মনোনয়নপত্র সংগ্রহ ও জমাদানের শেষ দিনে এসে অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করা হলো বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (ব্রাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন।
সোমবার (১ ডিসেম্বর) বিকেল ৫টার দিকে ব্রাকসু নির্বাচন কমিশন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বিরুদ্ধে ভোটার তালিকা হালনাগাদ না করাসহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ এনে সংবাদ সম্মেলন করে এ সিদ্ধান্ত জানায়।
এ সময় নির্বাচন কমিশনের প্রধান অধ্যাপক ড. মো: শাহ জামান, সদস্য ড. প্রদীপ কুমার সরকার, মো: আমির শরীফ, সহকারী নির্বাচন কমিশনার ড. মোহসীনা আহসান, নির্বাচন কমিশনার মো: মাসুদ, মো: হাসান আলীসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে প্রধান নিবাচন কমিশনার শাহজামান বলেন, ‘তফসিল কার্যকর করতে হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত দফতর থেকে হলভিত্তিক সঠিক হালনাগাদ ও ত্রুটিমুক্ত ভোটার তালিকা পাওয়া অপরিহার্য। কে কে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, কে কোন হলের শিক্ষার্থী, কে ভর্তি বাতিল করেছে, কোন অপরাধের কারণে কোন ছাত্রের ছাত্রত্ব বাতিল হয়েছে এসব নির্ভুল তথ্য অবশ্যই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নির্বাচন কমিশনকে সরবরাহ করবে। এ সকল তথ্যের ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের নিজস্ব সিদ্ধান্তের কোনো সুযোগ নেই।’
তিনি আরো বলেন, ‘বিষয়টি দুঃখজনক হলো যে, নির্বাচন কমিশন হলভিত্তিক ভোটার তালিকা চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার বরাবর আবেদন করে। পরে ভোটার তালিকা ও হল সংযুক্তি সম্পর্কিত নথিপত্র দেয়া হলেও তাতে একাধিক গুরুতর অসঙ্গতি, ভুল তথ্য ও অসম্পূর্ণতা পাওয়া গেছে। এ পরিস্থিতিতে মনোনয়নপত্র বিতরণ কার্যক্রম অব্যাহত রাখা নির্বাচনী স্বচ্ছতা ও গ্রহণযোগ্যতার বিরুদ্ধে যাবে।‘
নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘হলভিত্তিক ভুল ভোটার তালিকা নির্বাচন প্রক্রিয়াকে প্রশ্নবিদ্ধ করবে, এই তালিকার ভিত্তিতে মনোনয়নপত্র বিতরণ করলে প্রার্থীদের মধ্যে বৈধতা-সংক্রান্ত জটিলতা সৃষ্টি হবে। ত্রুটিপূর্ণ ভোটার তালিকা সংশোধন না করে নির্বাচন কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়া কোনোভাবেই সম্ভব নয়।’
তিনি আরো বলেন, ‘গত বৃহস্পতিবার (২৭ নভেম্বর) মনোনয়নপত্র বিতরণ করার কথা থাকলেও হলভিত্তিক শিক্ষার্থীদের তালিকা পাওয়া নিয়ে জটিলতার কারণে এক কার্যদিবস পিছিয়ে ৩০ নভেম্বর ও ১ ডিসেম্বর মনোনয়নপত্র বিতরণ কার্যক্রম চলে। ভোটার তালিকার অসঙ্গতি দূর না হওয়া পর্যন্ত মনোনয়নপত্র বিতরণসহ তফসিলের অন্য কার্যক্রম স্থগিত থাকবে।’
কমিশনের সিদ্ধান্তকে দুঃখজনক বলছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক শওকাত আলী। তিনি বলেন, ‘এটা অনাকাঙ্ক্ষিত, দুঃখজনক। কমিশন স্বাধীন। এই কমিশনকে যদি কেউ ভুল তথ্য দেয় তাহলে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হবে। যদি ইচ্ছাকৃতভাবে এই ভুল তথ্য দেয় তাহলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। সঠিক তথ্য সরবরাহ করার পরও যদি কোনো ভুল থাকে তাহলে সেটি ঠিক করার দায়িত্বও কমিশনের। আমি আহ্বান করব, কমিশন ভোট স্থগিত না করে তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাবে।’
