গাজীপুরে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে নিহত হৃদয়ের লাশ উদ্ধারে তুরাগ নদীতে অভিযান

‘আমার ভাইকে পুলিশ গুলি করে মেরেছে এর ভিডিও সব জায়গায় আছে। অথচ আজও আমার ভাই শহীদের মর্যাদা পায় নাই।’

মোহাম্মদ আলী ঝিলন, গাজীপুর
গাজীপুরে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে নিহত হৃদয়ের লাশ উদ্ধারে তুরাগ নদীতে অভিযান
গাজীপুরে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে নিহত হৃদয়ের লাশ উদ্ধারে তুরাগ নদীতে অভিযান |নয়া দিগন্ত

গত বছর ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের সময় গাজীপুরের কোনাবাড়িতে পুলিশের গুলিতে নিহত কলেজছাত্র হৃদয়ের লাশ উদ্ধারে অভিযান চালিয়েছে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল।

বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত তুরাগ নদীতে এ উদ্ধার অভিযান চালালেও লাশের সন্ধান পাওয়া যায়নি। এ সময় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের কর্মকর্তা ও পুলিশ সদস্যরাসহ নিহতের স্বজনেরা উপস্থিত ছিলেন।

নিহত কলেজ ছাত্র হৃদয় (২০) টাঙ্গাইলের গোপালপুরের আলমগর গ্রামের লাল মিয়ার ছেলে। তিনি হেমনগর ডিগ্রি কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্র ছিলেন।

নিহতের স্বজনরা জানান, লেখাপড়ার পাশাপাশি গাজীপুরের কোনাবাড়ী এলাকায় বসবাস করে অটোরিকশা চালাতেন কলেজ ছাত্র হৃদয়। গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের সময় কোনাবাড়িতে পুলিশের গুলিতে নিহত হন তিনি।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, হৃদয় হত্যার ঘটনায় তার ফুপাতো ভাই ইব্রাহিম কোনাবাড়ি থানায় মামলা করেন। মামলায় সাবেক মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আজমত উল্লাহ খান, সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমকে হুকুমের আসামিসহ প্রায় ৩ শ’ লোককে আসামি করা হয়। এ হত্যাকাণ্ডের একটি ভিডিও চিত্র ভাইরাল হলে গাজীপুর শিল্প পুলিশের কনস্টেবল আকরাম হোসেনকে গ্রেফতার করা হয়।

মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের ইন্সপেক্টর সাইফুল ইসলাম জানান, এ ঘটনায় পুলিশ কনস্টেবলসহ ১১জনকে এ পর্যন্ত গ্রেফতার করা হয়। এদের মধ্যে যে গাড়িতে করে নিহতের লাশ তুরাগ নদীতে ফেলা হয়েছিল ওই গাড়ির চালককে সম্প্রতি গ্রেফতার করা হয়। তার দেয়া তথ্য ও দেখানো মতে তুরাগ নদীর কড্ডা এলাকায় বৃহস্পতিবার অভিযান চালানো হয়।

গাজীপুর ফায়ার সার্ভিসের উপ-সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ মামুন বলেন, ‘হৃদয়ের লাশ খুঁজতে গাজীপুর ফায়ার সার্ভিসের চার সদস্যের ডুবুরি দলের দল সকাল ১০টার দিকে কড্ডা এলাকায় তুরাগ নদীতে অভিযান শুরু করে। বিকেল ৩টা পর্যন্ত নদীর ভাটির দিকে প্রায় তিন কিলোমিটার এলাকাব্যাপী অভিযান চালিয়েও লাশের সন্ধান পাওয়া যায়নি। এ সময় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পরিদর্শক মাসুদ পারভেজ, মহানগর পুলিশ ও নিহতের স্বজনরা উপস্থিত ছিলেন।

অভিযানের সময় নিহতের বড় বোন জেসমিন আক্তার উপস্থিত ছিলেন।

তিনি বলেন, ‘আমার ভাইকে পুলিশ গুলি করে মেরেছে এর ভিডিও সব জায়গায় আছে। অথচ আজও আমার ভাই শহীদের মর্যাদা পায় নাই।’

তিনি আরো বলেন, ‘আমার ভাইয়ের লাশের সন্ধান পেতে আরো দু-এক বছর লাগলেও আমি আশাবাদী। কারণ আমার ভাইয়ের হাঁড়ও যদি পাই, তা দেশে নিয়ে মাটি দিতে পারলে আমার বাবা-মা’র আত্মা শান্তি পাবে। তারা সবসময়ই কান্নাকাটি করেন। ভাইয়ের লাশ আমাদের পারিবারিক গোরস্তানে নিয়ে মাটি দিতে পারলে তাদের কষ্ট কিছুটা হলেও দূর হতো।’