উখিয়ায় খুন ও ডাকাতি মামলার মূলহোতা শরিফ্যা ডাকাত গ্রেফতার

গ্রেফতার আহমদ শরিফ ওরফে ‘শরিফ্যা ডাকাত’ পূর্ব নুরার ডেইলের ওমর মিয়ার ছেলে। তার বিরুদ্ধে একাধিক ডাকাতি, ছিনতাই ও অস্ত্র মামলার রেকর্ড রয়েছে। অপরদিকে তার সহযোগী রেজাউল করিম বাবুল পশ্চিম রত্নাপালংয়ের ছৈয়দ আলমের ছেলে।

হুমায়ুন কবির জুশান, উখিয়া (কক্সবাজার)

Location :

Ukhia
উখিয়ায় খুন ও ডাকাতি মামলার মূলহোতা শরিফ্যা ডাকাত গ্রেফতার
উখিয়ায় খুন ও ডাকাতি মামলার মূলহোতা শরিফ্যা ডাকাত গ্রেফতার |নয়া দিগন্ত

কক্সবাজারের উখিয়ার জালিয়াপালং ইউনিয়নের নিদানিয়া গ্রামে সংঘটিত ভয়াবহ ডাকাতি ও হত্যাকাণ্ডের প্রধান অভিযুক্ত কুখ্যাত শরিফ্যা ডাকাত ও তার সহযোগী রেজাউল করিম বাবুলকে গ্রেফতার করেছে র‍্যাব-১৫। গোপন তথ্যের ভিত্তিতে পরিচালিত অভিযান শেষে মঙ্গলবার রাতে উখিয়ার পূর্ব নুরার ডেইল এলাকা থেকে তাদের আটক করা হয়।

বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই) বিকেল ৩টার দিকে কক্সবাজার র‍্যাব কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য নিশ্চিত করেন র‍্যাব-১৫ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল কামরুল ইসলাম।

কামরুল ইসলাম জানান, গ্রেফতারের সময় তাদের হেফাজত থেকে চারটি দেশীয় তৈরি আগ্নেয়াস্ত্র, একটি তাজা গুলি এবং একটি খালি কার্তুজ উদ্ধার করা হয়। ২৩ জুন রাত ১টার দিকে নিদানিয়া এলাকার মরহুম নুরুল আমিন ও তার ভাই হাসান আলীর বাড়িতে একদল মুখোশধারী ডাকাত হানা দেয়। শরিফ্যার নেতৃত্বাধীন ৭–৮ জনের এই সশস্ত্র দল ঘরে ঢুকে পরিবারের সদস্যদের হাত-পা বেঁধে জিম্মি করে মালামাল লুট করে নেয়। ডাকাতি ঠেকাতে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হন গৃহকর্তা নুরুল আমিন। পরে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে নেয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

পরদিন নিহতের স্ত্রী উখিয়া থানায় একটি হত্যা ও ডাকাতি মামলা করেন (দণ্ডবিধির ৩৯৬ ধারা)। মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, মালয়েশিয়ায় প্রবাসজীবনের সময় শরিফ, ভুক্তভোগী নুরুল আমিনের স্ত্রীকে কুপ্রস্তাব দিয়ে উত্ত্যক্ত করত। সেই ঘটনা থেকেই দুই পরিবারের মধ্যে ব্যক্তিগত শত্রুতার সূচনা হয়। যা পরিণত হয় ভয়াবহ হত্যাকাণ্ডে।

গ্রেফতার আহমদ শরিফ ওরফে ‘শরিফ্যা ডাকাত’ পূর্ব নুরার ডেইলের ওমর মিয়ার ছেলে। তার বিরুদ্ধে একাধিক ডাকাতি, ছিনতাই ও অস্ত্র মামলার রেকর্ড রয়েছে। অপরদিকে তার সহযোগী রেজাউল করিম বাবুল পশ্চিম রত্নাপালংয়ের ছৈয়দ আলমের ছেলে।

র‍্যাব জানায়, চাঞ্চল্যকর এ ঘটনায় জড়িত অন্য ডাকাত সদস্যদেরও শনাক্ত করা হয়েছে এবং তাদের গ্রেফতার করতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

গ্রেফতারের সময় উদ্ধার হওয়া অস্ত্রগুলোর মধ্যে রয়েছে চারটি দেশীয় তৈরি ওয়ান শুটার গান, একটি তাজা গুলি এবং একটি খালি কার্তুজ। র‍্যাবের দাবি, এই অস্ত্রগুলোই ওই রাতের ডাকাতি ও গুলির ঘটনায় ব্যবহৃত হয়েছিল। এ বিষয়ে র‍্যাব-১৫ এর অধিনায়ক বলেন, ‘আমরা তথ্য-প্রযুক্তি ও গোয়েন্দা সূত্র ব্যবহার করে আসামিদের অবস্থান শনাক্ত করি। আমাদের টিম নির্ভুলভাবে অভিযান পরিচালনা করে তাদের আটক করে এবং অস্ত্র উদ্ধার করে। এই গ্রেপ্তারের খবরে এলাকায় ব্যাপক স্বস্তি ফিরে এসেছে।’

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, গত কয়েক মাস ধরে শরিফ্যার দল বিভিন্ন এলাকায় সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালিয়ে আসছিল। তার গ্রেফতারের মধ্য দিয়ে একটি আতঙ্কের সমাপ্তি ঘটেছে।

স্থানীয় প্রবীণ বাসিন্দা আব্দুল হান্নান বলেন, ‘শরিফ্যার নাম শুনলেই মানুষ আতঙ্কে ছিল। এত বড় অপরাধী এতদিন পলাতক ছিল—এটা খুব দুঃখজনক। আমরা এই হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত সকলের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। গত ২৩ জুন রাতে গৃহে ঢুকে ডাকাতির সময় গুলি করে হত্যা করা হয় নুরুল আমিনকে স্ত্রীকে উত্ত্যক্ত করার শত্রুতার জেরেই এই হত্যাকাণ্ড বলে অভিযোগ ৩ জুলাই র‍্যাব-১৫ এর অভিযানে প্রধান আসামি শরিফ্যা ডাকাত ও সহযোগী গ্রেফতার

উদ্ধার অস্ত্র: চারটি দেশীয় বন্দুক, একটি রাউন্ড গুলি ও একটি খালি খোসা। মামলার তদন্ত চলমান, অন্য অভিযুক্তদের ধরতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।