নতুন ও মানবিক বাংলাদেশ গড়তে দলমত, ধর্মবর্ণ, জাতি-গোষ্ঠী নির্বিশেষে জামায়াতে ইসলামীর নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ ভূমিকা রাখার আহ্বান জানিয়ে দলের সেক্রেটারি জেনারেল সাবেক এমপি মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেছেন, ‘বাংলাদেশে কেউ সংখ্যালঘু নয়, সকলেই রাষ্ট্রের নাগরিক হিসেবে সমান মর্যাদার অধিকারী।
বৃহস্পতিবার (১৪ আগস্ট) সকাল ৭টার দিকে খুলনা জেলার ডুমুরিয়া উপজেলার ১০নম্বর ভান্ডারপাড়া ইউনিয়ন হিন্দু কমিটির উদ্যোগে বান্দা স্কুল অ্যান্ড কলেজ মিলনায়তনে হিন্দু সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ আহ্বান জানান।
মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের সংখ্যালঘু বানিয়ে নাগরিক অধিকার বিনষ্টকারীরাই মূলত রাজনৈতিক ফায়দা লুটে নেয়ার চেষ্টা করেছে। ইসলামের ছায়াতলে সকল মানুষ নিরাপদ এবং নির্বিঘ্নে স্বাধীনভাবে ধর্ম পালনের সুযোগ রয়েছে। ইসলাম জোরপূর্বক কারো উপর কিছু চাপিয়ে দেয় না। বরং এ বিষয়ে ইসলামে কঠোর শাস্তির বিধান রয়েছে।’
ইউনিয়ন সভাপতি ডা: নিত্যরঞ্জন রায়ের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক অর্ধেন্দু মন্ডলের পরিচালনায় বিশেষ অতিথি ছিলেন খুলনা জেলা জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি মুন্সি মিজানুর রহমান, সহকারী সেক্রেটারি অধ্যাপক মিয়া গোলাম কুদ্দুস, জেলা কর্মপরিষদ সদস্য অ্যাডভোকেট আবু ইউসুফ মোল্যা, ডুমুরিয়া উপজেলা আমির মাওলানা মোক্তার হোসেন, নায়েবে আমির মাওলানা হাবিবুর রহমান, ডুমুরিয়া উপজেলা হিন্দু কমিটির সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ দেব প্রসাদ মন্ডল।
অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন- বান্দা কলেজের অধ্যক্ষ সৌমেন মন্ডল, বিশিষ্ট গাইনী বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা: প্রকাশ চন্দ্র মজুমদার, অ্যাডভোকেট বিপুল মন্ডল, মাওলানা কামরুজ্জামান, মাওলানা আসাদুজ্জামান, খুলনা জেলা ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি বেলাল হোসেন রিয়াদ, মাওলানা আইয়ুব আলী, অধ্যাপক রমেশ চন্দ্র, অধ্যাপক গৌতম রায়, দিপংকর ঢালী, প্রীতিশ মন্ডল, দূর্বাদল বিশ্বাস, সঞ্জয় বৈরাগী প্রমুখ।
জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আরো বলেন, ‘এই দেশের সব নাগরিক সমান অধিকার পাবে। মুসলিম, অমুসলিম সবাই নিজ নিজ ধর্মীয় অধিকার পালন করার সুযোগ পাবেন। আমরা এই সংগ্রাম করছি, চেষ্টা করছি একটি মানবিক কল্যাণকর রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে। যেখানে সবার জান-মাল, ইজ্জত, উপাসনালয় সবকিছুর নিরাপত্তার গ্যারান্টি দিতে পারব।’
তিনি বলেন, ‘আমরা সম্প্রীতির বাংলাদেশ গড়তে চাই, আধুনিক সুন্দর সমৃদ্ধপূর্ণ ও সন্ত্রাসমুক্ত দেশ গড়তে চাই। দেশ, মানুষ, দল-মত, জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে হিন্দু-মুসলিম বৌদ্ধ-খ্রিস্টান সবাই মিলেই আমাদের এই প্রিয় দেশটাকে আমরা আগামী দিনে সুন্দরভাবে সাজাব। সর্বপরি একটি মানবিক বাংলাদেশ গড়তে চাই। এ জন্য সকলকে দাড়িপাল্লা প্রতীকে ভোট দিয়ে বিজয়ী করে সৎ নেতৃত্বকে সংসদে পাঠাতে হবে। সৎ যোগ্য নেতৃত্ব দিয়ে সরকার গঠন করতে পারলে জনগণ মানবিক বাংলাদেশের সুফল পাবে ইনশাআল্লাহ।’