এদিকে, ব্রাকসু নির্বাচনে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ ও জমাদানের শেষ দিন উৎসবমুখর পরিবেশে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ ও জমাদান শেষ হলেও নির্বাচন কমিশনের এমন সিদ্ধান্তে তাৎক্ষণিকভাবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনিক ভবনের দক্ষিণ গেটে তালা ঝুলিয়ে বিক্ষোভ করে একদল শিক্ষার্থী। পরে অবশ্য তারা সেখান থেকে চলে যান।
এর আগে, আজ দুপুরে ক্যাম্পাস ছাত্রদলের সভাপতি মো: ইয়ামিন ও সাধারণ সম্পাদক জহির রায়হানের নেতৃত্বে একদল শিক্ষার্থী অবস্থান নিয়ে ভোটার তালিকা হালনাগাদ না হওয়াসহ নানা অসঙ্গতি তুলে ধরে ভোট পিছিয়ে যৌক্তিক সময়ে ভোট গ্রহণের দাবি জানান। প্রায় আধাঘণ্টা ধরে সেখানে অবস্থান করে নানা অসঙ্গতির কথা তুলে ধরেন তারা। এ ঘটনার প্রায় সাড়ে চার ঘণ্টা পর নির্বাচন স্থগিতের সিদ্ধান্ত জানাল নির্বাচন কমিশন।
আজ সোমবার মনোনয়নপত্র সংগ্রহের শেষ দিনে দিনভর বিভিন্ন প্যানেলে অংশ নেয়া প্রার্থীরা খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে ক্যাম্পাসে শোডাউন শেষে উৎসবমুখর পরিবেশে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন। কিন্তু সন্ধ্যার আগে কমিশনের এমন সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
ছাত্রদল সভাপতি মো: ইয়ামিনের অভিযোগ, ‘আমরা নির্বাচন কমিশনকে অনেকগুলো অসঙ্গতি দেখালাম। ভোটার তালিকা ২৬ তারিখ চূড়ান্ত করা হয়নি। ২৮ তারিখ পার হয়ে যাওয়ার পরও একজন প্রার্থী এসে দেখেন তিনি ভোটার নন। এছাড়াও অনেক অসঙ্গতি রয়েছে, আমরা সেগুলো বলেছি। অসঙ্গতি দূর করে যোক্তিক সময়ে ভোট নিতে হবে।’
বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী শামসুর রহমান সুমন বলেন, ‘আমরা কমিশনের এই সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা জানাই। আমাদের ধারণা কমিশন কোনো অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে চায়। নির্ধারিত সময়ে ভোট গ্রহণ না হলে কঠোর আন্দোলন করবে শিক্ষার্থীরা।’
উল্লেখ্য, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ১৭ বছরেও কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়নি। জুলাই আন্দোলনের পর ব্রাকসু নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন করেন শিক্ষার্থীরা। কয়েক দফা অবস্থান কর্মসূচি ও আমরণ অনশন শেষে ২৮ অক্টোবর রাষ্ট্রপতি ‘বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০০৯’-এ বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (ব্রাকসু) আইনের অনুমোদন দেন।
এরপর, ১১ নভেম্বর ১১৭তম সিন্ডিকেট সভায় নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করে ড. শাহ জামানকে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের দায়িত্ব দেয়া হয়। ১৮ নভেম্বর প্রথমবার তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন ২৯ ডিসেম্বর ভোটের তারিখ নির্ধারণ করে। কিন্তু ছাত্রসংগঠনগুলোর আপত্তি ও দাবির মুখে ২০ নভেম্বর রাতে নতুন তফসিল প্রকাশ করে ভোটগ্রহণের দিন এগিয়ে ২৪ ডিসেম্বর করা হয়।
এর আগে, ৪ নভেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের ১১৬তম সিন্ডিকেট সভায় নির্বাচন আয়োজনের জন্য ছয় সদস্যের ব্রাকসু নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়। এতে ড. ফেরদৌস রহমানকে প্রধান কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব দেয়া হয়। কিন্তু কমিশন গঠনের কয়েক ঘণ্টার মধ্যে তিনি পদত্যাগ করেন।



