সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারে পানি সঙ্কট ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। কারাগারে থাকা আটটি পাম্পের চারটিই বন্ধ হয়ে গেছে। এরমধ্যে গত কয়েকদিন থেকে চালু থাকা আরো একটি পাম্প বন্ধ হয়ে যায়। ফলে পানি সঙ্কট আরো তীব্র হয়েছে। এতে তীব্র গরমের মধ্যে দুর্ভোগে পড়েছেন কারাগারে থাকা ১৫ শতাধিক বন্দী।
কারা কর্তৃপক্ষ বিকল্প ব্যবস্থায় পানি সরবরাহ করছেন বলে জানালেও বন্দীরা জানিয়েছেন, তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। তাই বাধ্য হয়ে অনেকেই কারা অভ্যন্তরে থাকা পিসি (দোকান) থেকে খাবার পানি ক্রয় করে প্রয়োজনীয় চাহিদা মেটাতে বাধ্য হচ্ছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সিলেট শহরতলীর বাদাঘাটে অবস্থিত সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারে বর্তমানে ১৫ শতাধিক বন্দী রয়েছেন। কারাগারে থাকা বন্দীদের পানির প্রয়োজন মেটাতে কারা অভ্যন্তরে রয়েছে আটটি পানির পাম্প। গত কয়েক মাস ধরে আটটির মধ্যে চারটি পাম্প পুরোপুরি অচল রয়েছে। ফলে চারটি পাম্প দিয়েই ১৫ শতাধিক বন্দীর পানির চাহিদা পূরণ করছিলেন কারা কর্তৃপক্ষ। কিন্তু গত কয়েকদিন থেকে চালু থাকা চারটির মধ্যে আরো একটি পাম্প বন্ধ হয়ে যায়। ফলে পানি সঙ্কট ভয়াবহ আকার ধারণ করে।
গত শনিবার (২৬ জুলাই) এক বন্দীর আত্মীয় কারাগারে উনার সাথে দেখা করতে গেলে বিষয়টি জানান। এরপর তিনি এই প্রতিবেদককে জানালে বিষয়টি কারাগারের বাইরে জানাজানি হয়।
চারটি অচল এবং চালু থাকা চারটির আরো একটি পাম্প বন্ধ হলেও কারাগারে পানি সঙ্কট মানতে নারাজ কারা কর্তৃপক্ষ। কারা সংশ্লিষ্টরা জানান, পাম্প বন্ধ থাকলেও বিকল্প ব্যবস্থায় সেই সঙ্কট দূর করার চেষ্টা চলছে। আর সর্বশেষ বন্ধ হওয়া পাম্পটি চালু করতে তারা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের সাথে যোগাযোগ করেন। কিন্তু তারা বিষয়টি সমাধানের জন্য সিলেট সিটি করপোরেশনের সংশ্লিষ্ট শাখার সাথে যোগাযোগের পরামর্শ দেন।
সিটি করপোরেশনের প্রকৌশলী বিভাগের একটি প্রতিনিধি দল রোববার (২৭ জুলাই) পাম্প পরিদর্শনে যান। বিষয়টি তারা সিসিকের প্রকৌশলী বিভাগকে (পানি শাখা) অবহিত করবেন। এরপর পাম্পটি চালুর উদ্যোগ নেয়া হবে। এমন পরিস্থিতিতে সহসাই পাম্প চালুর সম্ভাবনা দেখছেন না সিসিকের প্রকৌশলী বিভাগ। এতে পানি সঙ্কট দীর্ঘায়িত হওয়ার আশঙ্কায় রয়েছেন ১৫ শতাধিক কারাবন্দী।
এ ব্যাপারে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর সিলেট জেলার নির্বাহী প্রকৌশলী মো: আবুল কাশেম দৈনিক নয়া দিগন্তকে জানান, সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে পানির পাম্প বন্ধের বিষয়টি জানিয়ে আমাকে একটি পত্র দেয়া হয়েছিল। যেহেতু কারাগারটি সিটি করপোরেশনের এলাকায় অবস্থিত তাই আমি তাদেরকে সিসিকের সাথে যোগাযোগের পরামর্শ দেই। আমরা মূলত ব্যক্তিগত ও প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে টিউবওয়েল ও ডিপ টিউবওয়েল স্থাপনের বিষয়টি দেখে থাকি। বড় বড় পাম্পগুলোর ব্যাপারে আমাদের কিছুই করার থাকে না।
সিলেট সিটি করপোরেশনের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আলী আকবর দৈনিক নয়া দিগন্তকে জানান, শনিবার (২৬ জুলাই) আমাদেরকে কারাগার থেকে পাম্প বন্ধ হওয়ার বিষয়টি জানানো হয়। আমরা রোববার (২৭ জুলাই) একটি টিম কারাগারে পাঠিয়েছি। তারা বিষয়টি পর্যবেক্ষণের করে আমাদেরকে জানাবে। এরপর আমরা পদক্ষেপ নেব। তবে পাম্পটি কবে নাগাদ চালু হবে সেটা এখনই নির্দিষ্ট করে বলা যাচ্ছে না। ত্রুটির বিষয়টি জানার পর সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার তরিকুল ইসলাম দৈনিক নয়া দিগন্তকে জানান, আমি সম্প্রতি সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারে যোগদান করেছি। তাই চারটি পাম্প কবে থেকে অচল সেটা বলতে পারছি না। তবে চালু থাকা চারটি পাম্পের মধ্যে একটি বন্ধ হওয়ায় কিছুটা পানি সঙ্কট দেখা দিয়েছে। আমরা বিকল্প ব্যবস্থায় তা সমাধানের চেষ্টা করছি। সংশ্লিষ্ট বিভাগকে বিষয়টি জানিয়েছি। আশা করছি, দ্রুততম সময়ে সমাধান হবে।