৩ হাজারের বেশি কবর খুঁড়ে বিদায় নিলেন কিশোরগঞ্জের মনু চাচা

শনিবার (২৮ জুন) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে নিজ বাড়িতে ইন্তেকাল করেন তিনি।

কাইসার হামিদ, কুলিয়ারচর (কিশোরগঞ্জ)

Location :

Kishoreganj
মো: মনু মিয়া
মো: মনু মিয়া |নয়া দিগন্ত

তিন হাজারেরও বেশি কবর খুঁড়ে শেষ ঠিকানার কারিগর হিসেবে পরিচিত কিশোরগঞ্জের সেই মনু মিয়া (৬৭) আজ মারা গেছেন। তিনি ইটনা উপজেলার জয়সিদ্ধি ইউনিয়নের আলগাপাড়া গ্রামের বাসিন্দা। তিনি জীবনের প্রায় সময়ই কাটিয়েছেন অন্যের মৃত্যুতে শেষ প্রহরের সাথি হয়ে।

শনিবার (২৮ জুন) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে নিজ বাড়িতে ইন্তেকাল করেন তিনি।

‎মনু চাচা ছিলেন এক নিঃস্বার্থ হৃদয়ের মানুষ। কবর খুড়ে কোনোদিন টাকা নেননি, ক্লান্তিও প্রকাশ করেননি কোনোদিন। বিনা পারিশ্রমিকে একজীবনে তিন হাজারেরও বেশি মানুষের কবর খুঁড়েছেন। কারো মৃত্যুর খবর পেলেই, দেরি না করে নিজের ঘোড়া নিয়ে চলে যেতেন কবর খোঁড়ার কাজে।

বাড়ি থেকে অনেক দূরেও যদি কারো মৃত্যু হতো তবুও তিনি পৌঁছে যেতেন সবার আগে। তিনি বলতেন, ‘এই কাজ আমি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য করি। তিনি মনে করতেন, মানুষ মরলে দাফনটা যেন ঠিকঠাক হয়, এইটুকুই আমার দায়িত্ব।’

‎তাকে কখনো কবর খোঁড়ার জন্য দামদর করতে দেখা যায়নি। কেউ যদি কিছু দিতে চাইত, বিনয়ের সাথে ফিরিয়ে দিতেন। বলতেন ‘আল্লাহই দেবেন। মানুষের দোয়া পেলেই আমি খুশি।’

‎নিজের কবর খুঁড়ে যাননি, কিন্তু এখন শুয়ে আছেন চিরশান্তিতে। মনু চাচা নিজের কবর প্রস্তুত করেননি। কিন্তু তিনি চির নিদ্রায় শায়িত হবেন সেই মাটিতেই, যেখানে অসংখ্য মানুষের কবর খুঁড়েছেন নিজের হাতে।

‎তাকে দেখতে গিয়ে কান্না ভেজা চোখে অনেকেই বলছিলেন, ‘তিনি ছিলেন মৃত্যুর পর জীবনের সবচেয়ে দরকারি মানুষ। আজ উনি নেই, কিন্তু রেখে গেলেন এক মানবিক মূল্যবোধের উদাহরণ।’

‎মনু চাচার এই মৃত্যু শুধু একটি ব্যক্তি হারানোর শোক নয়। এটি একটি মানসিকতা, একটি সমাজচেতনামূলক মূল্যবোধের বিদায়। তার মতো নিঃস্বার্থ মানুষ সমাজে কয়জনই বা থাকেন।

‎তিনি তার মানবিকতা ও নিঃস্বার্থ ভালোবাসায় প্রমাণ করে গেছেন, মানুষের জন্য কিছু করলে, সেটা পত্রিকার হেডলাইন নয়, মানুষের হৃদয়ে গেঁথে থাকে। ইটনার মানুষ আজ একা। মনু চাচার ঘোড়ার টগবগ শব্দ আর শোনা যাবে না কোনো দাফনের দিনে। কিন্তু তার জীবনগাঁথা থেকে নতুন প্রজন্ম শিখবে, মানবতার সেবায় নিজেকে বিলিয়ে দেয়াই প্রকৃত ভালোবাসা, মহত্ত্বের কাজ।