লাকসামে জামায়াতের সমাবেশ: সংস্কার, বিচার ও ইসলামী শাসনব্যবস্থার দাবি

পৌরসভা ও উপজেলা জামায়াত আয়োজিত কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার।

লাকসাম (কুমিল্লা) সংবাদদাতা

Location :

Laksam
কর্মী সম্মেলনে বক্তব্য রাখছেন অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার
কর্মী সম্মেলনে বক্তব্য রাখছেন অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার |নয়া দিগন্ত

লাকসামে জামায়াতে ইসলামীর কর্মী সমাবেশে দলটির সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার সরকারের সমালোচনা করে বলেন, ‘আমরা কালো যুগ পার হয়েছি। আওয়ামী লীগ আলেম-ওলামা ও ছাত্রদের বিনা দোষে জেলে পুরে রেখেছে। আমাদের নেতাদের হত্যা করা হয়েছে। হাসিনা ভেবেছিল জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধ করে বাঁচবে। কিন্তু আল্লাহর ইচ্ছায় আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ হবে এবং জামায়াত-শিবির মর্যাদার আসনে বসবে।’

তিনি বলেন, ‘শহীদদের রক্তের ঋণ শোধ করতে হবে। বৈষম্যহীন সমাজ বিনির্মাণের মাধ্যমে তাদের ঋণ শোধ করতে হবে।’

শুক্রবার সকালে লাকসাম সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে পৌরসভা ও উপজেলা জামায়াত আয়োজিত কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

অন্তর্বর্তী সরকার প্রধানকে উদ্দেশ্য করে সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘নির্বাচিত গণতান্ত্রিক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের জন্য আপনার উপর ন্যস্ত দায়িত্ব পালন করুন। প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে মানবতাবিরোধীদের বিচার করে নির্বাচন দিন।’

লাকসাম পৌরসভা আমির মুহাম্মদ জয়নাল আবেদীন পাটোয়ারীর সভাপতিত্বে সমাবেশে প্রধান বক্তা ছিলেন জামায়াতের কেন্দ্রীয় সহ-সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আবু তাহের মুহাম্মদ মাছুম।

তিনি বলেন, ‘আল্লাহ ক্ষমা করেন কিন্তু ছাড় দেন না। পৃথিবীর কোনো জালেম রক্ষা পায়নি। আওয়ামী লীগও রক্ষা পাবে না। বাংলাদেশকে ফ্যাসিবাদ, চাঁদাবাজি ও জুলুমমুক্ত করতে হবে। জনগণের কাছে ইসলামের আদর্শ বাস্তবায়ন করতে হবে।’

তিনি আরো বলেন, ‘ইসলামী রাষ্ট্রে অন্য ধর্মের মানুষ নিরাপদে থাকবে। অনেকে ইসলামী শাসনব্যবস্থার বিরুদ্ধে বিদ্বেষ ছড়াচ্ছে, যা সত্য নয়। রাসুল সা:-এর শাসনব্যবস্থা এর উত্তম উদাহরণ।’

সমাবেশে পৌরসভা জামায়াতের সেক্রেটারি মাওলানা মোহাম্মদ সহিদ উল্লাহ ও উপজেলা সেক্রেটারি জোবায়ের ফয়সালের পরিচালনায় সম্মেলনে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য মু. আব্দুর রব, কেন্দ্রীয় মজলিশে শূরা সদস্য ও কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আমির অ্যাডভোকেট মু. শাহাজাহান, কেন্দ্রীয় মজলিশে শূরা সদস্য, কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা সেক্রেটারি ও কুমিল্লা-৯ (লাকসাম-মনোহরগঞ্জ) আসনে জামায়াত মনোনীত সংসদ সদস্য প্রার্থী অধ্যাপক ড: সৈয়দ একেএম সরওয়ার উদ্দিন ছিদ্দিকী, কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি ও চাঁদপুর-২ আসনে জামায়াত মনোনীত সংসদ সদস্য প্রার্থী ডা. আব্দুল মুবীন, কুমিল্লা-৮ বরুড়া আসনে জামায়াত মনোনীত সংসদ প্রার্থী অধ্যক্ষ শফিকুল আলম হেলাল, ছাত্রশিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপত মু. ইয়াছিন আরাফাত।

সমাবেশে অন্যদের মধ্যে আরো বক্তব্য রাখেন, ইসলামী ছাত্রশিবিরের চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাবেক সভাপতি ও কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের সাবেক ভিপি অধ্যাপক রেজাউল করিম, জেলা কর্মপরিষদ সদস্য মু. মিজানুর রহমান, মু. গোলাম সরওয়ার কামাল, লাকসাম উপজেলা আমির হাফেজ জহিরুল ইসলাম, কুমিল্লা জেলা জজ আদালতের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের পিপি অ্যাডভোকেট বদিউল আলম সুজন, শ্যামপুর থানা আমির আব্দুর রব ফারুকী, নাঙ্গলকোট উপজেলা আমির মু. জামাল উদ্দিন, লাকসাম পৌরসভার সাবেক আমির নুর মোহাম্মদ তাহেরী, মনোহরগঞ্জ উপজেলা আমির হাফেজ নুরুন নবী, কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা ছাত্রশিবির সভাপতি মহিউদ্দিন রনি, সেক্রেটারি জাহিদুল ইসলাম, জামায়াত নেতা হামিদুর রহমান সোহাগ, দেওয়ান মাহবুব-ই-ছোবহানী খোকন, আবুল বাশার, হারুনুর রশিদ, সর্দার আব্দুল কাদের, মোহাম্মদ হোসাইন, জহিরুল ইসলাম জাবেরী, ছাত্রশিবির লাকসাম পৌরসভা সভাপতি মোঃ নাজমুল ইসলাম।

অনুষ্ঠানে লাকসামকে জেলা ঘোষণা, ‘নবাব ফয়জুন্নেছা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়’ স্থাপন, ৫০০ শয্যার মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল স্থাপন, নতুন রেলপথ স্থাপন, সড়ক উন্নয়ন ও কুমিল্লা বিমানবন্দর চালুর দাবি জানানো হয়।

এসব দাবির জবাবে কেন্দ্রীয় সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার কুমিল্লার আসনগুলোতে জামায়াতের প্রার্থীদের ভোট দিয়ে বিজয়ী করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘আমরা সংসদে গেলে এই দাবিগুলো অচিরেই পূরণ করা হবে। ইনশাল্লাহ।’