চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজের অপেক্ষার সময় পূর্বের তুলনায় কমছে। চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসে ৯ দিন, অক্টোবর মাসে ১৮ দিন এবং নভেম্বর মাসে ১৯ দিন জাহাজের ওয়েটিং টাইম (অপেক্ষমান সময়) শূন্যের কোটায় ছিল এবং বর্তমানে বন্দরে আগত জাহাজ অন অ্যারাইভাল বার্থ পাচ্ছে বলে বন্দর সূত্র জানিয়েছে।
এতে আমদানি-রফতাকারীকগণ দ্রুত সময়ের মধ্যে আমদানি করা মালামাল ডেলিভারি নিতে পারছে এবং রফতানিমুখী মালামাল যথাসময়ে জাহাজীকরণ করতে পারছে। ফলে পোর্ট লিড টাইম কমেছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে ভোক্তা পর্যায়ে পণ্যের দাম উল্লেখযোগ্য হারে কমে আসবে এবং সামগ্রিক রফতানিতে গতিশীলতা আরো বৃদ্ধি পাবে বলে বন্দর কর্তৃপক্ষের দাবি।
চট্টগ্রাম বন্দর সূত্র জানিয়েছে, বাংলাদেশের প্রধান সমুদ্র বন্দর চট্টগ্রাম বন্দরের মাধ্যমে দেশের মোট সাধারণ পণ্য আমদানি-রফতানির প্রায় ৯২ শতাংশ এবং কন্টেইনার পরিবাহী পণ্যের আমদানি-রফতানির প্রায় ৯৮ শতাংশ হ্যান্ডলিং হয়। চট্টগ্রাম বন্দরে ২০২৫ পঞ্জিকাবর্ষের প্রথম ১০ মাসে (জানুয়ারি-অক্টোবর) ২৮ লাখ ৪৯ হাজার ৫৪২ টিইইউএস কন্টেইনার, ১১ কোটি ৫০ লাখ ৬৭ হাজার ২০০ মেট্রিক টন কার্গো এবং ৩ হাজার ৫৫২ টি জাহাজ হ্যান্ডলিং হয়েছে।
কন্টেইনার হ্যান্ডলিংয়ে ৪.৮৭ শতাংশ, কার্গো হ্যান্ডলিংয়ে ১২.৬৪ শতাংশ এবং জাহাজ হ্যান্ডলিংয়ে ১০.৯৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে। এই সময়ে বিগত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১ লাখ ৩২ হাজার ৩২৮ টিইইউএস কন্টেইনার, ১ কোটি ২৯ লাখ ৮ হাজার ১৭৪ মেট্রিক টন কার্গো এবং ৩৫১ টি জাহাজ বেশি হ্যান্ডলিং হয়েছে।
একইভাবে ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরের প্রথম ৪ মাসে (জুলাই-অক্টোবর) ১২ লাখ ১৩ হাজার ৮০৫ টিইইউএস কন্টেইনার, ৪ কোটি ৫২ লাখ ৮২ হাজার ৯০৭ মেট্রিক টন কার্গো এবং ১৪২২টি জাহাজ হ্যান্ডলিং হয়েছে। কন্টেইনার হ্যান্ডলিংয়ে ১০.১৫ শতাংশ, কার্গো হ্যান্ডলিংয়ে ১৫.৭৬ শতাংশ এবং জাহাজ হ্যান্ডলিংয়ে ১১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে। এই সময়ে বিগত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ১,১১,৮৮৮ টিইইউএস কন্টেইনার, ৬১,৬৬,৪০৫ মেট্রিক টন কার্গো এবং ১৪১টি জাহাজ বেশি হ্যান্ডলিং হয়েছে।
এদিকে চিটাগাং ড্রাইডক লিমিটেড কর্তৃক পরিচালিত নিউমুরিং কন্টেইনার টার্মিনালে (এনসিটি) ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরের প্রথম ৪ মাসে (জুলাই-অক্টোবর) ৪ লাখ ৬৮ হাজার ৮৭১ টিইইউএস কন্টেইনার এবং ২৫৩টি জাহাজ হ্যান্ডলিং হয়েছে। কন্টেইনার হ্যান্ডলিংয়ে ১৫.৫০ শতাংশ এবং জাহাজ হ্যান্ডলিংয়ে ১৯.৩৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে। এই সময়ে বিগত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৬২ হাজার ৯১৯ টিইইউএস কন্টেইনার এবং ৪১টি জাহাজ বেশি হ্যান্ডলিং হয়েছে।
বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব ওমর ফারুক জানিয়েছেন, মূলত অত্যাধুনিক কার্গো ও কন্টেইনার হ্যান্ডলিং ইকুইপমেন্ট সংযোজন, ইয়ার্ড ক্যাপাসিটির সম্প্রসারণ, তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার এবং সর্বোপরি চট্টগ্রাম বন্দরের কর্মকর্তা-কর্মচারী, শ্রমিকদের নিরলস পরিশ্রম ও বিভিন্ন পর্যায়ের বন্দর ব্যবহারকারীগণের অব্যাহত সহযোগিতার কারণে বন্দরের হ্যান্ডলিং কার্যক্রমে ক্রমবর্ধমান প্রবৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে।
উল্লেখ্য, সম্প্রতি মায়ের্স্ক শিপিং লাইনের একটি প্রতিনিধিদলের সদস্যরা সিঙ্গাপুর থেকে সশরীরে চট্টগ্রাম বন্দর পরিদর্শনে আসেন। বন্দর ব্যবস্থাপনায় ইতিবাচক পদক্ষেপের কথা বিশেষত জাহাজের অপেক্ষার সময় কমানো এবং এনসিটিসহ বিভিন্ন টার্মিনালের অপারেশনাল পারফরমেন্সের ধারাবাহিক অগ্রগতিতে সন্তোষ প্রকাশ করেন বলে সূত্র জানিয়েছে।



