বাংলাদেশে টাইফয়েড জ্বরের ভয়াবহ প্রাদুর্ভাব রোধে আগামী ১২ অক্টোবর থেকে মাসব্যাপী টিকাদান ক্যাম্পেইন শুরু হচ্ছে। ইপিআই কর্মসূচির আওতায় পরিচালিত এ উদ্যোগে সিলেট বিভাগে ৩০ লাখের বেশি শিশুকে বিনামূল্যে টাইফয়েডের টিকা দেয়া হবে। সিলেট জেলায় ৮ লাখ ৪৯ হাজার এবং সিলেট সিটি করপোরেশন এলাকায় ১ লাখ ৬২ হাজার শিশুকে টিকাদানের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
টাইফয়েড টিকাদান ক্যাম্পেইন উপলক্ষে আজ বৃহস্পতিবার (২৫ অক্টোবর) সিলেট নগরভবনের সভাকক্ষে আয়োজিত বিভাগীয় পর্যায়ের মতবিনিময় সভায় এ তথ্য জানানো হয়।
বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা ও ইউনিসেফের সহযোগিতায় স্বাস্থ্য বিভাগীয় কার্যালয় আয়োজিত মতবিনিময় সভায় স্বাস্থ্য বিভাগের পরিচালক ডা: মো: আনিসুর রহমানের পরিচালনায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন, সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার ও সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রশাসক খান মো: রেজা-উন-নবী।
প্রধান অতিথি বলেন, ‘যে কোনো ভালো কাজ বাস্তবায়নের জন্য সম্মিলিত প্রয়াস প্রয়োজন। আমরা বিভিন্ন সময়ে প্রমাণ করেছি সবাই মিলে যে কাজটি করতে চাই সেটা সমন্বিতভাবে সফল করতে পারি। অনেক চ্যালেঞ্জ আসে, কিন্তু আমরা সফল হই। সবাই সক্রিয় হলে টাইফয়েডের টিকাদান ক্যাম্পেইনেও আমরা সফল হব। যেহেতু শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকরা শিক্ষকদের সম্মান করেন, তাই এই কাজ বাস্তবায়নে শিক্ষকগণের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’
সিলেটের বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা: মো: আনিসুর রহমান জানান, প্রতিরোধযোগ্য সংক্রামক রোগ টাইফয়েড জ্বর থেকে শিশুদের সুরক্ষায় সরকার বিনামূল্যে টাইফয়েড টিকা দেয়ার উদ্যোগ নিয়েছে। আগামী ১২ অক্টোবর থেকে সিলেটসহ সারা দেশে এ কর্মসূচি বাস্তবায়িত হবে।
মতবিনিময় সভায় জানানো হয়, ‘বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অনুমোদিত এই টিকা নিরাপদ ও কার্যকর। সরকারের এই ক্যাম্পেইন শুধু শিশুদের জীবন রক্ষা নয়, দীর্ঘমেয়াদে টাইফয়েডজনিত অসুস্থতা ও মৃত্যুহার কমাতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে। এ সময় ৯ মাস থেকে ১৫ বছরের কম বয়সী সকল শিশু এবং প্রাক-প্রাথমিক থেকে নবম শ্রেণী বা সমমান পর্যন্ত সকল শিক্ষার্থীকে বিনামূল্যে ১ ডোজ টাইফয়ডে টিকা দেয়া হবে। কোনো শিশুকে টিকার আওতার বাইরে রাখা যাবে না।’
তিনি বলেন, ‘তথ্য অনুযায়ী ২০২১ সালে বাংলাদেশে প্রায় ৪ লাখ ৭৮ হাজার মানুষ টাইফয়েডে আক্রান্ত হয়। এর মধ্যে প্রায় আট হাজার মানুষের মৃত্যু ঘটে। মৃতদের ৬৮ শতাংশই শিশু।’
চিকিৎসকরা জানান, টাইফয়েড জীবাণু স্যালমোনেলা টাইফি দ্বারা সৃষ্ট। এটি মূলত দূষিত পানি ও খাবারের মাধ্যমে ছড়ায়। ঝুঁকি বেশি ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা, বস্তি, নিম্ন আয়ের জনগোষ্ঠী এবং যেখানে নিরাপদ পানি ও স্বাস্থ্যসম্মত স্যানিটেশনের অভাব রয়েছে। আক্রান্ত হলে শুধু শারীরিক জটিলতাই নয়, অর্থনৈতিক ক্ষতিও হয় এবং অনেক ক্ষেত্রে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। এই রোগ প্রতিরোধে টিকা গ্রহণই সবচেয়ে নিরাপদ।
তিনি জানান, টিকাদান কর্মসূচি সফলভাবে বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশে টাইফয়েডজনিত মৃত্যু অনেকাংশে কমে আসবে।
মতবিনিময় সভায় জানানো হয়, এই টিকা প্রদানের জন্য রেজিস্ট্রেশন কার্যক্রম চলমান রয়েছে। ইপিআই ভ্যাক্সিনেশন অ্যাপের মাধ্যমে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। শিক্ষার্থীদের স্ব স্ব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানভিত্তিক কেন্দ্রে টিকা দেয়া হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ব্যতীতদের স্থায়ী ও অস্থায়ী ইপিআই কেন্দ্রে টিকা দেয়া হবে।
সভায় সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ রেজাই রাফিন সরকার, প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা: মো: জাহিদুল ইসলাম, ইউনিসেফ সিলেট অঞ্চলের প্রধান দিল আফরোজা ইসলাম, বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার সিলেট বিভাগীয় সমন্বয়কারী ডা: খালিদ বিন লুৎফর, বিভিন্ন জেলার সিভিল সার্জন, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদফতরের উপপরিচালকসহ সিলেট বিভাগের স্বাস্থ্য ও শিক্ষা বিভাগের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।