দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান ড. আব্দুল মোমেন বলেছেন, ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির সুনির্দিষ্টি তথ্য পাওয়া গেলে সে বিষয়ে তদন্ত করা হবে।’
এ সময় তিনি আরো বলেন, ‘যেহেতু এখন রাষ্ট্রের টাকা সাশ্রয় করা হচ্ছে। এই ধাবারাহিকতা রক্ষা করতে হবে, যাতে রাজনৈতিক সরকারের সময়েও সেটা জারি থাকে।’
মঙ্গলবার (১২ আগস্ট) রংপুরে পৃথক দুটি অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে এসব কথা বলেন তিনি।
দুপুরে ডিসি অফিসের সম্মেলন কক্ষে বিভাগীয় পর্যায়ের সকল অফিসের কর্মকর্তার সাথে দুর্নীতি প্রতিরোধ ও সুশাসন প্রতিষ্ঠা বিষয়ে মতবিনিময় সভার আয়োজন করে বিভাগীয় প্রশাসন। সেখানে প্রধান অতিথি ছিলেন দুদক চেয়ারম্যান ড. আবদুল মোমেন। এসময় রংপুর বিভাগীয় কমিশনার শহিদুল ইসলাম, রেঞ্জ ডিআইজি আমিনুল ইসলাম, মহানগর পুলিশ কমিশনার মজিদ আলী, ডিসি মোহাম্মদ রবিউল ফয়সালসহ বিভিন্ন বিভাগীয় কর্মকর্তারা তাদের বক্তব্য তুলে ধরেন।
পরে দুদক চেয়ারম্যান ড. মোমেন বলেন, ‘বিগত ১৬ বছরে ঠিকাদার, সরকারি অফিসের বস, সাংবাদিক, বাকি যারা অভিযোগকারী সবারই মুখ বন্ধ করে দেয়ার বন্দবস্ত করা হয়েছিল। সুতরাং কোনো অভিযোগ আসে নাই। এটাও কিন্তু হয়েছে। এটার সাথে আমাদের সরকারের উচ্চ লেভেলের লোক জড়িত হয়ে পড়েন।’
ড. মোমেন বলেন, ‘যেহেতু এখন রাষ্ট্রের টাকা সাশ্রয় করা যাচ্ছে। আমাদেরকে রাষ্ট্রের টাকা সাশ্রয় করার জন্য সবাইকে সহযোগিতা করতে হবে। এই ধাবারাহিকতা রক্ষা করতে হবে যাতে রাজনৈতিক সরকারের সময়েও সেটা জারি থাকে। কেউ কেউ আশঙ্কা করে যে রাজনৈতিক সরকার আসলে আবার জানি কি হয়। আমরা অভ্যাস করে ফেলছি আমরা যদি ভালো কাজ করতে পারি। তাহলে রাজনৈকি সরকারের সময়েও এই ধারা রক্ষা করতে পারবো। জোর গলায় বলতে পারবো— আমরা খারাপ কাজ করবো না।’
এসময় দুদক চেয়ারম্যান বলেন, এর আগে সমন্বিত জেলা ও বিভাগীয় দুদক কার্যালয় ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধন করেন দুদক চেয়ারম্যান। পরে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেন তিনি।
এসময় দুদক চেয়ারম্যান বলেন, ‘এটা রাজনৈতিক সরকার নয়। অন্তর্বর্তীকালীন একটা সরকারের নেতৃত্বে প্রফেসর মোহাম্মদ ইউনূস আছেন। তিনি একেবারে দুর্নীতির বিপক্ষের একটা মানুষ। এটা যদি তার নিজের সভার বা উপদেষ্টা পরিষদের কেউ হন সেক্ষেত্রেও তিনি বিন্দুমাত্র ছাড় দিতে রাজি নন। আর আমাদের যে আইন এখানে ছাড় দেয়ার কোনো সুযোগ নেই।’
দুদক চেয়ারম্যান বলেন, ‘একটা বিষয় আমাদেরকে নিশ্চিত করতে হবে আমরা যে অভিযোগ করব সেটি যেন সুনির্দিষ্ট হয়। আমরা যদি শুধু বলি তিনি কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন। এই অংশগুলো যদি আমরা প্রমাণ করতে না পারি শেষ পর্যন্ত সেই অভিযোগ কিন্তু টিকবে না। এমনকি উপদেষ্টাদের বিরুদ্ধেও যদি অভিযোগ থাকে, সেটা যদি সুনির্দিষ্ট হয় আপনারা নিজেরাই নিয়ে আসুন না কেন। সাংবাদিকরা এই সমাজের দর্পন। আপনারা থ্রো করবেন, আমরা আগাবো। আপনারা লক্ষ্য রাখবেন আমরা যেন আমাদের কাজটাও ঠিকমতো করি। ঠিকভাবে না করতে পারলে এটারও সমালোচনা করবেন।’
ড. মোমেন বলেন, ‘আমাদের বেশ কিছু পুরাতন ও নতুন মামলা এসেছে। পুরনো অনেক মামলা বিভিন্ন কারণে ধামাচাপার অবস্থায় ছিল। আপনারা জানেন, এ কারণে আমি ব্যাখ্যা করতে চাই না। আমরা এ কারণে ওই মামলাগুলো পুনর্জীবিত করতে যাচ্ছি। নতুন যে মামলাগুলো আছে সেগুলো দেখছি। আমরা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন জায়গায় রেড করে থাকি। সেবা প্রদানকারী যেসব প্রতিষ্ঠান সেখানে সেবাদানকারী কিছু প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকে সেবা গ্রহিতাদের যাতে এই অভিযোগগুলো না হয়। আমরা কাউকে শাস্তি দেয়ার জন্য উদ্দেশ্যে এটা করা নয়। যাতে সেবাদাতা ও সেবা গ্রহিতাদের মধ্যে একটা ভালো সম্পর্ক তৈরি হয়। এটার জন্য আমাদের কাজ করা।’
ড. মোমেন বলেন, ‘সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আমাদের এখানে মামলা চলমান রয়েছে। আরো কয়েকটা বিষয় তদন্তাধীন। তদন্ত করে প্রমাণিত হলে আমরা মামলায় চলে যাব।’
ড. মোমেন বলেন, ‘মামলাটা ঝুলে থাকে আদালতে। দুর্নীতি দমন কমিশনে তো না। আদালতের সীমাবদ্ধতা আছে। আমরা নিশ্চয়ই চাইব ঝুলে থাকা মামলাগুলো যেন দ্রুত শেষ হয়। আমরা চেষ্টা করব। যেহেতু দুদকের কাজ হলো মামলা প্রস্তুত করে দেয়া। আমরা আদালতকে অনুরোধ করব যাতে মামলাগুলো নিষ্পত্তি করে দেয়।’