‘জামায়াতে ইসলামী শান্তির সমাজ গঠনে কাজ করছে’ উল্লেখ করে মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘ইসলাম শান্তির ধর্ম, সেই শান্তি সমাজে ছড়িয়ে দিতে হলে ইসলামী সমাজ বিনির্মাণ করতে হবে। হিন্দুদের বন্ধু সেজে যারা হিন্দুদের সম্পদ দখল করেছে, হিন্দুদের ওপর জুলুম করেছে তারা এসব অপবাদ ইসলামী দলগুলোর ওপর চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা করলেও হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন সাক্ষ্য দিচ্ছে, কোনো ইসলামী দল তাদের ওপর জুলুম করেনি। বরং জামায়াতে ইসলামী তাদের সম্পদ রক্ষায় ভূমিকা রেখেছে।’
তিনি বলেন, ‘কোরআনে বলা হয়েছে-ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করা যাবে না। জোরপূর্বক কারো উপর কিছু চাপিয়ে দেয়ার অধিকার কোনো মানুষের নাই। ইসলাম সম্পর্কে আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় মিথ্যা ও অপপ্রচার চালানো হয়। যা ইসলামী সমাজে বাস্তবতার সাথে কোনো মিল নেই। ইসলাম শান্তির ধর্ম, ইসলামের ছায়াতলে সকল মানুষ নিরাপদ ও স্বাধীন। বাংলাদেশে ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হলে, ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের ধর্মীয় উপাসনালয় পাহারা দিতে হবে না। নিজ নিজ ধর্ম স্বাধীনভাবে পালনের নিশ্চয়তা রাষ্ট্র কর্তৃক প্রদান করা হবে।’
সকাল ১০টার দিকে ৯ নম্বর সাহস ইউনিয়ন পরিষদ মাঠে ভোটার সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, দেশের মানুষ জীবন এবং রক্ত দিয়ে হলেও একটি সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন আদায় করবে।’
তিনি বলেন, ‘জামায়াতে ইসলামী নির্বাচনে যেতে চায়, কিন্তু তার আগে সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন হওয়ার বিষয়গুলো জনগণের সামনে তুলে ধরতে হবে। নির্বাচনের জন্য আনন্দমুখর পরিবেশ তৈরি করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা নির্বাচনের আগেই দেখছি, কোনো কোনো দলের কেন্দ্রীয় নেতারা নির্বাচনে দাঁড়িপাল্লায় ভোট দিলে জিহ্বা কেটে দেয়া হবে বলে ঘোষণা দিচ্ছেন। আমরা লক্ষ করছি, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি ঘোষণা করছেন; কিন্তু এখনো জিহ্বা কেটে নেয়ার কথা বলা এই সন্ত্রাসীকে কেন গ্রেফতার করতে পারেননি?
মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘বিগত তিনটি নির্বাচনে জনগণ ভোট দিতে পারে নাই। ১৪ সালে বিনা ভোটে ১৫৪ জন এমপি নির্বাচিত হয়। ১৮ সালে দিনের ভোট রাতে হয়ে যায়। আমি প্রার্থী আমাকেই ভোট দিতে দেয়া হয়নি। বলা হয়েছিল এলাকা ছেড়ে চলে যান নইলে গ্রেফতার করা হবে। ভোটাররা ভোট দিতে গেলে বলা হয়- ভোট দিতে হবে না ভোট দেয়া হয়ে গেছে। ২৪ সালে আমরা সকল বিরোধীদল বলি নিরপেক্ষ কেয়ারটেকার সরকার ছাড়া নির্বাচন নিরপেক্ষ হবে না বলে আমরা নির্বাচন বর্জন করি। তারা আমি আর মামু, আমি আর ডামি, মার্কা নির্বাচন করে। ১৫ বছর জনগণ ভোট দিতে পারে নাই।’
তিনি বলেন, ‘বিনা ভোটের সরকার ১৫ বছর, গুম, খুন, মিথ্যা মামলা দিয়ে আলেম-ওলামা, বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করে ফাঁসি দিয়ে অত্যাচার জুলুম নির্যাতনের স্ট্রিম রোলার চালিয়েছে। তারা ঘুষ দুর্নীতির মাধ্যমে গাড়ি-বাড়ি করেছে। হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছে। জনগণের মধ্যে প্রচন্ড ক্ষোভের জন্ম হয়, যার পেক্ষিতে প্রচন্ড গণবিস্ফোরণের মাধ্যমে ২৪ এর জুলাই-আগস্টের ছাত্র-জনতার ইস্পাত কঠিন ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মাধ্যমে স্বৈরাচার হাসিনা পতনের পর আমরা নতুন