কুষ্টিয়া সিভিল সার্জন অফিসের নিয়োগ প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনায়প্রাথমিকভাবে জড়িত থাকার অভিযোগে কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক জাহাঙ্গীর আলমের অপসারণ ও নিয়োগ পরীক্ষা বন্ধের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেছে দুর্নীতি বিরোধী ছাত্র জনতা।
রোববার বেলা ১২টার দিকে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে হাজার হাজার ছাত্র জনতার অংশগ্রহণে এই কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়।
বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন আপ বাংলাদেশ পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা সুলতান মারুফ তালহা, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক নেতা মোস্তাফিজুর রহমান, ম্সেতাফিজুর রহমান পলাশ, আলী মুজাহিদ, ইমরান হোসেন প্রমুখ।
বক্তারা সিভিল সার্জন অফিসের নিয়োগ পরিক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস করে ইতিমধ্যে কুষ্টিয়া দুদকের প্রাথমিক তদন্তে কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বি) জাহাঙ্গীর আলমের নাম উঠে এসেছে। তিনি প্রশ্ন পত্র তৈরি কাজে সিভিল সার্জনকে অসহযোগিতা করে নিজের ল্যাপটপে অফিসের স্টাফ এনে কম্পোজ করেছেন যা নিয়মবহির্ভুত ও দুর্নীতির শামিল।
এ ব্যাপারে সিভিল সার্জন ডা: শেখ মোহাম্মদ কামাল হোসেন প্রতিবাদ জানালে তিনি তার সাথে খারাপ আচরণ করেছেন যা শিষ্টাচার বর্হিভুত। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সিভিল সার্জননের অফিস কক্ষের সার্কিট বন্ধ করে ওই রুমের সিসি ক্যামেরার বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেন দিয়েছিলেন। দুদুকের প্রাথমিক তদন্তের এসব ঘটনার সততা প্রমাণিত হয়েছে কিন্তু এখন তিনি বহাল তবিয়তে দায়িত্বে আছেন।
বক্তারা অনতিবিলম্ভে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ও জেলা প্রশাসকের অপসারণ দাবি করে বলেন, একজন আইনের প্রশাসক হয়ে কিভাবে তিনি প্রকাশ্যে গায়ের জোর খাঁটিয়ে অন্যদের প্রভাবিত করে অনৈতিক কার্যক্রম করেন তা বিস্ময়কর ও লজ্জাজনক।
বক্তারা বলেন, দেশের আপানার ছাত্র জনতার জীবনের বিনিময়ে দুর্নীতিমুক্ত ও নুতন বাংলা গড়ার প্রত্যায়ে ছাত্র জনতার অর্জন এই ধরনের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারাদের দ্বারা প্রকাশ্যে সংঘঠিত হওয়া খুবই দুঃখজনক। অনতিবিলম্বে তাদের শাস্তির আওতায় আনা সেই সাথে সিভিল সার্জন অফিসেরর নিয়োগ কার্যক্রম বন্ধ করে পুনরায় মেধাবীদের জন্য এই সুযোগ করে দিতে হবে। অন্যথায় আরো কঠোর আন্দোলনে যেতে বাধ্য হবো। পরে জেলা প্রশাসকের নিকট একটি স্মারক লিপি প্রদান করা হয়।
উল্লেখ্য, কুষ্টিয়া সিভিল সার্জন অফিসের নিয়োগকে কেন্দ্র গত ২৪ অক্টোবর পরীক্ষার আগের রাতে কিছু পরীক্ষার্থীকে আলাদা ক্লাস করে প্রশ্নপত্র তাদের হাতে তুলে দেয়। এ বিষয়টি কুষ্টিয়ার সাংবাদিকদের নজরে আসলে সাংবাদিকদের তৎপরতায় শুক্রবার ভোরে শহরের টালিপাড়া ও কালিশংকপুর এলাকায় বিভিন্ন ফুটেজ সংগ্রহে বিষয়টি সকলের নজরে আসে এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যাপক আলোচিত হয়। ওই ঘটনায় নাম উঠে আসে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের আরএমও ডা: হোসেন ইমাম এবং তার বড় ভাই সিভিল সার্জন অফিসের উপ-সহকারী স্বাস্থ্য কর্মকর্তা হাসান ইমাম নান্নুর।
দেশব্যাপী ব্যাপক আলোচিত এই দুর্নীতির বিষয়টি নিয়ে দুদক এবং সরকারের সকল গোয়েন্দা সংস্থাগুলো নড়ে চড়ে বসেন। শুরু হয় তাদের তৎপরতা।
সূত্রটি জানায়, নিয়োগ পরীক্ষা কমিটির কয়েকজন সদস্যের মাধ্যমে এই প্রশ্নপত্র ফাঁস প্রমান মিলেছে। এদের মধ্যে কমিটির সদস্য স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রনালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের উপ-সচিব শাহাদত হোসেন কবির এবং কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসক মনোনীত অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) জাহাঙ্গীর আলমের সংশ্লিষ্ট এবং সকল নিয়ম ভংগের অভিযোগ উঠছে। নিয়মনীতি ভঙ্গ করে মোবাইল ফোন নিয়ে ওই রুমে অবস্থান করাসহ নিয়ম ও শর্ত ভঙ্গ করে একাধিকবার মোবাইলে কথা বলেন।
প্রশ্ন পত্র কম্পোজে পর্যাপ্ত ল্যাপটপ থাকা সত্বেও স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের উপ-সচিব শাহাদত হোসেন কবির এবং কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) জাহাঙ্গীর আলম কোনো অনুমতি ছাড়াই ব্যক্তিগত ল্যাপটপে নিজের অফিসের স্টাফ দিয়ে প্রশ্ন পত্র কম্পোজের কাজ করেন বলে জানা যায়।
এঘটনার পরেও কোনো রকমের পদক্ষেপ না নেয়ায় জেলা প্রশাসনের প্রতি স্থানীয় ছাত্র জনতার ক্ষোভের বহিঃ প্রকাশ ঘটেছে। তারই ধারাবাহিকতায় ছাত্র জনতা এই অনিয়মের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে আজ রোববার পাঁচদিনের মতো বিক্ষোভ ও সমাবেশ করে।



