বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের (ব্রি) একটি (বরিশাল) আঞ্চলিক কার্যালয়ের ঘটনাকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা বিরাজ করছে। ঘটনায় কর্মকর্তা ও শ্রমিকদের মধ্যে উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এ নিয়ে একে অপরের বিরুদ্ধে হামলার অভিযোগ তুলেছে।
রোববার (১৯ অক্টোবর) এ ঘটনায় প্রতিষ্ঠান এলাকায় পৃথক বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
কর্মকর্তা সূত্র জানায়, প্রকৌশলী মো: শহিদুল ইসলামের ওপর শ্রমিক নেতা আনোয়ার হোসেন হামলা চালান। শ্রমিক পক্ষের দাবি, আনোয়ার হোসেনকেই কর্মকর্তারা মারধর করেছেন। পরস্পরবিরোধী এ অভিযোগকে কেন্দ্র করে প্রতিষ্ঠানজুড়ে এখন অস্থিরতা বিরাজ করছে। এ সময় ‘ফ্যাসিস্টমুক্ত ব্রি চাই, সমৃদ্ধির জন্য ধান’ এ স্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে ব্রির প্রধান প্রাঙ্গণ।
জানা যায়, ৬ অক্টোবর ব্রি’র বরিশাল আঞ্চলিক কার্যালয়ে উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো: শহিদুল ইসলাম গাছ কেটে গ্যারেজ নির্মাণের বিষয়ে শ্রমিক আনোয়ার হোসেনকে প্রশ্ন করলে উভয়ের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। কিছুক্ষণের মধ্যেই ঘটনাটি হাতাহাতিতে রূপ নেয়। পরে ওই ঘটনার জের ধরেই উভয়ের পক্ষে তাদের সমর্থকরা একত্রিত হয়ে উত্তেজনা ছড়াতে থাকে।
অভিযোগ রয়েছে, শহিদুল ইসলামকে মারধরের পর শ্রমিকদের একাংশ প্রশাসনের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়। অন্যদিকে, শ্রমিক ইউনিয়নের পক্ষ থেকে দাবি করা হয় প্রকৌশলী শহিদুলই প্রথমে আনোয়ারের ওপর হামলা চালান, যার প্রতিবাদে তারা বিক্ষোভে নামতে বাধ্য হন।
কর্মকর্তা পক্ষের অভিযোগে বলা হয়, আনোয়ার নিয়মিত অফিসে উপস্থিত থাকেন না, খামার বিভাগের একটি কক্ষ দখল করে ব্যক্তিগত গুদাম বানিয়েছেন এবং টেন্ডার কাজে ভয়ভীতি প্রদর্শন করেন। তারা দাবি করেন, শহিদুল ইসলামের ওপর হামলা ছিল পরিকল্পিত ও প্রশাসনিক শৃঙ্খলার পরিপন্থী।
অন্যদিকে শ্রমিক ইউনিয়নের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে কিছু কর্মকর্তা শ্রমিকদের হয়রানি ও প্রভাবিত করার চেষ্টা করছেন। তারা বলেন, আনোয়ার হোসেনের ওপর অন্যায়ভাবে হামলা চালানো হয়েছে। অথচ উল্টো তাকেই বদলি করা হয়েছে—এটি নিপীড়নের অংশ।
ঘটনার জেরে ব্রি কর্তৃপক্ষ নিয়মিত শ্রমিক আনোয়ার হোসেনকে বদলি করে গোপালগঞ্জ আঞ্চলিক কার্যালয়ে প্রেরণ করেছে। একইসাথে উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
ব্রি মহাপরিচালক ড. মোহাম্মদ খালেকুজ্জামান বলেন, ‘প্রতিষ্ঠানের শৃঙ্খলা রক্ষা ও নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করতে আমরা তদন্ত কমিটি গঠন করেছি। প্রাথমিক তদন্তে যিনি দায়ী প্রমাণিত হবেন তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। আজ প্রকৌশলী শহিদুল ইসলামকে কুমিল্লা আঞ্চলিক কার্যালয়ে বদলি করা হয়েছে।’
তিনি আরো জানান, ‘কর্মকর্তা ও কর্মচারী কল্যাণ সমিতিকে আশ্বস্ত করা হয়েছে যে, প্রতিষ্ঠানটির ভাবমূর্তি রক্ষায় প্রশাসন নিরপেক্ষ অবস্থান বজায় রাখবে।’
রোববার সকাল থেকেই একদিকে কর্মকর্তা কল্যাণ সমিতির ব্যানারে অডিটরিয়ামে প্রতিবাদ সভা, অন্যদিকে শ্রমিক ইউনিয়নের ব্যানারে প্রশাসনিক ভবনের সামনে পাল্টা বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়। উভয়পক্ষই নিজেদের অবস্থান তুলে ধরে স্লোগান দেয়, ফলে পরিস্থিতি কয়েক দফা উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।
প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের একাংশ বলছেন, এটি প্রশাসনিক ব্যর্থতার ফল। দীর্ঘদিনের অনিয়ম, দুর্নীতি ও আদালতের আদেশ অমান্য করার প্রবণতাই আজ এ অস্থিরতা ডেকে এনেছে।
তারা জানান, ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে টানা সাত বছর মহাপরিচালকের দায়িত্বে থাকা ড. শাহজাহান কবিরের সময় থেকেই ব্রিতে দলীয়করণ, নিয়োগ বাণিজ্য ও প্রশাসনিক সিন্ডিকেট গড়ে ওঠে বলে অভিযোগ রয়েছে। সরকার পরিবর্তনের পরেও পুরনো প্রভাবশালী মহল সক্রিয় থাকায় নতুন ডিজি ড. খালেকুজ্জামানও এখন পর্যন্ত দৃশ্যমান পরিবর্তন আনতে পারেননি বলে অনেকে মনে করেন।
অন্যদিকে, সাবেক হিসাবরক্ষক তাহমিনা সরোয়ারের চাকরি আত্মীকরণসংক্রান্ত আদালতের রায় বাস্তবায়ন না হওয়ায় কৃষি মন্ত্রণালয় সম্প্রতি ডিজিকে শোকজ করেছে, যা ব্রির প্রশাসনিক জটিলতা আরো বাড়িয়ে তুলেছে।
সর্বশেষ খবর পর্যন্ত উভয় পক্ষই অবস্থান কর্মসূচি স্থগিত করেনি। ব্রি প্রশাসন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সতর্ক অবস্থান নিয়েছে। তবে কর্মকর্তা ও শ্রমিকদের পারস্পরিক অবিশ্বাসে দেশের প্রধান কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠানটি কার্যত স্থবির হয়ে পড়েছে।
গবেষণা, পরীক্ষণ ও মাঠ কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ায় সাধারণ কর্মচারী ও গবেষকরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তাদের মতে, যত দ্রুত সম্ভব নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে দোষী চিহ্নিত না করা গেলে ব্রির গবেষণা পরিবেশ চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।



