনা পূজা বন্ধ রাখেন, তখন বোঝার উপায় নেই যে এখানে একটু আগেই পূজা হচ্ছিল। একই আঙ্গিনায় মসজিদের পাশে মন্দির বাংলাদেশে নজির স্থাপন করেছে। এখানে এখন পর্যন্ত কোনো সাম্প্রদায়িক সহিংসতা সৃষ্টি হয়নি।’

জেলা পুলিশ সুপারের এ পরিদর্শনের সময় অন্যানের মধ্যে মধ্যে উপস্থিত ছিলেন নাগরপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো: রফিকুল ইসলাম, উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) আরাফাত মোহাম্মদ নোমান, নাগরপুর উপজেলা বিএনপি সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা এম এ ছালাম, সাধারণ সম্পাদক মো: হাবিবুর রহমান হবি, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী নাগরপুর শাখার আমির মাওলানা মো: রফিকুল ইসলাম, সেক্রেটারি অধ্যাপক আব্দুস সালাম, ইসলামী আন্দোলনের আকিনুর মিয়া ও নাগরপুর প্রেসক্লাবের সাংবাদিকরাসহ নাগরপুর থানা পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা।

উল্লেখ্য, এবার নাগরপুর উপজেলায় ১২টি ইউনিয়নে ১২৬টি মন্ডপে দুর্গাপূজা উদযাপন হচ্ছে।