কিশোরগঞ্জের হাওরাঞ্চল নিকলীতে দিন দিন বেড়েই চলেছে অবৈধ বিদ্যুৎ ব্যবহারের প্রবণতা। টাকার বিনিময়ে অবৈধভাবে হুকিং (অবৈধ সংযোগ) ব্যবহার করে বিদ্যুৎ নেয়া এখন যেন সাধারণ ঘটনায় পরিণত হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, বিদ্যুৎ অফিসের কিছু অসাধু কর্মচারীর যোগসাজশে অবৈধ কার্যক্রম আরো বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন সাধারণ গ্রাহকরা।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় সামাজিক অনুষ্ঠান, বিবাহ, খতনা, এমনকি রাজনৈতিক সমাবেশেও ব্যাপকভাবে হুকিং ব্যবহৃত হচ্ছে। এসব অবৈধ সংযোগের কারণে প্রায়ই ঘটে দুর্ঘটনা, বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে প্রাণহানির ঘটনাও ঘটছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, অনেক অটোরিকশা চার্জিং পয়েন্টেও অবৈধভাবে বিদ্যুৎ নেয়া হচ্ছে।
অভিযোগ রয়েছে, বিদ্যুৎ অফিসের কিছু অসাধু কর্মচারীর সহযোগিতা ছাড়া এসব অবৈধ সংযোগ সম্ভব নয়। তারা অর্থের বিনিময়ে গোপনে সংযোগ দেন। তবে ব্যক্তিগত দ্বন্দ্ব বা স্থানীয় বিরোধের জেরে কখনো কেউ বিষয়টি প্রকাশ করলে প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ হয়। বিদ্যুৎ সেবার সাথে জড়িত কিছু কর্মচারীর আর্থিক অনিয়ম বা লেনদেন ফাঁস হলে তখনই এসব অনিয়ম প্রকাশ্যে আসে।
উপজেলায় বর্তমানে প্রায় ৪৪ হাজার গ্রাহক বিদ্যুৎ সংযোগে রয়েছেন। চাহিদা অনুযায়ী ১৫ এমভিএ বিদ্যুৎ প্রয়োজন হলেও সরবরাহ রয়েছে মাত্র ১০ এমভিএ। ফলে একদিকে অপর্যাপ্ত সরবরাহ, অন্যদিকে অবৈধ ব্যবহার উভয় কারণেই সাধারণ গ্রাহকরা পড়ছেন মারাত্মক ভোগান্তিতে। ঘনঘন লোডশেডিংয়ের কারণে অনেক এলাকায় দৈনন্দিন কাজেও বিঘ্ন ঘটছে। উপজেলা সদরে লোডশেডিং তুলনামূলক কম হলেও আশপাশের গ্রামীণ এলাকায় পরিস্থিতি নাজুক।
ভুক্তভোগী গ্রাহকদের অভিযোগ, বিদ্যুৎ বিভ্রাট বা জরুরি সমস্যায় বিদ্যুৎ অফিসে ফোন করলেও অধিকাংশ সময় কেউ ফোন ধরেন না। এছাড়াও স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, সেবাদানের লক্ষ্যে এমনকি অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সঠিক জবাব তারা পাননি। নিকলী উপজেলার কর্মরত সহকারী জেনারেল ম্যানেজারও এই বিষয়ে অনেকখানিই দায় এড়িয়ে চলার চেষ্টা করেন।
গত ১৪ অক্টোবর নিকলীর জারইতলা ইউনিয়নের আঠারবাড়িয়া পুকুরপাড় এলাকায় একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে অবৈধ হুকিংয়ের ঘটনা প্রকাশ পেলে প্রশাসন ঘটনাস্থলে গিয়ে জরিমানা আদায় করে। তবে কত টাকা জরিমানা করা হয়েছে সে বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক তথ্য মেলেনি।
এ বিষয়ে সহকারী জেনারেল ম্যানেজার (এজিএম) সৈয়দ আজহারুল ইসলাম বলেন, ‘ঘটনার সময় আমি উপস্থিত ছিলাম না, তবে খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
তবে স্থানীয়দের দাবি, টাকার বিনিময়ে হুকিং ব্যবহার সহজেই সম্ভব। প্রমাণসাপেক্ষে ধরা পড়লেও নামমাত্র জরিমানা করেই বিষয়টি নিষ্পত্তি করা হয়। দায়িত্বপ্রাপ্তদের গোপন ‘অফিসবহির্ভূত’ সুবিধা নেয়ার সুযোগ থেকেই অপরাধের প্রবণতা বাড়ছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
এ বিষয়ে কিশোরগঞ্জ পল্লি বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার আতিকুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘যদি প্রমাণসহ অভিযোগ পাওয়া যায়, জড়িত কর্মচারীদের বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে।’



