শিক্ষার্থী-শ্রমিক সংঘর্ষের জেরে বরিশাল কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল নথুল্লাবাদ থেকে বন্ধ রয়েছে সকল আন্তঃজেলা ও দূরপাল্লার পরিবহন চলাচল। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন সাধারণ যাত্রীরা।
শনিবার (১৫ নভেম্বর) বরিশাল ব্রজমোহন কলেজের (বিএম কলেজ) শিক্ষার্থীদের সাথে হাফভাড়া নিয়ে বিরোধের পর বাস চলাচল বন্ধ ঘোষণা করে মালিক সমিতি। তার ধারাবাহিকতায় আজ রোববার টার্মিনাল থেকে কোনো বাস ছেড়ে যায়নি।
জানা যায়, মাত্র ৩০ টাকা ভাড়াকে কেন্দ্র করে বাস শ্রমিক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, গত বছর ১৮ আগস্ট মালিক সমিতির একটি অফিস আদেশে সরকারি ছুটির দিনসহ সর্বদা শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে হাফভাড়া নেয়ার কথা উল্লেখ থাকলেও হিজলা থেকে ছেড়ে আসা জোহান পরিবহনের এক সুপারভাইজার তা মানতে অস্বীকৃতি জানান। এ নিয়ে বাগবিতণ্ডার একপর্যায়ে শ্রমিকরা তিন শিক্ষার্থীকে মারধর করেন। খবর পেয়ে আরো শিক্ষার্থী জড়ো হলে তাদের ওপরও হামলা চালানো হয়। এতে ২৫ শিক্ষার্থী আহত হন।
তবে বাস শ্রমিকরা সেই অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, হিজলা থেকে ছেড়ে আসা জোহান পরিবহনের চালক হিরণ নথুল্লাবাদ বাস টার্মিনালের কাছে ফিলিং স্টেশনে পৌঁছানোর পর আগেই সেখানে উপস্থিত থাকা কয়েকজন শিক্ষার্থী এসে তাকে মারধর করে। এরপর উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লে কয়েক শতাধিক শিক্ষার্থী টার্মিনালের আশেপাশে জড়ো হয়ে বাস ভাঙচুর শুরু করে।
তারা আরো জানান, দুই শতাধিক বাস ভাঙচুর করা হয়েছে এবং নূর পরিবহনসহ দু’টি বাসে অগ্নিসংযোগ করেছে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা।
এদিকে গতকালের ঘটনার জেরে রোববার (১৬ নভেম্বর) সকাল থেকেই বরিশাল নথুল্লাবাদ কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল থেকে আন্তঃজেলা ও দূরপাল্লার সব বাস চলাচল সম্পূর্ণভাবে বন্ধ রয়েছে। তবে বাস বন্ধের নির্দেশনা কার পক্ষ থেকে এসেছে, মালিক সমিতি নাকি শ্রমিক সংগঠন তা স্পষ্টভাবে জানানো হয়নি।
প্রশাসন এখনো সমাধানের কোনো উদ্যোগ ঘোষণা না করায় সাধারণ যাত্রীরা চরম ভোগান্তির মধ্যে পড়েছেন। তবে রূপাতলী বাস টার্মিনাল থেকে বাস চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে।
শ্রমিক ইউনিয়ন সভাপতি শাহাদাত হোসেন লিটন বলেন, ‘আমরা অনির্দিষ্টকালের জন্য গাড়ি চলাচল বন্ধ রাখব। আমাদের যে গাড়িগুলো ভাঙচুর করা হয়েছে তার ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। অর্ধশত শ্রমিক আহত হয়ে চিকিৎসাধীন রয়েছে তাদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। একইসাথে পরে যেন এ ঘটনার পুনরাবৃত্তি না হয় তার নিশ্চয়তা দিতে হবে। এরপর গাড়ি চলাচল শুরু হবে।’
নথুল্লাবাদ বাস মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক মনোয়ার হোসেন বলেন, ‘গতকালের নৈরাজ্যে দু’ শ’ বাস সম্পূর্ণভাবে নষ্ট হয়ে গেছে। একাধিক পরিবহন কাউন্টারে ভাঙচুর করা হয়েছে। এত বড় ঘটনা ৪০ বছরে কখনো ঘটেনি। এমনকি মসজিদের ভেতরে আশ্রয় নেয়া শ্রমিকদেরকে মারধর করেছে শিক্ষার্থীরা। এতে অন্তত ৩০ জন শ্রমিক আহত হয়েছেন। প্রশাসন সুষ্ঠু বিচার না দেয়া পর্যন্ত গাড়ি রাস্তায় নামবে না। প্রয়োজনে অনির্দিষ্টকালের জন্য বাস চলাচল বন্ধ থাকবে।’
বরিশাল মেট্রোপলিটন এয়ারপোর্ট থানার ওসি আল মামুন উল ইসলাম বলেন, ‘শ্রমিক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়েছে। পরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চেষ্টায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। তবে এখনো কোনো পক্ষ থানায় অভিযোগ দেয়নি। বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে এবং সহিংসতা এড়াতে সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।’
অন্যদিকে, বরিশাল নগরীর রূপাতলী থেকে বাস চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। তবে একটি সূত্র জানায়, নথুল্লাবাদের ঘটনাকে কেন্দ্র করে একাত্মতা প্রকাশ করে রূপাতলীতেও পরিবহন বন্ধের সিদ্ধান্ত আসতে পারে।
তবে রূপাতলী বাস মালিক সমিতির সভাপতি জিয়াউদ্দিন সিকদার এই সম্ভাবনা নাকচ করে বলেন, ‘নথুল্লাবাদের ঘটনার সাথে আমাদের কোনো সম্পর্ক নেই। তাই রূপাতলী থেকে বাস চলাচলে বাধা তৈরি হবে না।



