মাথার খুলি নেই, তারপরও হাঁটতে পারছেন মামুন

চিকিৎসকের সফলতায় অভিভূত সবাই

মামুন মিয়ার মাথার খুলি খুলে ফ্রিজে রেখে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। তার মাথায় ব্যান্ডেজে লেখা ‘হাড় নেই, চাপ দিবেন না। চার দিন লাইফ সাপোর্টে থাকার পর মামুনকে আইসিইউতে নেয়া হয়। সেখানে অবস্থার কিছুটা উন্নতি হওয়ায় তাকে কেবিনে দেয়া হয়েছে।

ওমর ফারুক, চট্টগ্রাম ব‍্যুরো

Location :

Chattogram
হাঁটছেন মামুন
হাঁটছেন মামুন |নয়া দিগন্ত

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও গ্রামবাসীর সংঘর্ষে গুরুতর আহত দুই শিক্ষার্থী সমাজতত্ত্ব বিভাগের অনার্স শেষ বর্ষের ছাত্র মামুন মিয়া এবং অর্থনীতি বিভাগের মাস্টার্সের ছাত্র ইমতিয়াজ আহমেদ সায়েমের চিকিৎসা চলছে চট্টগ্রাম নগরের পার্কভিউ হাসপাতালে। মামুন মিয়ার মাথার খুলি খুলে ফ্রিজে রেখে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। তার মাথায় ব্যান্ডেজে লেখা ‘হাড় নেই, চাপ দিবেন না। চার দিন লাইফ সাপোর্টে থাকার পর মামুনকে আইসিইউতে নেয়া হয়। সেখানে অবস্থার কিছুটা উন্নতি হওয়ায় তাকে কেবিনে দেয়া হয়েছে।

রোগীর আত্মবিশ্বাস বাড়াতে কাল তাকে হাঁটাচলা করানো হয়। সায়েমের জ্ঞানের মাত্রা এখন ১৪, যেটা অপারেশনের পূর্বে ছিল ৪। চিকিৎসকদের সফলতায় অভিভূত আহত ছাত্রের অভিভাবক ও চবির শিক্ষার্থীরা।

আহত শিক্ষার্থীদের মধ্যে দুইজনের জটিল ও ঝুকিপূর্ণ ব্রেইন সার্জারীর নেতৃত্ব দেন চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের নিউরোসার্জারী বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা: মু. ইসমাঈল হোসেন।

বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চাইলে ডা: ইসমাঈল বলেন, ‘আহত ছাত্র মামুনের অবস্থা এখন স্থিতিশীল ও শংকামুক্ত, আর দুয়েকদিন অবজারভেশন শেষে ওকে আমরা ডিসচার্জ দিব এবং সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে দুইমাস পর ওর মাথার খুলি প্রতিস্থাপন করে দিব। ইমতিয়াজ সায়েম এখনো লাইফ সাপোর্টে থাকলেও নিউরোলজিকাল এবং অন্যান্য প্যারামিটারে ওর দিন দিন উন্নতি হচ্ছে।’

ডা: ইসমাঈল বলেন, ‘মামুন মিয়ার অবস্থা বর্তমানে স্থিতিশীল আছে। ওকে আমরা এখন রিহ্যাবিলিটেশন করছি। সবকিছু ঠিক থাকলে দুই মাস পর ওর মাথার খুলি প্রতিস্থাপন করে দেয়া হবে।’

ইমতিয়াজ সায়েমের বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চাইলে ডা: ইসমাঈল বলেন, ‘সায়েমের লাইফ সাপোর্ট গতকাল খুলে দেয়া হয়েছে, ওর জ্ঞানের মাত্রা এখন ১৪, যেটা অপারেশন এর পূর্বে ৪ ছিল। উন্নতির এই ধারাবাহিকতা বজায় থাকলে আগামী কয়েকদিনের মধ্যে ওকেও আমরা কেবিনে স্থানান্তর করতে পারব বলে আশা করি।’

আহত শিক্ষার্থী মামুন মিয়ার বড় ভাই মাসুদ রানা বলেন, ‘মামুন কথা বলতে পারছে। তবে আমরা এখনো শঙ্কামুক্ত নই।’

জানতে চাইলে পার্কভিউ হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ টি এম রেজাউল করিম বলেন, ‘রোগীর আত্মবিশ্বাস বাড়াতে রুটিন ওয়ার্কের অংশ হিসেবে হাঁটাচলা করানো হয়। আশা করি খুব দ্রুত রোগীরা সুস্থ হয়ে উঠবে।’

রাঙ্গামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি আতিয়ার রহমান তার ফেসবুক ওয়ালে লিখেছেন, ‘কিছুক্ষণ আগে পার্কভিউ হাসপাতালে এলাম, আহতদের দেখতে। আলহামদুলিল্লাহ, মামুন হাঁটছে, ছোট ছোট করে কথা বলছে। অপারেশনে অংশ নেয়া নিউরোসার্জন তাকে হাঁটালেন। কিছুটা হলেও স্বস্তি বোধ করলাম।’

ইমতিয়াজ আহমেদ সায়েমের আমির হোসেনের বাবা আমির হোসেন নয়া দিগন্তকে বলেন, ‘ছেলের অবস্থা উন্নতির দিকে। চিকিৎসকরা দিন-রাত কষ্ট করছেন। আল্লাহর সহায় ও চিকিৎসকদের আন্তরিকতায় আমার সন্তান খুব সহসা সুস্থ হয়ে আমাদের কাছে ফিরে আসবে।’

তিনি তার সন্তানের জন্য দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়েছেন।

এদিকে সংঘর্ষের পর থেকে এখনো বিশ্ববিদ্যালয় ও গ্রামে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। বৃহস্পতিবার সীমিত আকারে ক্লাস চললেও রোববার থেকে পুরোদমে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রাণ ফিরে আসে। সংঘর্ষের ঘটনায় গ্রেফতার হওয়া আট গ্রামবাসীর জামিন মেলেনি। গত বৃহস্পতিবার আদালত গ্রেফতার হওয়াদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।