এম এম হারুন আল রশীদ হীরা, মান্দা (নওগাঁ)
গত ৫ আগস্টের পর থেকে কলেজে অনুপস্থিত থেকেও ইএফটি এর মাধ্যমে নিয়মিত বেতন-ভাতা উত্তোলন করছেন মান্দার চকউলী বহুমূখী উচ্চ বিদ্যালয় অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম। এতে প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও কর্মচারীদের মাঝে দেখা দিয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া।
অভিযোগে জানা যায়, অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম অবৈধ প্রক্রিয়ায় ২০০২ খ্রিষ্টাব্দের ১ আগস্ট চকউলী বহুমূখী উচ্চ বিদ্যালয় অ্যান্ড কলেজে অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব নেন। এরপর সব কিছুতে তিনি দলীয় প্রভাব খাঁটিয়ে নিজের ইচ্ছামতো প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনা, ক্ষমতার অপব্যাবহার দেখিয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থী, অভিভাবক এবং এলাকাবাসীর সাথে খারাপ আচরণ, এমনকি নিয়ম বহির্ভূতভাবে প্রায় অর্ধকোটি টাকার অবৈধ নিয়োগ বাণিজ্যের বিস্তর অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। অথচ প্রভাবশালী হওয়ায় তার বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুলতে সাহস পান না। এসব বিষয় নিয়ে কেউ প্রতিবাদ করলে তাকে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করে থাকেন। গত ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণবিপ্লব ও অভ্যুত্থানের পর এসব অভিযোগের প্রেক্ষিতে তার পদত্যাগের দাবিতে একাধিকবার মানববন্ধন ও ঝাড়ু মিছিলসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষক, কর্মচারী, শিক্ষার্থী এবং এলাকাবাসীরা। সে সময় থেকে অদ্যবধি সড়ক দুর্ঘটনায় অসুস্থতা ও বিভিন্ন অযুহাত দেখিয়ে তিনি কলেজে অনুপস্থিত রয়েছেন। তবুও ইএফটি এর মাধ্যমে নিয়মিত বেতন উত্তোলন করছেন।
এর আগে তাকে একাধিকবার কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়ার পরেও তিনি কোনো সন্তোষজনক উত্তর দিতে পারেননি। বরং নিজের আত্মরক্ষার্থে বিষয়টিকে ভিন্নখাতে প্রবাহের চেষ্টা করেন।
বর্তমানে ওই প্রতিষ্ঠানটিতে শিক্ষক-কর্মচারীর সংখ্যা ২৮ জন এবং শিক্ষার্থী রয়েছে প্রায় চার শ’ জন। ঐতিহ্যবাহী সুনামধন্য প্রতিষ্ঠানটির ঐতিহ্য ধরে রাখতে সকলকে আন্তরিক হওয়া প্রয়োজন বলে মনে করছেন স্থানীয় এলাকাবাসী ও সচেতন মহল।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে শিক্ষক ও কর্মচারীরা বলেন, ‘প্রতিষ্ঠান প্রধান নিয়মিত কলেজে না এসেও ইএফটি এর মাধ্যমে নিয়মিত বেতন উত্তোলন করছেন। এতে করে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।’
জানতে চাইলে অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম বলেন, ‘আমি পরিস্থিতির শিকার। গত ৫ আগস্ট ছাত্র অভ্যুত্থানের পর এলাকার একটি কুচক্রী মহল অসৎ উদ্দেশে আমাকে পদত্যাগের জন্য বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেন। পরে আমি তাদের অনৈতিক দাবি মেনে না নিয়ে দ্বিমত পোষণ করায় তারা আমাকে প্রতিষ্ঠানে যেতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেন। যা এখনো অব্যাহত রয়েছে।’
এতদিন অনুপস্থিত থাকা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘সড়ক দূর্ঘটনায় আহত হয়ে বেশকিছু দিন যাবৎ ছুটিতে আছি। বর্তমানে আমি রাজশাহীর বাসায় অবস্থান করছি।’
তার দাবি, সম্প্রতি শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক জারিকৃত পরিপত্র অনুযায়ী ইএফটি’র মাধ্যমে নিয়মিতভাবে বেতন-ভাতা উত্তোলন করছেন তিনি।
এ বিষয়ে মান্দা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের অ্যাকাডেমিক সুপারভাইজার আবদুল লতিফ বলেন, ‘সম্প্রতি শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক জারিকৃত পরিপত্র অনুযায়ী কাউকে জোর করে পদত্যাগ করানো যাবে না। তবে, ৫ আগস্টের পর এত দীর্ঘ সময় ছুটিতে থাকার বিষয়ে তিনি কোনো সুনির্দিষ্ট ব্যাখ্যা দিতে পারেননি। কর্মস্থলে অনুপস্থিত থেকেও ইএফটি’র মাধ্যমে নিয়মিত ভাবে বেতন-ভাতা উত্তোলনের বিষয়ে আমাদের কিছু করণীয় নেই।’
সম্প্রতি ওই প্রতিষ্ঠানেরই নির্দিষ্ট কয়েকজন শিক্ষার্থী তাকে স্বপদে পুনর্বহালের দাবিতে একটি আবেদনপত্র দিয়েছেন বলেও জানান তিনি।