কুড়িগ্রামের বহুল আলোচিত সাংবাদিক আরিফুল ইসলাম নির্যাতন মামলার প্রধান আসামি সাবেক জেলা প্রশাসক (ডিসি) সুলতানা পারভীনকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
মঙ্গলবার (২ সেপ্টেম্বর) দুপুরে তিনি কুড়িগ্রাম জেলা দায়রা জজ আদালতে হাজির হয়ে জামিন আবেদন করলে শুনানি শেষে আদালত তা নামঞ্জুর করে জেলহাজতে পাঠানোর আদেশ দেন।
জানা যায়, মামলাটির তদন্ত শেষে গত ২৮ জুলাই পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) আদালতে চার্জশিট দাখিল করে। তদন্ত কর্মকর্তা ও পিবিআই রংপুরের পরিদর্শক রায়হানুল রাজ দুলাল চার্জশিটে সাবেক ডিসি সুলতানা পারভীন, তৎকালীন আরডিসি নাজিম উদ্দিন, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রিন্টু বিকাশ চাকমা ও এস এম রাহাতুল ইসলামের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির নয়টি ধারায় অভিযোগ আনেন।
২০২০ সালের ১৩ মার্চ গভীর রাতে কুড়িগ্রাম শহরের নিজবাড়ি থেকে সাংবাদিক আরিফুল ইসলাম রিগানকে তুলে নেয় জেলা প্রশাসনের একটি বিশেষ দল। তাকে প্রথমে ধরলা সেতু এলাকায় নিয়ে প্রাণনাশের হুমকি দেয়া হয়। পরে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে নিয়ে বিবস্ত্র করে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালানো হয়।
পরে তার বিরুদ্ধে আধা বোতল মদ ও দেড় শ’ গ্রাম গাঁজা রাখার অভিযোগ দেখিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে সাজা দেয়া হয় এবং কারাগারে পাঠানো হয়। রাতের আঁধারে এভাবে একজন সাংবাদিককে ধরে এনে সাজা দেয়ার ঘটনায় দেশব্যাপী তীব্র সমালোচনা সৃষ্টি হয়।
ঘটনার জেরে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের নির্দেশে রংপুরের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার তদন্তে নামেন। প্রতিবেদনের ভিত্তিতে তৎকালীন ডিসি সুলতানা পারভীন, আরডিসি নাজিম উদ্দিন, এনডিসি রাহাতুল ইসলাম ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রিন্টু বিকাশ চাকমাকে প্রত্যাহার করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে ন্যস্ত করা হয়। একই বছরের ৩১ মার্চ হাইকোর্টের নির্দেশে মামলাটি রেকর্ড করে কুড়িগ্রাম সদর থানা পুলিশ।
মামলা দায়েরের পর প্রায় পাঁচ বছর ধরে মামলার কার্যক্রম গড়িমসিতে চলছিল। আসামিদের প্রভাবশালী অবস্থান ও প্রশাসনিক পদে বহাল থাকার কারণে তদন্ত প্রক্রিয়া বারবার বাধাগ্রস্ত হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। অবশেষে পিবিআইর নিরপেক্ষ তদন্তে সত্যতা প্রমাণিত হয়ে আদালতে চার্জশিট দাখিল করা হয়।
ভুক্তভোগী সাংবাদিক আরিফুল ইসলাম রিগান বলেন, ‘পাঁচ বছরেরও বেশি সময় ধরে আমরা অপেক্ষা করেছি। প্রধান আসামি সাবেক ডিসি সুলতানা পারভীনকে কারাগারে প্রেরণের মধ্য দিয়ে ন্যায়বিচারের পদক্ষেপ নেয়া শুরু হলো।’