বাংলাদেশ ও দ্বিতীয় স্বাধীনতা পেয়েছি। অনেকেই প্রশ্ন করে বলেন-নতুন বাংলাদেশ আর দ্বিতীয় স্বাধীনতা কি? ৪৭ ও ৭১ এ যে সীমানা ছিল তাই আছে। জাতীয় সংগীত, জাতীয় পতাকা একই আছে তাহলে কিসের নতুন বাংলাদেশ। আমাদের আমিরে জামায়াত বলেছেন- ফ্যাসিবাদ মুক্ত দেশ যেখানে মিথ্যা মামলায় আলেম-ওলামা বিরোধীদলের লোকদের জেল জুলুম অত্যাচার, সন্ত্রাস, ঘুষ দুর্নীতি থাকবে না এমন একটি বাংলাদেশ গড়তে চাই, যেখানে মানবিক বাংলাদেশ হকার কুলি, মজুর দোকানদার সকলেই শান্তিতে থাকবে।
ইউনিয়ন সভাপতি আব্দুল হান্নানের সভাপতিত্বে ও সেক্রেটারি মাওলানা রবিউল ইসলামের পরিচালনায় ভোটার সমাবেশে বিশেষ অতিথি জেলা সেক্রেটারি মুন্সি মিজানুর রহমান, সহকারী সেক্রেটারি অধ্যাপক মিয়া গোলাম কুদ্দুস, জেলা কর্মপরিষদ সদস্য অ্যাডভোকেট আবু ইউসুফ মোল্যা, উপজেলা আমির মাওলানা মোক্তার হোসেন, নায়েবে আমির মাওলানা হাবিবুর রহমান, উপজেলা হিন্দু কমিটির সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ দেব প্রসাদ মন্ডল, মাওলানা আজহারুল ইসলাম।
অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন- মাওলানা শফিকুল ইসলাম, উপজেলা হিন্দু কমিটির কোষাধ্যক্ষ গৌতম কুমার মন্ডল, মাওলানা মনিরুল ইসলাম, মাওলানা আব্দুল হাকিম, মাওলানা আব্দুল আহাদ, ইসলামী আন্দোলনের ইউনিয়ন সভাপতি মাওলানা বায়জিদ হোসেন, খেলাফত মজলিসের ইউনিয়ন সভাপতি হাফেজ ইলিয়াস হোসেন, ইউনিয়ন হিন্দু কমিটির সাধারণ সম্পাদক প্রভাস বিশ্বাস প্রমুখ।
দুপুর ১২টার দিকে সাজিয়াড়া মাদরাসা শিক্ষক ও ছাত্রদের সাথে মতবিনিময় করেন মিয়া গোলাম পরওয়ার।
মাদরাসার মুহতামিম মাওলানা মোস্তাক আহমেদের সভাপতিত্বে ও মাওলানা আব্দুল গফফারের পরিচালনায় বক্তব্য রাখেন মাদরাসার সভাপতি অধ্যাপক মুফতি আবদুল কাইয়ুম জোমাদ্দার, মুফতি শহিদুল ইসলাম মুফতি মোশাররফ হোসেন।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি মুন্সি মিজানুর রহমান, সহকারী সেক্রেটারি অধ্যাপক মিয়া গোলাম কুদ্দুস, জেলা কর্মপরিষদ সদস্য অ্যাডভোকেট আবু ইউসুফ মোল্যা, উপজেলা আমির মাওলানা মোক্তার হোসেন, ডুমুরিয়া ইউনিয়ন সভাপতি আব্দুল গণি খান, সেক্রেটারি মশিউর রহমান, হাফেজ আমিনুল ইসলাম প্রমুখ।
বেলা ৩টার দিকে বাদুড়িয়া বাজারে পথ সভা অনুষ্ঠিত হয়। ইউনিয়ন আমির মাওলানা আব্দুল হালিমের সভাপতিত্বে ও সেক্রেটারি মাওলানা আব্দুল মুত্তালিবের পরিচালনায় প্রধান অতিথির বক্তৃতা করেন মিয়া গোলাম পরওয়ার।
মাগুরাঘোনা ইউনিয়ন জামায়াতে ইসলামীর উদ্যোগে বিকেল ৪টার দিকে ঘোষড়া স্কল মাঠে পথ সভা ও বিকেল ৫টার দিকে আরশনগর নতুনহাটে ভোটার সমাবেশ ইউনিয়ন আমির মাওলানা আব্দুল হালিম সভাপতিত্বে প্রধান অতিথির বক্তৃতা করেন মিয়া গোলাম পরওয়ার।
আরো বক্তৃতা করেন ডা: আবদুল মান্নান, মাওলানা মোতালেব হুসাইন, হাফেজ রবিউল ইসলাম, মাওলানা মতিউর রহমান, হাফেজ মঈন উদ্দীন, রফিকুল ইসলাম, শামিদুল হাসান লিমন প্রমুখ।
এ ছাড়া সন্ধ্যায় ফুলতলা উপজেলা পথেরবাজারে পথসভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতা করেন সেক্রেটারি জেনারেল সাবেক এমপি মিয়া গোলাম পরওয়ার। আটরা ১ নম্বর ওয়ার্ড সভাপতি মনিরুল ইসলামের সভাপতিত্বে পথসভায় বক্তব্য রাখেন জেলা জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি গাউসুল আজম হাদী, জেলা কর্মপরিষদ সদস্য শেখ সিরাজুল ইসলাম, খানজাহান আলী থানা আমির হাসান মাহমুদ টিটো, ফুলতলা উপজেলা আমির অধ্যাপক আব্দুল আলী মোল্লা প্রমুখ।