চব্বিশের ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে ফেনীর মহিপালে বর্বরোচিত গণহত্যার শীর্ষ সন্ত্রাসীরা এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে। সেদিনের হত্যায় ব্যবহৃত আগ্নেয়াস্ত্রও এখনো উদ্ধার হয়নি। অবশ্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বলছে, ইতিমধ্যে কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অন্যদের অবস্থান জানতে চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
জেলা পুলিশ সূত্র জানায়, ভিডিও ফুটেজ ও প্রত্যক্ষদর্শীদের বিবরণ অনুযায়ী ঘটনায় জড়িতদের অন্তত ২৫ জনকে শনাক্ত করা হয়েছে। যারা সেদিন ভয়ংকর অস্ত্রশস্ত্র আন্দোলনকারী ছাত্র-জনতার উপর গুলি চালিয়েছিল। এদের মধ্যে জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি জিয়া উদ্দিন বাবলু, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ছনুয়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান করিম উল্যাহ প্রকাশ রেন্সু করিম, জেলা যুবলীগ সাংগঠনিক সম্পাদক লুৎফর রহমান খোকন হাজারী, পাঁচগাছিয়া ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারন সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন ডালিম, কাজীরবাগ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক আব্দুর রহমান প্রকাশ আব্দুর রউফ, ধলিয়া ইউনিয়নের যুব ও ক্রীড়া সম্পাদক নুর মোহাম্মদ প্র: নবী মেম্বার, ধলিয়া ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক চেয়ারম্যান আনোয়ার আহমদ মুন্সী, জেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক রাকির হোসেন ভুইয়া অর্নব, পাঁচগাছিয়ার যুবলীগ ক্যাডার সরোয়ার হোসেন রতন, ফেনী পৌরসভা ৩নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কহিনুর আলম রানা, পৌর যুবলীগের সহ সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম নাদিম, মোটবী ইউপি’র আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক চেয়ারম্যান হারুন অর রশিদ, সোনাগাজী উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও মতিগঞ্জ ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান রবিউজ্জামান বাবু, পৌর স্বেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল হাসান মোহন প্রকাশ কালা মোহন, পৌরসভা ১৪নম্বর ওয়ার্ডেও যুবলীগের সাবেক সভাপতি আবদুল কাদের শিপন, শর্শদী ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি সফিকুল ইসলাম সম্রাট, কাজীরবাগ ইউপি’র যুবলীগের প্রচার সম্পাদক কামরুল হাসান শরীফ, ফাজিলপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মজিবুল হক রিপনের ড্রাইভার ও যুবলীগ কর্মী সাহিদুল ইসলাম সোহান, পিএস মোজাম্মেল হোসেন মাসুদ, তার অনুসারী আজগর হোসেন প্রকাশ আজগর ফকির ফেনী পৌরসভা ১৭নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম সোহেল প্রকাশ ব্লাক সোহেল, ফেনী পৌরসভা ১নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি মো: ওমর ফারুক, ফেনী পৌরসভার ৪নম্বর ওয়ার্ডের ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ওসমান গনি লিটন, মতিগঞ্জ ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান রবিউজ্জামান বাবুর সহযোগি নুর ইসলাম প্রকাশ ট্রলি সবুজ, শর্শদী ইউনিয়নের ছাত্রলীগ কর্মী মো: সজিব রয়েছে।
ফেনী মডেল থানার ওসি মোহাম্মদ সামছুজ্জামান জানান, শনাক্ত হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে চারজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে সফিকুল ইসলাম, ওসমান গনি লিটন, কামরুল হাসান শরীফ, নবী মেম্বার গ্রেফতার রয়েছে।
তিনি আরো জানান, ৪ আগস্টের নারকীয় হত্যাযজ্ঞের ঘটনায় সাতটি হত্যা মামলা ও ১৫টি হত্যা চেষ্টা মামলা হয়েছে। এসব মামলায় আওয়ামীলীগ ও সহযোগি সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের ২ হাজার ৩শ’ ৫৯ নেতাকর্মী আসামি ও ৮শতাধিক গ্রেফতার করা হয়।
এদিকে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার প্রাপ্ত তথ্যমতে, উল্লেখিত দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসীদের অনেকে দেশ ত্যাগ করে ভারত, দুবাই, কাতার, কানাডা, আফ্রিকা সহ বিভিন্ন দেশে পাড়ি জমিয়েছে। পালিয়ে থেকেও তারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উস্কানীমূলক প্রচারণা এমনকি দলীয় লোকজনের সাথে নানাভাবে যোগাযোগ রক্ষা করছে। গত সপ্তাহে আফ্রিকা থেকে আসা শুকলভ নামে আওয়ামী লীগ নেতাকে পুলিশ দাগনভূঞার হীরাপুর থেকে গ্রেফতার করেছে। সে আফ্রিকা থেকে ভারত হয়ে বাংলাদেশে কয়েক দফা যাওয়া-আসা করেছে।
অপরদিকে ঘটনার দিন আওয়ামী লীগ ক্যাডাররা পিস্তল, রাইফেল, শর্টগান, এম-সিক্সটিন সহ বিভিন্ন ভারী অস্ত্র ব্যবহার করলেও তেমন উল্লেখযোগ্য উদ্ধার হয়নি।
বিভিন্ন নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, ফেনী জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন হাজারীর অনুসারী সকল উপজেলা চেয়ারম্যান, পৌরসভার মেয়র এমনকি অনেক ইউপি চেয়ারম্যানের কাছেও লাইসেন্সকৃত অস্ত্র ছিল। ঘটনার আগেরদিন নিজাম হাজারীর নির্দেশে তারা সব অস্ত্র জমা দেয়। ইতিমধ্যে ধৃত আসামিদের অনেকে আদালতে দেয়া জবানবন্দিতে পৌরসভার একটি কক্ষ থেকে তাদের অস্ত্র সরবরাহ করা হয় বলে তথ্য দেয়। সেদিন দুপুরে নিজাম হাজারীর নির্দেশেই জেলার বিভিন্ন পর্যায়ের দলীয় নেতাকর্মীরা পৌরসভায় একত্রিত হয়ে সেখান থেকেই মহিপালের দিকে মিছিল সহকারে গিয়ে নির্বিচারে গুলি চালায়। তাদের গুলিতে আন্দোলনরত সাতজন নিহত হয়। আহত হয় ৫শতাধিক।
ফেনীর পুলিশ সুপার মো: হাবিবুর রহমান জানান, নিজাম হাজারীর পিএস মানিকসহ অনেক দুর্ধর্ষ ক্যাডারকে ইতিমধ্যে গ্রেফতার করা হয়েছে। সাত হত্যা মামলার একটির চার্জশিট জমা দেয়া হয়েছে। স্পর্শকাতর এসব মামলা খুবই গুরুত্বসহকারে তদন্ত করা হচ্ছে। স্বল্পসময়ের মধ্যে অপরাপর মামলার চার্জশিট দেয়া হবে।
তিনি জানান, ঘটনায় জড়িত কাউকেই ছাড় দেয়া হবে না। পাশাপাশি কোনো নিরীহ মানুষ যাতে হয়রানির শিকার না হন সেদিকে বিশেষ নজর দেয়া হচ্ছে।
 
 



