গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে সাত জনের শরীরে অ্যানথ্রাক্সের উপসর্গ পাওয়া গেছে। শুক্রবার সন্ধ্যায় গাইবান্ধা শহরের রাবেয়া ক্লিনিক অ্যান্ড নাসিং হোমের চর্মরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে চিকিৎসা নিতে এসে এই উপসর্গের ধরা পড়ে।
পরে চিকিৎসক মনজুরুল করিম তাদেরকে প্রাথমিক ব্যবস্থাপত্র দেন এবং গাইবান্ধা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তির পরামর্শ দেন। কিন্তু রাত সাড়ে ৯টা থেকে ১১টা পর্যন্ত হাসপাতালে অ্যানথ্রাক্সের উপসর্গ নিয়ে কোন ভর্তি রোগী পাওয়া যায়নি।
ফলে আক্রান্তদের নাম পরিচয় জানা সম্ভব হয়নি। তবে তাদের সবার বাড়ি সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় বলে জানা গেছে। রাত সাড়ে ১০টায় চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ মনজুরুল করিম অ্যানথ্রাক্সের উপসর্গ পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি মোবাইল ফোনে বলেন, অ্যানথ্রাক্স আক্রান্ত গরুর মাংস খেলে সাধারণত এই রোগের উপসর্গ দেখা দেয়। দীর্ঘমেয়াদী চিকিৎসায় এই রোগ সেরে যায়।
এসব বিষয়ে গাইবান্ধার সিভিল সার্জন রকিবুজ্জামান বলেন, কয়েকদিন আগে সুন্দরগঞ্জ উপজেলার বেলকা ইউনিয়নের কিসামত গ্রামে অ্যানথ্রাক্স আক্রান্ত গরু জবাই করা হয়। ওই গরুর মাংস কাটাকাটি করায় কয়েকজন অ্যানথ্রাক্সে আক্রান্ত হয়। তারা সুন্দরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিয়েছেন। তিনি বলেন, অ্যানথ্রাক্সে আক্রান্তদের লক্ষণ হচ্ছে চর্মরোগ। আক্রান্তদের মধ্যে কারো শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে তাদেরকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে। ভর্তি করার মতো এখন পর্যন্ত কোন রোগী আসেনি।
স্থানীয়রা জানায়, কয়েকদিন আগে এই গ্রামের ১১ জন অ্যানথ্রাক্সের উপসর্গ নিয়ে সুন্দরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স চিকিৎসা নেন। আক্রান্তদের মধ্যে চার জনের নাম জানা গেছে।
কিসামত গ্রামের ইউপি সদস্য হাফিজার রহমান বলেন, কয়েকদিন আগে স্থানীয়রা অ্যানথ্রাক্স আক্রান্ত একটি গরু জবাই করে মাংস কাটাকাটি করে। এরপর কয়েকজনের শরীরে বিভিন্ন অংশে ফোঁসকা পড়ে এবং মাংসে পঁচন ধরনের উপসর্গ দেখা দেয়। বিশেষ করে হাত, নাক, মুখ, চোখে এসব উপসর্গ দেখা গেছে। তারা সুন্দরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য বলেছে চিকিৎসা নেন।
সুন্দরগঞ্জ উপজেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি পার্শ্ববর্তী রংপুরের পীরগাছা উপজেলায় গরু ছাগলের মাঝে অ্যানথ্রাক্স রোগের প্রকোপ দেখা দেয়, তার প্রভাব এখন সুন্দরগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে। বিশেষত সুন্দরগঞ্জ উপজেলার বামনডাঙ্গা, সর্বানন্দ, তারাপুর, বেলকা, পৌরসভা এলাকায় অ্যানথ্রাক্সের প্রার্দুভাব দেখা দিয়েছে। ইতোমধ্যে সর্বানন্দ, বামনডাঙ্গা, তারাপুর ও পৌরসভায় অ্যানথ্রাক্স টিকা প্রদান করা হয়েছে। অ্যানথ্রাক্স রোগে আক্রান্ত পশু পরিচর্যা করলে বা সেই পশু জবাই করে মাংস কাটাকাটি করলে মানুষের মাঝেও অ্যানথ্রাক্স রোগ ছরড়য়ে পড়তে পারে। সে কারণে অ্যানথ্রাক্স রোগে আক্রান্ত গরু-ছাগল কোন অবস্থাতেই জবাই করা যাবে না।
উপজেলা ভেটেরিনারি সার্জন মোজাম্মেল হক বলেন, উপজেলার বেশ কিছু এলাকায় অ্যানথ্রাক্স রোগের প্রকাপ দেখা দিয়েছে। পৌরসভায় দুটি গরু মারা গেছে। সাহাবাজ এলাকায় অ্যানথ্রাক্সের প্রার্দুভাব দেখা দেয়ায় ওই এলাকায় ইতোমধ্যে টিকা দেয়া হয়েছে। আমাদের মাঝে ১৩ হাজার টিকা রয়েছে। আমরা আরও চাহিদা পাঠিয়েছি।